- এবারের সবচেয়ে বড় ঘোষণা ‘ট্রপিক্যাল ফরেস্ট ফরেভার ফ্যাসিলিটি’র আওতায় ৫.৫ বিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠন
ব্রাজিলের বেলেমে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-৩০ কোনো বড় ধরনের ইতিবাচক অগ্রগতি ছাড়াই সমাপ্তির দিকে এগোচ্ছে। আগামীকাল ২১ নভেম্বর শেষ হতে যাওয়া এ সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ, ক্ষতিপূরণ, জলবায়ু অর্থায়ন ও বন সংরক্ষণ সব ক্ষেত্রেই অগ্রগতির চেয়ে প্রতিশ্রুতি বেশি বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু ঘোষণা দিয়ে পৃথিবীর উত্তাপ কমবে না। প্রয়োজন তাৎক্ষণিক অর্থ ছাড়, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাসে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং প্রাকৃতিক সমাধানে বিনিয়োগ বাড়ানো। তারা বলছেন, মানবজাতির সামনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এবারের সম্মেলনে বন সংরক্ষণ তহবিল ও জলবায়ু-স্বাস্থ্য খাতে অর্থ বরাদ্দসহ কয়েকটি উদ্যোগ দেখা গেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। অর্থ ছাড়ের গতি সন্তোষজনক নয় বলেও মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।
কপ-৩০এ গৃহীত ‘ইধশঁ ঃড় ইবষল্কস জড়ধফসধঢ়’-এ ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিযোজন ও ক্ষতিপূরণে বছরে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার মোবিলাইজের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অর্থপ্রবাহ লক্ষ্য মাত্রার ৪৫ শতাংশেই রয়েছে। সম্মেলনে কপ-৩০ প্রেসিডেন্ট আন্ত্রে করেয়া মেকে বলেন, ‘সরকার, বেসরকারি খাত ও সিভিল সোসাইটিকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
ইউএনএফসিসিসি নির্বাহী সচিব সাইমন স্টিল জলবায়ু কার্যক্রমকে মানুষের বাস্তব জীবনের সঙ্গে যুক্ত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। অনেক উন্নয়ন ঋণকে জলবায়ু অর্থায়ন হিসেবে দেখানো হচ্ছে এ অভিযোগ তুলে একটি বৈশ্বিক সংজ্ঞা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। অর্থ বরাদ্দে বন সংরক্ষণ, প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান, স্বাস্থ্য-জলবায়ু সমন্বয়, ক্ষতিপূরণ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে অগ্রধিকার দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে।
এবারের সবচেয়ে বড় ঘোষণা হলো ঞৎড়ঢ়রপধষ ঋড়ৎবংঃং ঋড়ৎবাবৎ ঋধপরষরঃু (ঞঋঋঋ) এর আওতায় ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠন। ৫৩টি দেশ এতে প্রাথমিকভাবে যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া জলবায়ু স্বাস্থ্য উদ্যোগে ৩০০ মিলিয়ন ডলার, যুক্তরাজ্যের ১৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন পাউন্ড বন মনিটরিং প্রযুক্তিতে, কঙ্গো বেসিনে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি এবং ব্রাজিলের ১০ মিলিয়ন হেক্টর অ্যামাজন বন পুনরুদ্ধারের ঘোষণা এসবই আলোচনায় ছিল। তবে অধিকাংশ ঘোষণা এখনো প্রতিশ্রুতিতেই সীমিত।
ক্ষতিপূরণ তহবিল (খড়ংং ধহফ উধসধমব ঋঁহফ) নিয়ে নতুন বড় কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে বাংলাদেশ, ফিজি, পাকিস্তানসহ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো বছরে কমপক্ষে ১০০ বিলিয়ন ডলারের দাবি তুলেছে।
সম্মেলনে উপস্থিত বাংলাদেশের প্রতিনিধি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানান, উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য ফরিদা আক্তার বলেন, এটি উন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যকার এক চলমান সংগ্রাম। কার্বন নিঃসরণ কমানোই এখন প্রধান দাবি। দূষণকারীরা যখন অবাধে নিঃসরণ চালিয়ে যাচ্ছে, তখন শুধু প্রকল্পভিত্তিক তহবিল এনে লাভ নেই।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ন্যায়সংগত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জলবায়ু কর্মকা- এগিয়ে নেওয়ার নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। এ সময় তিনি ক্ষয়ক্ষতি, অভিযোজন এবং জলবায়ু অর্থায়নের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন।
কপ-৩০ সম্মেলন স্থলের বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে অনুষ্ঠিত ‘হিট স্ট্রেস ইন ঢাকা: ক্লাইমেট রেজিলিয়ন্সে সলিউশন’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মির্জা শওকত আলী অভিযোজন অর্থায়ন তিনগুণ বৃদ্ধির দাবি তোলেন।
এ ছাড়া সিপিআরডির নির্বাহী প্রধান মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ‘স্পষ্ট রোডম্যাপ ও স্বচ্ছ প্রতিবেদন ব্যবস্থা ছাড়া কপ-৩০ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।’
এদিকে কপ-৩০ তে যোগ দেওয়া পরিবেশ গবেষক ও নেতৃবৃন্দের মতে, ২০২৫ হবে সবচেয়ে উষ্ণ বছর। গত ১২ মাসে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা শিল্পযুগের আগের তুলনায় ১ দশমিক ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, প্যারিস চুক্তির সীমা পুরোপুরি অতিক্রম না করলেও বর্তমান প্রবণতা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন