সোমবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


প্রবাস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৫, ০১:১৮ এএম

পর্তুগালে অভিবাসনের নিয়মাবলী ও চ্যালেঞ্জ

প্রবাস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৫, ০১:১৮ এএম

পর্তুগালে অভিবাসনের নিয়মাবলী ও চ্যালেঞ্জ

পর্তুগালে অভিবাসন নীতিতে সাম্প্রতিক সময়ে যে পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে, তা দেশটির অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে 
নতুন মাত্রা দিয়েছে। যদিও এই পরিবর্তনগুলো দেশের শ্রমবাজার ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় বলে সরকারের 
পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তবুও এই নিয়মগুলো অভিবাসীদের জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জ ও অনিশ্চয়তা নিয়ে এসেছে। 
নতুন নিয়মের মূল বিষয়াবলি জানা যাবে মিনহাজুর রহমান নয়নের এই লেখায়

সেনজেন ভিসায় প্রবেশে কঠোরতা
আগে অনেক অভিবাসী ভ্রমণ বা সেনজেন ভিসার মাধ্যমে পর্তুগালে প্রবেশ করে বৈধ বসবাসের সুযোগ পেতেন। কিন্তু নতুন নীতিতে এই প্রবেশের সুযোগ সীমিত করা হয়েছে। ফলে যারা ভ্রমণ বা সেনজেন ভিসার মাধ্যমে পর্তুগালে আসার পর দীর্ঘমেয়াদি বসবাসের চেষ্টা করতেন, তাদের জন্য এই পথ বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন নীতির এই পরিবর্তনকে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের একটি বড় পরিবর্তন হিসেবে ধরা হচ্ছে।

অবৈধ অবস্থানের নিয়মিত হওয়ার পথ বন্ধ
আগে অবৈধ অবস্থানে থাকা অনেক অভিবাসীর জন্য নির্দিষ্ট সময় পর বৈধতার সুযোগ ছিল। কিন্তু নতুন নিয়মে এই পথ কঠোরভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে অভিবাসীরা এখন বৈধ হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। এটি তাদের সামাজিক ও আর্থিক জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

পরিবার পুনর্মিলন ও নাগরিকত্বে সময়সীমা বৃদ্ধি
পরিবার পুনর্মিলনের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বৈধ বসবাসের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে, যা আগের তুলনায় অনেক বেশি জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া তৈরি করেছে। নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্যও বাধা বেড়েছে; আবেদনকারীদের জন্য কঠোর ভাষা ও সাংস্কৃতিক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, আর বসবাসের ন্যূনতম সময়সীমা বাড়িয়ে ৫-১০ বছর করা হয়েছে। এছাড়া পারিবারিক পুনর্মিলন ভিসার ক্ষেত্রে আরও কিছু কঠোরতা দেওয়া হয়েছে। পর্তুগালে নিয়মিত হওয়ার পর বা রেসিডেন্ট কার্ড পাওয়ার পর পরিবার আনার ক্ষেত্রে পর্তুগালে আসার আগে বৈবাহিক সম্পর্ক না থাকলে পরিবার আনার ক্ষেত্রে দুই বছর এবং বৈবাহিক সম্পর্ক থাকলে এক বছর, তবে অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান বা ডিপেন্ডেন্ট থাকলে সেক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গেই আবেদন করতে পারবে। এক্ষেত্রে অনুমোদন পেতে হলে আবেদনকারীকে নিজের নামে আবাসনসহ এবং যথাযথ আয় থাকতে হবে। তবে গোল্ডেন ভিসা বা 
উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন অভিবাসীদের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়।

কর্মসংস্থান ভিসায় সীমিততা
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, শুধু উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন পেশাজীবী ও উদ্যোক্তাদের জন্যই কর্মসংস্থান ভিসা পাওয়া সহজ হবে। এ অভিবাসন আইনে জনপ্রিয় ‘জব সার্চ ভিসা’ বাদ দেওয়া হয়েছে, তবে একে উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন ভিসা হিসেবে পরিবর্তিত করা হয়েছে। অর্থাৎ যাদের উচ্চ যোগ্যতা রয়েছে, তারাই এ ভিসায় আবেদন করতে পারবেন। উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন বিষয় কি হবে এটি সরকার নির্ধারণ করবেন। এটি অভিবাসীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে, বিশেষ করে সাধারণ দক্ষতাসম্পন্ন বা নি¤œমধ্যম দক্ষতার কর্মীদের জন্য।

নতুন নিয়মের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
অভিবাসীদের উদ্বেগ ও হতাশা
নতুন নিয়মের কারণে অভিবাসীরা বৈধভাবে বসবাস ও কাজ করার সুযোগ হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন। পরিবারের পুনর্মিলন ও নাগরিকত্বের প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় অনেকের জীবনে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তারা ভাবছেন, দীর্ঘ সময় ধরে সংগ্রহ করা স্বপ্ন এবং স্থিতিশীল জীবন এখন অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে। পর্তুগালে বর্তমানে প্রায় ১০ লাখের বেশি বিদেশি নাগরিক বসবাস করছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকা থেকে এসেছেন। নতুন আইনটি কার্যকর হলে এসব অভিবাসীর জীবনযাত্রায় বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক ও সামাজিক সমালোচনা
বামপন্থি ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এই নতুন নিয়মকে অভিবাসীদের অধিকার লঙ্ঘন এবং মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থি বলে কটাক্ষ করেছে। তবে, পর্তুগাল সরকার বলছে, এই আইন দেশের শ্রমবাজারের ভারসাম্য রক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। পর্তুগালের অভিবাসী সংগঠন সলিডারিয়েডাড ইমিগ্রান্টের সভাপতি টিমোটিও মাসেডো এই আইনের সমালোচনা করে বলেন, বিদেশীদের উপর নতুন আইন দেশের উন্নয়নের ক্ষতি করে এবং দরিদ্রদের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে। এ আইন একটি শ্রেণী বিভাজন তৈরি করেছে, যার অর্থ ধনী অভিবাসীরা সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। এসব অভিবাসীরা যারা সমাজের কল্যাণের জন্য কাজ করে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করে তারা সুবিধাবঞ্চিত।

আইনগত প্রক্রিয়া ও প্রশাসনিক জটিলতা
নাগরিকত্ব ও বৈধ বসবাসের আবেদন প্রক্রিয়া এখন আরও কঠোর হয়েছে। নতুন ডকুমেন্টেশন ও পটভূমি যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যাওয়ায় আবেদনকারীরা আইনগত জটিলতার শিকার হচ্ছেন। 
অভিবাসন বিষয়ক প্রশাসন ও আদালতের কাজের চাপও বেড়েছে।

ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি
পর্তুগাল সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিবাসন নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই কঠোর নিয়মগুলো প্রণয়ন করেছে। যদিও এটি দেশের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, তবে এর ফলে অনেক অভিবাসীর জীবনে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। তাদের স্বপ্ন, জীবনযাত্রা ও পারিবারিক পরিকল্পনায় বাধার আশঙ্কা প্রবল।
এই পরিবর্তনগুলোর ফলে পর্তুগালের অভিবাসী সম্প্রদায়কে মানিয়ে নিতে হবে নতুন বাস্তবতার সঙ্গে। পাশাপাশি সরকারকেও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে নিয়মগুলো প্রয়োগ করতে 
হবে যাতে অধিকাংশ অভিবাসীর অধিকার 
ক্ষুণœ না হয়।
অভিবাসন নিয়মের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য অভিবাসন বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী এবং সরকারি ওয়েবসাইট থেকে পরামর্শ গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!