এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে এক দিনে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে গতকাল রোববার। একই সময় আক্রান্ত হয়েছেন ১০৪২ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১২ এবং শনাক্ত রোগী বেড়ে ১৯ হাজার ৯০৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অক্টোবরজুড়ে ডেঙ্গুর বিস্ফোরণ ঘটার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই এডিসের জীবাণু ধ্বংসে যা যা করণীয় তার সব কিছু নিজ নিজ জায়গা থেকে করার আহ্বান তাদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, মৃত ৯ জনের মধ্যে ৭ জনই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের। বাকি দুজনের একজন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও অন্যজন চট্টগ্রাম বিভাগের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৯৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০৪ জন, ঢাকা বিভাগে ২০১ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৯৮ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১২১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪১ জন, রংপুর বিভাগে ২৩ জন, সিলেট বিভাগে ৯ জন ও রাজশাহী বিভাগে ৮২ জন রয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৯৮ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছেন ৪৭ হাজার ২৫৬ জন।
ক্যালেন্ডারের পাতায় বর্ষাকাল শেষ হলেও এখনো থামেনি বৃষ্টি। ভাদ্র মাসের তালপাকা গরমের পর আশি^ন মাসও শেষের পথে। কিন্তু বৃষ্টি বা গরম কোনোটাই কমতির দিকে নেই। সেই সঙ্গে নেই ডেঙ্গুর প্রজনন কমার লক্ষণও। অন্যান্য বছর এই সময়টায় আবহাওয়া কিছুটা নাতিশীতোষ্ণ থাকলেও চলতি বছর তীব্র গরমে ভুগছে নগরবাসী। মাঝে মাঝে স্বস্তির বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু এই বৃষ্টিই আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গুর বংশবিস্তারে। ডেঙ্গুর প্রজনন বাড়তে সাহায্য করছে। বৃষ্টির জমানো পানিতে এডিসের লার্ভা পূর্ণরূপ লাভ করে বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু মশা। সরকার পতনের পর দুই সিটি করপোরেশনেই নেই কোনো জনপ্রতিনিধি। ফলে মশা নিধনসহ সব ধরনের কার্যক্রমে কিছুটা স্থবিরতা নেমে আসে গত বছরের শেষ দিক থেকেই। সেপ্টেম্বরজুড়ে ডেঙ্গুর তা-ব চলেছে দেশজুড়ে। মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে অক্টোবরে পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এখন যে পরিস্থিতি আমরা দেখছি, তাতে ডেঙ্গুকে সারা বছরের স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করাই সমীচীন। এই রোগ সংক্রমণ ও বিস্তারের প্রকৃতি লক্ষ্য করলে এটা এড়ানোর কিছু উপায় আমরা সহজেই অবলম্বন করতে পারি।
সেটা হলো বাসাবাড়ির ভেতরে ও আশপাশে পানি জমতে না দেওয়া, যাতে এডিস মশার বংশবিস্তার ঠেকানো যায়। দ্বিতীয়ত, মশার কামড় এড়ানোর জন্য সতর্ক থাকা, বাসা মশামুক্ত রাখার চেষ্টা করা, ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা। বিশেষভাবে সতর্ক থাকা প্রয়োজন শিশুদের ব্যাপারে। তাদের খালি গায়ে না রাখা, কেননা এডিস মশা সাধারণত শরীরের উন্মুক্ত অংশে বসে। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সতর্কতার পাশাপাশি সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগও বিশেষভাবে প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে, ২০২৪ সালে দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছিল ৫৭৫ জনের। এর আগের বছর ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে মারা যান সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭০৫ জন এবং আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন