রবিবার, ০৯ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২৫, ১১:১২ পিএম

আদালতে অভিযোগপত্র জমা

সোহরাওয়ার্দীতে গাঁজা বেচতে নিষেধ করায় সাম্যকে হত্যা

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২৫, ১১:১২ পিএম

সোহরাওয়ার্দীতে গাঁজা বেচতে  নিষেধ করায় সাম্যকে হত্যা

মাস ছয়েক আগে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল নেতা এস এম শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় মাদক কারবারিদের দায় পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি অভিযোগপত্রে বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাম্য ও তার বন্ধুরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজা বেচতে নিষেধ করায় মাদক কারবারিদের আক্রমণের শিকার হন।

তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আখতার মোর্শেদ বলেন, ‘অভিযোগপত্রে সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজা বিক্রি করতে নিষেধ করায় সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে।’

গত ১৩ মে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসার সময় ছুরিকাঘাতে আহত হন সাম্য। রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় বন্ধুরা সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়তেন। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী এ এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। একই হলে ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদকও ছিলেন তিনি। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে।

এ ঘটনায় ১৪ মে সকালে নিহতের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। সেদিন তিনজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দেয় পুলিশ। মামলাটি তদন্ত করে গত বৃহস্পতিবার সাত মাদককারবারিকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা ডিবি পুলিশ।

অভিযোগপত্রভুক্তরা হলেনÑ মেহেদী হাসান, মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি, মো. রিপন ওরফে আকাশ, নাহিদ হাসান পাপেল, মো. হৃদয় ইসলাম, মো. হারুন অর রশিদ সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ ও মো. রবিন। তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক, পলাশ সরদার ও সুজন সরকার নামের চারজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসামি মেহেদী হাসান, রিপন, কবুতর রাব্বি, পাপেল, হৃদয়, রবিন, সোহাগরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘চিহ্নিত’ মাদক বিক্রেতা। দল নেতা মেহেদী হাসানের কাছ থেকে অন্যরা গাঁজা নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মন্দির গেইট এলাকায় খুচরা বিক্রি করে আসছিল। গাঁজা বেচা শেষে সবাই মেহেদীর কাছে টাকা জমা দিতেন। ঘটনার দিনের আগে আসামি রিপন ও রাব্বি গাঁজা বেচার টাকা মেহেদীকে ঠিকমতো না দিয়ে বলেন, ‘তাদের টাকা মাস্তানরা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। মেহেদী হাসান তার লোকজনদের বলে দেন, এমন পরিস্থিতি হলে সবাইকে একসঙ্গে প্রতিহত করতে হবে; তিনি কয়েকজনকে সুইচ গিয়ার (চাকু) ও ইলেকট্রিক ট্রেজারগান কিনে দেন। আর গাজা বেচতে মেহেদী, কবুতর রাব্বি, রিপনদের নিষেধ করেছিলেন সাম্য ও তার বন্ধুরা। এ কারণেই তাদের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়।’

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, ঘটনার রাতে কবুতর রাব্বি মুক্তমঞ্চের কাছে গাঁজা বেচছিল। তার হাতে একটি ইলেকট্রিক ট্রেজারগান ছিল। অন্যদিনের মতোই কবুতর রাব্বির সঙ্গে পাপেল ও রিপন সঙ্গে ছিল। একপর্যায়ে সাম্য দুই বন্ধুকে নিয়ে মোটরসাইকেলে মুক্তমঞ্চের দিকে আসেন।

সেখানে কবুতর রাব্বিকে ইলেকট্রিক ট্রেজারগান হাতে দেখতে পেয়ে তাকে থামতে বলেন সাম্য। রাব্বি দৌড় দিলে সাম্য মোটরসাইকেলে করে ধাওয়া দিয়ে ৩০-৩৫ গজ দূরে গোলপুকুরের (পুরাতন ফোয়ারা) কাছে রাব্বিকে ধরে ফেলে। এ সময় ছাত্রদল নেতা ইলেকট্রিক ট্রেজারগানটি নেওয়ার চেষ্টা করে। তখন রাব্বি ট্রেজারগানটি না দিলে তাকে চড়-থাপ্পড় মারে সাম্য।

ডিবি কর্মকর্তা আখতার মোর্শেদ অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, তখন রাব্বির চিৎকারে পাপেল, মন্দির সংলগ্ন ক্যান্টিন থেকে রিপন, মেহেদী, সোহাগ, হৃদয় ও রবিনরা ঘটনাস্থলে এগিয়ে এসে সাম্য ও তার বন্ধুদের সঙ্গে তর্কাতর্কি ও হাতাহাতিতে জড়ান। তাদের ধস্তাধস্তিতে পুকুর পাড়ের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীর মোটরসাইকেল পড়ে গিয়ে লুকিং গ্লাস ভেঙে যায়। তখন মোটরসাইকেলের মালিক পলাশ অন্য কোথাও গিয়ে তাদের মারামারি করতে বলেন।

এ কথা শোনার পর পলাশকে চোখে-মুখে ঘুষি মেরে অজ্ঞান করে ফেলেন আসামিরা। তা দেখে সম্রাট মল্লিক নামে অপর একজন এগিয়ে গেলে মেহেদীর কাছে থাকা সুইচগিয়ার চাকু দিয়ে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। তাতে তিনি মাটিতে পড়ে যান। এ সময় পলাশ, সম্রাটের সঙ্গী তামিমও মারধরে আহত হন। একই সময়ে সাম্যর সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়ানো পাপেলকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য মেহেদী ঘুষি মারেন সাম্যকে; রাব্বির কাছে থাকা সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে সাম্যর ডান পায়ের রানে চাকুও মারা। তখন চিৎকার-চেঁচামেচিতে মন্দিরের ভেতরে থাকা লোকজন এগিয়ে এলে আসামিরা দক্ষিণ দিকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর কালিমন্দিরের গেট দিয়ে বাসায় ফেরার পথে আহতদের পড়ে থাকতে দেখেন সুজন সরকার নামের এক ব্যক্তি। সংবাদমাধ্যমে সাম্যর মৃত্যুর খবর পেয়ে ফেসবুক লাইভে এসে তিনি বলেন, ‘সাম্যর বন্ধুরা যদি দ্রুত হাসপাতালে পাঠাত, তাহলে রক্তক্ষরণে সাম্য মারা যেত না।’

মামলার বাদী শরীফুল আলম বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা, সুষ্ঠু বিচার; আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে কেউ যেন পার পেয়ে না যায়। ছাড়া পেয়ে গেলে সমাজের ক্ষতি করবে। সমাজ ও আমাদের পরিবারের স্বার্থে মামলার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভাই তো অল্প বয়সে আততায়ীর হাতে খুন হলো। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ছিল তার। আমাদের পরিবার আগে কখনো এ ধরনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেনি; জয়েন্ট ফ্যামিলি আমাদের। চার ভাইয়ের মধ্যে সাম্য ছোট। আমাদের আম্মা ২০১৬ সালে মারা যান। বাবা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জব ছেড়ে ২০০৯ সালে বিদেশে যান। আম্মা মারা যাওয়ার পর দেশে ফিরে আসেন। ওর প্রতি সবার একটু বেশি কেয়ার। ঢাকায় উদ্ভাস কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিত। আমার এক ভাই এবং ওর স্ত্রী দুইজনই ডাক্তার, বিসিএস থেকে; ওরা পিজি হাসপাতালে আছে। সাম্য ওদের সাথেই থাকত। ও হলে থাকত না। উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে যাওয়ার প্ল্যান ছিল। কিন্তু তা তো আর হলো না। ভাইটা খুন হলো। ভাইকে তো আর ফিরে পাব না। আমরা ভাই হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই, বিচারটা যেন হয়। এটাই আমাদের সবার প্রত্যাশা।’

সাম্য হতাকা-ের পরপরই রাজধানীর রাজাবাজারসহ কয়েকটি এলাকা থেকে তামিম, পলাশ ও সম্রাটকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পরে তাদের দুই দফা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর মধ্যে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণদী এলাকায় তামিমের বাড়ির দুটি ঘর আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিল স্থানীয়রা। তদন্তের পর তামিমসহ এই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা আখতার মোর্শেদ।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!