ফ্যাসিস্টরা দেশ থেকে পালালেও ফ্যাসিজমের কালো ছায়া এখনো কাটেনি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘একদল অপকর্ম করে পালিয়েছে, আরেকদল সেই অপকর্মের দায় কাঁধে তুলে নিয়েছে। কেউ চাঁদাবাজি করে জনগণের ক্ষোভের কারণ হয়েছে, আবার কেউ আরও বেশি শক্তি নিয়ে একই কাজ করছে।’ গতকাল শনিবার সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ইসলামি ও সমমনা ৮ দলের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশ ছোট্ট একটি দেশ, বিপুল জনসম্পদে পরিপূর্ণ। আফসোসের বিষয়Ñ স্বাধীনতার ৫৪ বছর চলে গেছে। বাংলাদেশের মানুষ সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। কারণ বর্গিরা চলে যাওয়ার পর দেশের ভেতরে যারা ছিল, সেই চিলগুলো ছোঁ-মেরে জনগণের সম্পদ নিয়ে চলে গেছে। দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে বাইরে পাচার করেছে। দেশে দেশে বেগমপাড়া গড়ে তুলেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেউ কেউ পালাতে গিয়ে খালে-বিলে আশ্রয় নিয়েছে। আবার রসিক সিলেটবাসীর কাছে কেউ কেউ কলাপাতায় ধরা পড়েছে। এভাবেই অপকর্মের দায় নিয়ে ফ্যাসিস্টরা বাংলাদেশ থেকে পালিয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিজমের কালো ছায়া বাংলাদেশ থেকে যায়নি।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘একদল দখলদার হয়ে জনগণের ঘৃণা কুড়িয়েছে, আরেকদল বেপরোয়া দখলদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। একসময় বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের, আলেম-ওলামাদের জেল, নির্যাতন, ফাঁসি ও দেশছাড়া করার যে প্রবণতা ছিল, সেটি এখনো থামেনি।’ তিনি বলেন, দফায় দফায় এত রক্ত, এত ত্যাগের পরে দেশবাসী কী আশা করেছিল? দেশবাসী আশা করেছিল, অতীতের অপকর্মের যে পরিণতি, ওইটা থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজনীতিবিদরা নতুন রাজনীতি শুরু করবেন। কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে দেখতে পাচ্ছি, একদল সেই পুরনো ধারায় পড়ে রয়েছে। তারা কোনো সংস্কারে রাজি না। তারা সনদ বাস্তবায়নে রাজি না। তারা গণভোটেও প্রথমে রাজি ছিল না। তারপরও ধাক্কায়-ধুক্কায় গণভোট এক দিনেই হতে হবে, তা তারা বাধ্য করেছে সরকারকে। এখন আবার কোথাও কোথাও আমরা ক্ষীণ সুর শুনতে পাচ্ছি। যারা এত দিন নির্বাচনের জন্য জনগণকে বেহুঁশ করে তুলেছিল। এখন তারা ভিন্ন সুরে কেউ কেউ কথা বলতে শুরু করেছে। এ লক্ষণ ভালো নয়।’
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘জনগণ তাদেরকে আগামী নির্বাচনে লালকার্ড দেখানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। এই লালকার্ড দেখা থেকে বাঁচতে গিয়ে যদি কেউ আগামী নির্বাচনকে ভ-ুল করার চেষ্টা করে, আমরা মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে বলছি, তাদের সব ষড়যন্ত্র এ দেশের সংগ্রামী জনগণ ভ-ুল করে দেবে, ইনশাআল্লাহ। তা ছাড়া, কেউ যদি চিন্তা করে বাঁকাপথে প্রশাসনিক ক্যুর মাধ্যমে নির্বাচনের ক্রেডিট হাইজ্যাক করবে। তাদের বলবÑ বন্ধু, সেই সূর্য ডুবে গেছে, এই সূর্য আর বাংলাদেশে উঠবে না। কালো সূর্য বাংলাদেশের মুখ দেখবে না। এখন নতুন সূর্যের উদয় হবে।’
জোটের বাইরে থাকা দু-একটি ইসলামি দলকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমি বন্ধুদের অনুরোধ করব, সব জাল ছিন্ন করে আপনারা আপনাদের আঙিনায় চলে আসুন। এই আঙিনা আপনাদের আঙিনা। এখন যেখানে ঘোরাফেরা করছেন, এটা আপনাদের আঙিনা নয়। তাদের সঙ্গে আপনাদের মানায় না। আপনারা ঘরের ছেলে ঘরে চলে আসুন। আমরা আপনাদের বুকে জড়িয়ে কবুল করব, অভিনন্দন জানাব, ইনশাআল্লাহ।’
খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম (পীর সাহেব চরমোনাই), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির মাওলানা সারওয়ার কামাল আজিজি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রাশেদ প্রধান ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির (বিডিপি) সভাপতি অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল হক চান।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন