বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৫, ০১:২৪ এএম

বননীতি ২০২৫-এ পরিবর্তন আসছে

সেন্টমার্টিনের মতো বনাঞ্চলে পর্যটনে কড়াকড়ির ইঙ্গিত

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৫, ০১:২৪ এএম

সেন্টমার্টিনের মতো বনাঞ্চলে  পর্যটনে কড়াকড়ির ইঙ্গিত

বাংলাদেশের বনাঞ্চল ও বন্য প্রাণীর আবাসস্থলে পর্যটন কার্যক্রমে বড় ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ খসড়া অনুযায়ী, বনাঞ্চলে শুধু বাণিজ্যিক লাভের উদ্দেশ্যে পর্যটন পরিচালনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে। একই সঙ্গে বনবাস্তুতন্ত্র রক্ষা, বন্য প্রাণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বননির্ভর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বিস্তারিত আচরণবিধি, সর্বোচ্চ পর্যটকসংখ্যা এবং বিশেষ নির্দেশিকা তৈরি করা হবে।

নতুন বননীতি-২০২৫-এর খসড়ায় স্পষ্ট বলা হয়েছেÑ ‘বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য ও জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এলাকা’ পর্যটনের আওতার বাইরে রাখা হবে। অর্থাৎ এসব অঞ্চলে প্রকৃতিনির্ভর পর্যটনও সীমিত থাকবে এবং যেকোনো অনুমোদন কঠোর পরিবেশগত মূল্যায়ন সাপেক্ষে দেওয়া হবে।

আরাল সি সুন্দরবনকেন্দ্রিক ক্রুজ পর্যটন অপারেটর হিসেবে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির ডিএমডি রেজওয়ান মিঠু রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, কোনো আলোচনা ছাড়াই খসড়া তৈরি করা হয়েছে। তাদের দাবিÑ পর্যটন কার্যক্রম আইন মেনে পরিচালিত হচ্ছে, তাই নীতিকে আরও বাস্তবসম্মতভাবে প্রণয়ন করতে হবে। তাদের ধারণাÑ খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু হলে পর্যটন শিল্প পিছিয়ে যাবে। তাই সুন্দরবন সংরক্ষণে সহায়ক হবে এ রকম পরিকল্পিত পর্যটন টিকিয়ে রাখতে হবে।

বনাঞ্চলে বাণিজ্যিক পর্যটনের নিষেধাজ্ঞা

খসড়া অনুসারে, বনাঞ্চলে ও বন্য প্রাণীর আবাসস্থলে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পর্যটন কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না। বনভূমিতে বনভোজন, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, উচ্চশব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্র, দাহ্য পদার্থ বহনÑ সবই নিষিদ্ধ হবে। অনুমোদিত পর্যটন ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় বননির্ভর জনগোষ্ঠী, বিশেষত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে যুক্ত করার বাধ্যবাধকতা আনা হচ্ছে। তবে তাদের পারিবারিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর কোনো হুমকি সৃষ্টি করা যাবে না।

নীতিতে স্পষ্ট করা হয়েছেÑ পরিবেশসম্মত টেকসই প্রকৃতি-পর্যটন চালু হলেও তা হবে কঠোর নজরদারি, অভিযোজন এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সম্মতি অনুসারে পরিচালিত।

সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা, পর্যটন ক্ষতির মুখে পড়বে

বনাঞ্চলভিত্তিক পর্যটন খাতের উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খসড়ার কয়েকটি বিধান পর্যটনশিল্পে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সুন্দরবনে পর্যটন চলমান রাখার জন্য তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাভিত্তিক মতামত নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করছেন তারা।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ওয়াসিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রস্তাবিত বননীতি পাস হলে কটকা ও করমজলসহ সুন্দরবনের প্রায় ৫২ শতাংশ এলাকায় পর্যটক প্রবেশ করতে পারবে না। সুন্দরবনে বছরে মাত্র চার মাস পর্যটন মৌসুম থাকেÑ সে ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত খুব চিন্তা-ভাবনা করে নেওয়া প্রয়োজন।’ তিনি জানান, পর্যটন ব্যবসায়ীসহ অনেকেই খসড়ায় সংশোধনের দাবি দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) নুজহাত ইয়াসমিনও জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তাদের মতামত এখনো চায়নি। তিনি বলেন, লিখিতভাবে মতামত চাইলে আমরা অবশ্যই আমাদের সুপারিশ দেব।

বন মন্ত্রণালয়ের যুক্তি: বন সংকট গভীর হচ্ছে

বন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, গত দুই দশকে শিল্পায়ন বৃদ্ধি, কাঠের চাহিদা, দখল, অবৈধ বননিধন, নগরায়ণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বনভূমি কমে গেছে। পরিবেশদূষণের কারণে বনজ সম্পদের উৎপাদন কমছে এবং বন্য প্রাণীর আবাসস্থল সংকুচিত হচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বননির্ভর জনগোষ্ঠীর ওপরও। এসব সংকট মোকাবিলা করতে নতুন ও যুগোপযোগী বননীতি অপরিহার্য।

এক কর্মকর্তা জানান, নতুন বননীতির লক্ষ্যÑ বন সংরক্ষণের সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা প্রদান, জলবায়ু ঝুঁঁকি কমাতে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী বিস্তৃত করা এবং নতুন জেগে ওঠা চর ও পতিত জমিতে বনায়ন সম্প্রসারণ। আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার ‘কুনমিং-মন্ট্রিয়ল গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্ক’ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের মোট ভূমির ৪ শতাংশকে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পরিণত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

জ্বালানি কাঠ, বৃক্ষরোপণ ও বনসম্পদ রক্ষায় নতুন কার্যক্রম

খসড়া বননীতিতে বলা হয়েছে, জ্বালানি কাঠের চাহিদা মেটাতে বনাঞ্চলের আশপাশের গ্রামে পরিকল্পিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে কাঠের বিকল্প দ্রব্য উৎপাদনকারী শিল্পকে উৎসাহিত করা, বনের ওপর চাপ কমাতে কাঠ আমদানি সহজ করা এবং বিপন্ন উদ্ভিদ-প্রাণীর ‘জিন ব্যাংক’ স্থাপনসহ পুনঃপ্রবর্তনমূলক উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বিদেশি আগ্রাসী প্রজাতি নিয়ন্ত্রণের নীতিও খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত থাকছে।

পরিবর্তিত বাস্তবতায় গ্রামীণ বন বিধিমালা প্রণয়ন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সফল অংশীদারত্বমূলক বনায়ন ব্যবস্থার আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনাও নীতিতে রাখা হয়েছে।

১৯৯৪ সালের নীতি থেকে বড় পরিবর্তন

বন অধিদপ্তরের উপপ্রধান বন সংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খান জানান, ১৯৯৪ সালের নীতিমালা অনুযায়ী এত দিন কার্যক্রম পরিচালিত হলেও দেশের বাস্তবতা অনেক বদলে গেছে। তাই নতুন নীতিমালায় আধুনিক পরিবেশনীতি, জলবায়ু ঝুঁকি এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার যুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন পক্ষের মতামত পাওয়ার পর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এটি চূড়ান্ত হবে। বর্তমানে দেশে বৃক্ষাচ্ছাদন ২৪ শতাংশের কিছু ওপরে। ২০৩৫ সালের মধ্যে এটিকে ২৭ শতাংশে উন্নীত করা হবে।’

সংরক্ষণ বনাম পর্যটনÑচূড়ান্ত সমাধান কোন পথে?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন জাতীয় বননীতি-২০২৫ বাংলাদেশের বনসম্পদ রক্ষায় একটি যুগান্তকারী কাঠামো তৈরি করতে পারে। কিন্তু একই সঙ্গে পর্যটন খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জও তৈরি করছে। সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন বাংলাদেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আয় এবং আন্তর্জাতিক প্রচারণার অংশ। তাই সংরক্ষণ ও পর্যটনের মধ্যে ভারসাম্য তৈরিই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।

নীতির চূড়ান্ত রূপ নির্ভর করবে সরকারের সিদ্ধান্ত, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, পর্যটন ব্যবসায়ীদের যুক্তি এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশগত প্রতিশ্রুতির সমন্বয়ের ওপর।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!