নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও জাতিকে একটি সুন্দর, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপের শুরুতে তিনি এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
গতকাল সোমবার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে এসব কথা বলেন সিইসি। সিইসি স্বীকার করেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক আলোচনা শুরু করতে কিছুটা দেরি হয়েছে।’ তবে তিনি উল্লেখ করেন, দেশের গ্রাউন্ড সিচুয়েশন ও গ্রাউন্ড রিয়ালিটি সম্পর্কে সবাই অবগত। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তারা স্লো অ্যান্ড স্টেডি নীতি অনুসরণ করে সফলভাবে এগিয়ে চলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা এবং নির্বাচন কমিশন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ‘ডলিভার’ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি জানান, এবারের নির্বাচনে কমিশন কিছু অতিরিক্ত ও নতুন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। যা আইনে থাকলেও আগে বাস্তবায়ন করা হয়নি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ বিদেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটের ব্যবস্থা করা। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত প্রায় ১০ লাখ কর্মকর্তার ভোটের ব্যবস্থা করা। নির্বাচনের দিন কর্মস্থল বা কনস্টিটিউয়েন্সির বাইরে পোস্টেড সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভোটদান নিশ্চিত করা। কারাগারে থাকা (পিপল বিহাইন্ড দ্য বার) ব্যক্তিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা।
সিইসি জানান, বিশ্বব্যাপী একটি বড় চ্যালেঞ্জ হওয়া সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে প্রবাসীদের ভোটের জন্য একটি ‘হাইব্রিড মডেল’ বা ‘লাকসি মডেল’ গ্রহণ করা হয়েছে। এই মডেলে রেজিস্ট্রেশন হবে অনলাইনে। ভোটদান হবে ম্যানুয়ালি, যা ডাকযোগে (বাই পোস্ট) সম্পন্ন হবে। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আচরণবিধি পরিপালনে সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করেন।
সিইসি উল্লেখ করেন, আচরণবিধির খসড়া ওয়েবসাইটে দিয়ে জনগণের মতামত নেওয়া হয়েছে এবং লিখিত মতামত থেকে সম্ভবপর বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আচরণবিধিটা মেনে চলার জন্য আপনারা দলীয়ভাবে একটু ইনফ্লুয়েন্স (প্রভাবিত) করলে ভালো হয়। কারণ ভোটারদের ওপরে আপনাদের যে প্রভাব, এটা আমাদের ওভাবে নেই।
এ সময় আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, পর্নোগ্রাফি থেকে শুরু করে হেন কোনো বাজে কাজ নেই, যা আমার নামে ছড়ানো হচ্ছে না। কীভাবে করবেন বন্ধ? কিছু একটা করে দেখান না। আপনি যদি এটা এখনই করতে না পারেন, আমি কনফিডেন্স পাব কীভাবে?
তিনি আরও বলেন, ভুয়া ভিডিও ও বিকৃত কনটেন্ট ছড়িয়ে তাকে সামাজিকভাবে বিভ্রান্ত ও রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে। অথচ এসব প্রতিরোধে ইসির বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়।
আচরণবিধি প্রসঙ্গে ফুয়াদ বলেন, আইন ও আচরণবিধি ইসির কর্মপরিকল্পনা আরও স্পষ্ট করতে হবে। নির্বাচন কমিশন প্রার্থীর নির্বাচনি ব্যয় বহন না করলেও অনুদান নেওয়া বন্ধ রাখছে। এটা সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া যেমন ধরেন, এলাকায় হাজার কোটি টাকার ব্রিজ হবে; অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে দেনদরবার করে একনেকে পাস করিয়েছি। এলাকার ব্রিজ যেদিন উদ্বোধন করবে সেদিন আমি থাকতে পারব কি না। আমি চেষ্টা করেছি। কিন্তু এলাকাবাসীকে জানাতে পারব না, এটা কি খুব অন্যায় কাজ? আপনি আমার হাত পা বেঁধে দিচ্ছেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে সংলাপে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, ইসির কর্মকর্তারা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।
কাল ইসির সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির সংলাপ : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল সোমবার জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ইসির সংলাপের দিন নির্ধারিত ছিল। তবে জামায়াত তারিখ পরিবর্তন করে ১৯ তারিখ নিয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, সংলাপের অংশ হিসেবে আগামীকাল বুধবার সকালে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংলাপে বসবে কমিশন। একই সময়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনপিপি) সঙ্গেও সংলাপে বসবে ইসি। এ ছাড়া একই দিনে বিকেলে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি।
একই দিনে বাংলাদেশ মাইনোরিটি জনতা পার্টি-বিএমজেপি, ইনসানিয়াত বিপ্লব, বাংলাদেশ, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি) ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ মার্কসবাদীর সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি।

