শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ড. আ ন ম আমিনুর রহমান

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২৫, ০৭:০১ এএম

মুড়াছড়ার পরিযায়ী ফুটফুটি

ড. আ ন ম আমিনুর রহমান

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২৫, ০৭:০১ এএম

মুড়াছড়ার পরিযায়ী ফুটফুটি

কুলাউড়ার ঝিমাই চা-বাগানে এসে যখন সিএনজি অটোরিকশা থেকে নামলাম তখন ঘড়িতে ভোর ৬টা বেজে ৪৯ মিনিট। পাশেই আধাআধি মোকাম (মাজার)। নির্জন ভোরের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে লম্বা একটা দম নিয়ে উঁচুনিচু সপির্ল পথে সামনের দিকে এগিয়ে চললাম। পথের দু-ধারে চা-বাগান, মাঝে মাঝে আছে মুলি বাঁশের প্রাকৃতিক বাগান। দু’জন স্থানীয় লোককে মুলি বাঁশ কাঁধে উঁচুনিচু পথ ধরে এগিয়ে আসতে দেখলাম। পাহাড়ি পথের দু-ধারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অবগাহন করতে করতে এক ঘণ্টা আট মিনিটে প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ হেঁটে মুড়াছড়া ইকোপার্কের বাঁশঝাড়ের সামনে এসে থামলাম। এখানে বেশকিছু ছোট ছোট পাখির কিচিরমিচর শোনা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে পক্ষীসঙ্গী খুকন থুনাউজাম ডানপাশের জঙ্গলের দিকে নেমে গেল। ওর পিছু নিতে আমার খানিকটা দেরি হয়ে গেল। ফলে ঝোপের মধ্যে পোকামাকড় খোঁজায় ব্যস্ত নেপালি ক্ষুদে ছাতারের (ঘবঢ়ধষ ঋঁষাবঃঃধ) দেখা পেয়েও ছবি তুলতে ব্যর্থ হলাম। অবশ্য ওর জাতভাই বাদামিচিবুক ক্ষুদে ছাতারের (ইৎড়হি-পযববশবফ ঋঁষাবঃঃধ) ছবি তুলতে পারলাম।

এরপর খানিকটা হেঁটে আরেকটু সামনে যেতেই ডুমুরগাছের আড়ালে বাদামিচিবুক ক্ষুদে ছাতারের সঙ্গে আরও এক প্রজাতির ছোট্ট পাখির দেখা পেলাম। ধূসর মাথার ঝুঁটিওয়ালা সুন্দর ও চঞ্চল হলদে পাখিটিকে প্রথম দেখি মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে ২০১৩ সালে। এরপর ২০১৫ সালে দেখি মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। যদিও শীতে এ দেশে পাখিটি প্রচুর সংখ্যায় আসে, কিন্তু ওর রূপে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। যাহোক, একসঙ্গে অন্তত তিন থেকে চারটি পাখি ছিল ডুমুর গাছে। কিন্তু ওদের ছটফটানি ও চঞ্চলতার জন্য ছবি তুলতে বেশ কষ্ট হলো। ছবি তোলার একপর্যায়ে পাখিগুলো ঝোপের ভেতরে ঢুকে গেল। ফলে রণে ভঙ্গ দিয়ে ক্যামেরা কাঁধে সামনের দিকে এগুলাম। ৫ নভেম্বর ২০২১ সালের ঘটনা এটি। এ বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি পাখিটিকে ফের দেখলাম চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার হাজারিখিল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের সেগুন গাছে। সর্বশেষ দেখলাম ৭ নভেম্বর ও ৪ ডিসেম্বর মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে। এবার বেশ সময় নিয়ে পাখিটির ছবি তুলতে পারলাম।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার মুড়াছড়া ইকো পার্ক এবং মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে দেখা ছোট্ট সুন্দর চঞ্চল পাখিটি আর কেউ নয়, এ দেশের সচরাচর দৃশ্যমান পরিযায়ী পাখি ফুটফুটি। হলদে টুনি, ফুটফুটি চটক বা জারদ ফুটকি নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম এৎবু-যবধফবফ ঈধহধৎু ঋষুপধঃপযবৎ, ঈধহধৎু ঋষুপধঃপযবৎ বা এৎবু-যবধফবফ ঋষুপধঃপযবৎ। স্টেনোইস্ট্রিডি (ঝঃবহড়ংঃরৎরফধব) গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম ঈঁষরপরপধঢ়ধ পবুষড়হবহংরং (কুলিসিক্যাপা সেইলোনেনসিস)। দক্ষিণ, পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাখিটির বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। শীতে পাখিটি এ দেশে পরিযায়ী হয়ে আসে।

চড়–ই পাখির মতো ছোট আকারের ফুটফুটির ঠোঁটের আগা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত মাত্র বারো থেকে তেরো সেন্টিমিটার লম্বা হয়। আর ওজন মাত্র আট গ্রাম। একনজরে এটি একটি হলদে-ধূসর পাখি। ঘাড় ও মাথা ছাই-ধূসর। মাথায় ছোট্ট ঝুঁটির মতো দেখা যায়। পিঠের রং হলুদাভ-ধূসরাভ। ডানা ও লেজ হলদে-সবুজ। বুক, পেট ও লেজের তলা হলদে। চোখ বাদামি। ঠোঁট ও পা হলুদাভ। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির বড়দের চেয়ে ফ্যাকাশে ও কিছুটা ফোলাফাঁপা।

শীতে পাখিটিকে ঢাকা, সিলেট, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগের বন-বাগানে দেখা যায়। সচরাচর একাকী বা জোড়ায় বিচরণ করে। তবে দু’তিনটিকেও একসঙ্গে দেখেছি। অত্যন্ত ছটফটে পাখিগুলো গাছের মগডাল মাঝারি উচ্চতা পর্যন্ত ঘুরে বেড়াল। মূলত ছোট ছোট উড়ন্ত পোকামাকড় মোহনীয় ভঙ্গিতে ধরে খায়। শূন্যে ডিগবাজী খেয়ে উড়ন্ত কীটপতঙ্গ ধরতে ওর জুড়ি মেলা ভার। অনেকটা কাঠ বিড়ালির মতো ‘ছিট-ছিট--ছিট-ছিট---’ বা ‘ছিক-ছিক--ছিক-ছিক---’ স্বরে ডাকে।

এপ্রিল থেকে জুন এদের প্রজননকাল। এ সময় এরা নিজ দেশের নির্দিষ্ট গাছের মসে ঢাকা বড় শাখায় অথবা পাথরের খোঁদলে ছোট্ট আকারের বাটি বা কাপের মতো বাসা বানায়। স্ত্রী তাতে ৪টি ছাই-ধূসর বা ক্রিম রঙের ছোট্ট ডিম পাড়ে, যাতে হলদেটে-ধূসর ছিট-ছোপ থাকে। ফোটে ১০ থেকে ১৪ দিনে। চৌদ্দ থেকে একুশ দিন বয়সে উড়তে শেখে। তবে এরপরও কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে। বুনো পরিবেশে আয়ুষ্কাল মাত্র দুই থেকে তিন বছর। 

লেখক : পাখি ও বন্যপ্রাণী প্রজনন বিশেষজ্ঞ

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!