- ৮ তলা কারখানা পুড়ে ছাই
- ফায়ার সার্ভিসের ১৭টিসহ মোট ২৩টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে
- ভবন নির্মাণেও মানা হয়নি বিল্ডিং কোডের নিয়ম
চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) এলাকার একটি কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ১৭ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এ ঘটনায় আটতলা ভবনটি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ এই রপ্তানিমুখী এলাকায় থাকা ভবনটির অগ্নিনিরাপত্তা সনদও ছিল না।
গত বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে সিইপিজেডের ১ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর সড়কের ভবনটিতে আগুন লাগে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ নিয়ন্ত্রণকক্ষ। গতকাল দুপুর পর্যন্ত আগুন নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিটসহ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বিজিবির মোট ২৩টি ইউনিট কাজ করে।
ভবনটির সাততলায় অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড এবং জিহং মেডিকেল কোম্পানি নামে দুটি প্রতিষ্ঠান ছিল। সেখানে টাওয়েল, ক্যাপ, সার্জিক্যাল গাউন ও চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরি করা হতো। ফায়ার সার্ভিস জানায়, অগ্নিকা-ের সূত্রপাত ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের গুদাম থেকে। ভবনের অষ্টম তলা খালি ছিল, যেখানে টিনের সিলিং দেওয়া ছিল।
দুপুরের খাবারের বিরতির সময় আগুন লাগায় শ্রমিকদের অধিকাংশই সময়মতো ভবন থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে গতকাল শুক্রবার সকালে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, ভবনটির অগ্নিনিরাপত্তা কার্যকারিতা সনদ ছিল না। প্রতিষ্ঠানটি আবেদন করলেও প্রয়োজনীয় পরবর্তী ধাপের কাজ সম্পন্ন করা হয়নি। পাশাপাশি ভবন নির্মাণেও বিল্ডিং কোডের নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘নীতিমালা না মেনে ভবনের চারটি ফ্লোরে দাহ্য পণ্য গুদামজাত করা হয়েছিল। এসব পণ্য পুড়ে রাসায়নিক পদার্থে পরিণত হয়, যা আগুনকে ভয়াবহ রূপ দেয়।’
তিনি বলেন, ‘ভবনটি দুই দিক খোলা থাকলেও বাকি দুই দিক নিরাপত্তা মানদ- অনুসারে তৈরি হয়নি। পাশের ভবন ছিল খুবই কাছাকাছি, ফলে ফায়ার ফাইটারদের অবস্থান নিতে অসুবিধা হয়েছে।’
অগ্নিকা-ের কারণ অনুসন্ধানে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের এই পরিচালক ইপিজেড কর্তৃপক্ষ, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীসহ আগুন নিয়ন্ত্রণে অংশ নেওয়া সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
ভেতরে থাকা দাহ্য কাঁচামালের কথা স্বীকার করেন জিহং মেডিকেল প্রোডাক্টস (বিডি) কোম্পানি লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী বোরহান উদ্দিন তামিম। তিনি বলেন, ‘ভেতরে রপ্তানির জন্য ১০ কনটেইনার তৈরি সার্জিক্যাল গাউন ছিল। এ ছাড়া গাউন তৈরির কাঁচামাল (ফেব্রিকস) ছিল ২০ কনটেইনার। এগুলো কিছুটা দাহ্য। তাই আগুন ছড়িয়ে গেছে।’
সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুস সোবহান বলেন, আমরা ফায়ার সার্ভিস, সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। আগুন লাগার পর এলাকাটি কর্ডন করা এবং শ্রমিকদের নিরাপদে নিয়ে আসা আমাদের প্রথম কাজ। ইনজুরি ও ক্যাজুয়ালিটি ছাড়া শ্রমিকদের বের করে আনা সম্ভব হয়েছে। আমাদের সব প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদন শুরুর আগে ফায়ার কমপ্লায়েন্স সনদ নিতে হয়। এ ভবনও কমপ্লায়েন্সের আওতায় ছিল। কিছুদিন আগে শ্রমিকদের ফায়ার ড্রিল (মহড়া) করানো হয়। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ফায়ার কনসালট্যান্টের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ৭ দিনের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন দেবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন