বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৫, ০১:৫৮ এএম

গভীর রাতে সাংবাদিক-ব্যবসায়ীকে তুলে নেওয়ায় সমালোচনার ঝড়

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৫, ০১:৫৮ এএম

গভীর রাতে সাংবাদিক-ব্যবসায়ীকে  তুলে নেওয়ায় সমালোচনার ঝড়

সংবাদ সম্মেলন ঠেকাতে দৈনিক ভোরের কাগজের অনলাইন বিভাগের সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল এবং মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ী আবু সাঈদ পিয়াসকে গভীর রাতে আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টায় মিজান সোহেলকে এবং ৩টায় পিয়াসকে নিজ নিজ বাসা থেকে আটক করে মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে তীব্র সমালোচনার মুখে গতকাল বুধবার সকালে প্রথমে সোহেলকে এবং সন্ধ্যায় পিয়াসকে ডিবি কার্যালয় থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। বিষয়টিকে স্বৈরাচারী কায়দার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণের চেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছেন ভুক্তভোগীরা।

রাজধানীর বাড্ডা নতুন বাজার এলাকায় নিজ বাসা থেকে প্রথমে আটক হন সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহেল। এরপর মিরপুর-১ এলাকায় নিজ বাসা থেকে আটক হন আবু সাঈদ পিয়াস। ভুক্তভোগীরা জানান, উভয় ক্ষেত্রেই ডিবি পরিচয়ে একদল পুলিশ এসে পরিবারের অন্য সদস্যদের সামনেই তাদের উঠিয়ে নিয়ে যান। এ সময় ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে আটকের কোনো সুস্পষ্ট কারণ, কোনো মামলার রেফারেন্স বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কোনো উল্লেখ করা হয়নি। ডিবিপ্রধান কথা বলতে চান এবং কথা বলা শেষ হলে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হবে, এমনটা জানিয়ে আটক করা হয় সোহেল ও পিয়াসকে।

দুজনকে আটকের ঘটনা রাতেই গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে গভীর রাতে বাসা থেকে সাংবাদিক আটকের আওয়ামী সংস্কৃতির পুনরাবৃত্তিতে দেশে ও বিদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়। আটকের ঘটনার কিছু সময় পরেই লন্ডনভিত্তিক প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের এবং জাওয়াদ নির্ঝর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে পোস্ট করেন। দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে সোহেল ও পিয়াসের আটকের বিষয়টি প্রকাশিত হয়।

এমন প্রেক্ষাপটে বুধবার সকাল ১০টায় সহধর্মিণী সুমাইয়া সীমার জিম্মায় প্রথমে মুক্তি দেওয়া হয় সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহেলকে। ‘উপর মহলের নির্দেশনার অপেক্ষায়’ তখনো ডিবি কার্যালয়ে আটক থাকেন পিয়াস। মুক্তির পর রূপালী বাংলাদেশকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহেল জানান, সংবাদ সম্মেলন বানচাল করতেই এক বিশেষ সহকারীর ইন্ধনে তাকে আটক করা হয়। সোহেল বলেন, ‘রাত ১২টার দিকে ডিবিপ্রধান আমার সঙ্গে কথা বলবেন, এই অজুহাতে ৫-৬ জন ডিবি সদস্য জোর করে আমাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। ডিবিতে নিয়ে আসামির খাতায় আমার নাম লেখা হয়। জুতা-বেল্ট খুলে রেখে গারদে আসামিদের সাথে আমাকে রাখা হয়। কিন্তু কেন আমাকে আটক করা হলো, তা আমি যেমন জানতাম না, তেমনি যারা আমাকে তুলে এনেছিলেন বা ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও কিছু বলতে পারেননি। দীর্ঘ সময় পর বুঝতে পারলাম, সরকারের একজন বিশেষ সহকারীর ইশারায় মাত্র ৯ জন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীকে মনোপলি ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়ার জন্যই আমাকে আটক করা হয়েছিল।’  

মিজান সোহেল আরও বলেন, ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার (এনইআইআর) নিয়ে ডিআরইউতে মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ (এমবিসিবি)-এর প্রেস কনফারেন্স করার কথা ছিল। আমি সেখানে ছিলাম মিডিয়া পরামর্শক। সেই প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করাই তাদের প্রধান টার্গেট ছিল। মাত্র ৯ জন ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিতে সারা দেশে ২৫ হাজার মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীকে পথে বসানোর গভীর চক্রান্ত চলছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রামের সাধারণ মানুষ, প্রবাসীসহ অনেকেই বিপদে পড়বেন। অনেক ব্যবসায়ী পথে বসে যাবে। জেনে রাখা ভালো, এই ৯ জনের একজন সেই বিশেষ সহকারীর বাল্যবন্ধু।

এদিকে বুধবার দুপুরেও পিয়াসকে মুক্ত না করায় দেশজুড়ে মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রি বন্ধ করেন মুঠোফোন বিক্রেতারা। ডিবি কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়ে পিয়াসকে আটকের প্রতিবাদ জানান তারা। এমন প্রেক্ষাপটে বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় পিয়াসকে মুক্তি দেয় ডিবি। এরপর নিজ প্রতিক্রিয়ায় রূপালী বাংলাদেশকে পিয়াস বলেন, ‘আমরা শুধু আমাদের বক্তব্যটুকু দেশ ও জাতির সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এই সিন্ডিকেট এত ভয় পেয়েছে যে, সংবাদ সম্মেলন যেন আয়োজিত হতে না পারে, সে জন্যই আমাদের আটক করা হয়েছিল। তবে আমাদের সংগঠনের সাহসী ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত কর্মসূচি পালন করেছে। এ যেন গত বছরের আরেক জুলাই অভ্যুত্থানের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি, যেখানে সেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের ডিবি কার্যালয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল।’

পিয়াস আরও বলেন, মোবাইলের বাজারের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী সিন্ডিকেট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ভুল বুঝিয়ে রাষ্ট্র প্রদত্ত ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের আটক করেছে। আমার বিরুদ্ধে যখন অন্য কোনো টুলস পাচ্ছিল না, তখন আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর বানানোরও চেষ্টা করে ওই সিন্ডিকেট। স্বাধীন দেশে এভাবে গভীর রাতে সাধারণ নিরীহ নাগরিককে হেনস্তা ও হয়রানি করার তীব্র নিন্দা জানাই।

বুধবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পিয়াসকে আটকের কোনো ব্যাখ্যা পুলিশের পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি। তবে সাংবাদিক মিজান সোহেলের নম্বর ‘সংবেদনশীল’ একটি জায়গায় পাওয়া যায় এবং তথ্য যাচাইয়ের কারণে ডিবিতে আনা হয় বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। বুধবার দুপুরের দিকে ডিএমপির উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, ‘দৈনিক ভোরের কাগজের অনলাইন এডিটর মিজানুর রহমান সোহেলকে আটক করা হয়নি। তথ্য যাচাইয়ের জন্য তাকে আনা হয়। তার ফোন নম্বরটি একটি সংবেদনশীল জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছিল। সে কারণেই তাকে আনা হয়েছিল। পরে স্ত্রীর জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’ তবে সংবেদনশীল জায়গাটি কী ছিল সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি পুলিশ।

অন্যদিকে সাংবাদিক সোহেলের আটকের ঘটনায় নিজ সংশ্লিষ্টতা প্রত্যাখ্যান করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। সাংবাদিক মিজান সোহেল নিজ বক্তব্যে ফয়েজ তৈয়্যবের নাম উল্লেখ না করলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের মাধ্যমে নিজ বক্তব্য প্রচার করেন বিশেষ সহকারী। ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, একজন সাংবাদিককে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায় আমাকে জড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার চলছে আজ সকাল থেকে। সবার আগে আমি স্পষ্টভাবে এবং জোরালো ভাষায় বলছিÑ ওই সাংবাদিককে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদের  ঘটনায় আমার কোনো ধরনের ভূমিকা নেই। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!