একটি বিপ্লব, একটি সামাজিক আন্দোলন, একটি স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে অগণিত গ্রন্থ রচিত হয়। আমরা রুশ বিপ্লব, ফরাসি বিপ্লব, ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, সিপাহি বিপ্লব, দেশভাগ, নক্সাল আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে অসংখ্য গ্রন্থ পড়েছি। সেগুলো গল্প, উপন্যাস, নাটক, ঐতিহাসিক গবেষণা গ্রন্থ ইত্যাদি। প্রতিটি বিপ্লবের পটভূমিতে লুকিয়ে থাকে অনেক গল্প, কাহিনি। যেগুলো মোটেও কষ্টকল্পিত, বানোয়াট কিছু নয়। বাস্তবতা থেকেই রচিত হয়েছে এমন হাজারো উপন্যাস, গল্প। চব্বিশের গত অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টে সংঘটিত রক্তক্ষয়ী এই অভূতপূর্ব আন্দোলনের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে গিয়ে অগণিত তরতাজা টগবগে তরুণ, তরুণী, যুবক, কিশোর, নিষ্পাপ শিশু, বয়োবৃদ্ধ নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটাতে নিজের মূল্যবান প্রাণ দিয়ে তারা অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন। ইতিহাসের পাতায় তাদের আত্মত্যাগের কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
এ ছাড়া অগণিত মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। আত্মত্যাগী ওইসব মানুষগুলোর কথা আমরা কোনোভাবেই ভুলতে পারব না। জুলাই বিপ্লবের বাস্তব পটভূমিকায় লেখা একগুচ্ছ গল্পের সংকলন ‘দ্রোহকাল’। প্রতিটি গল্পেই চব্বিশের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময়কার ভয়ঙ্কর বাস্তবতা ফুটে উঠেছে অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী হয়ে। গ্রন্থটি উৎসর্গ হয়েছে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা দুঃসহ স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়ে। বাংলাদেশকে নতুন পথের দিশা দিতে চব্বিশের জুলাই বিপ্লবে আত্মদানকারী সকল শহিদ এবং পঙ্গুত্ববরণকারী অগণিত নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী সবাইকে। মোট ৯টি গল্প রয়েছে ‘দ্রোহকাল’ বইটিতে।
গল্পগুলো হলো, আমরা তোমাদের ভুলবো না, একজন শেফালীর গল্প, বিদ্রোহী কন্যা, গ্রাফিতির ভাষা, দ্রোহকাল, নয়নতারা ও কয়েকটি বুলেটের খোসা, দুঃস্বপ্নের প্রহর, নতুন এক বাংলাদেশে রাজিব সাহেব ও বেদনার ক্যানভাস। প্রতিটি গল্পেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়কার বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন গল্পকার রেজাউল করিম খোকন। সহজ সাবলীল বর্ণনায় পাঠককে গল্পের মধ্যে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন বলা যায়। বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই মাসের শুরু থেকে যা ঘটেছে এবং ঘটছে, সে বিষয়ে সবাই অবগত। দেশে যারা আছেন, তাদের এ ঘটনাবলির দুঃসহ, মর্মান্তিক অভিজ্ঞতাই আছে। ছাত্র-জনতার সাম্প্রতিক লড়াইয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শামিল হয়েছিল কবিতা, গান, র্যাপ, পোস্টার, কার্টুন আর গ্রাফিতি। স্লোগান রাজনীতির মাঠ থেকে উচ্চকিত সুরধ্বনি। স্লোগান রাজনৈতিক আকাক্সক্ষা আর ক্ষোভের ভাষা। সময়োপযোগী একটা স্লোগান জটিল রাজনৈতিক ভাবকে সহজ ভাষায় মানুষের মাথায় গেঁথে দিতে কাজ করতে পারে মোক্ষম অস্ত্রের। স্লোগান শত্রু-মিত্র চিনতে শেখায়।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় আমরা স্লোগানের ভাষায় নতুনত্বের প্রকাশ দেখি। যা সেই সময়ে মাঠে আন্দোলনে শামিল সবাইকে উদ্দীপ্ত করেছে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জুলাই অভ্যুত্থানকে পটভূমি করে কবিতা রচিত হয়েছে অসংখ্য। নতুন নতুন গান তেমন যথেষ্টসংখ্যক শোনা যায়নি। জুলাই অভ্যুত্থানের পটভূমিতে গল্প উপন্যাসও যথেষ্টসংখ্যক নয় এখন পর্যন্ত। রেজাউল করিম খোকন জুলাই অভ্যুত্থানের সময়কার বাস্তবচিত্র নিজের চোখে দেখেছেন। অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
তিনি সেই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, নিজের চোখে দেখা বাস্তব চরিত্রগুলোকে গল্পে অত্যন্ত নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পটভূমিতে আমাদের চারপাশের মানুষের গল্প উঠে এসেছে প্রতিটি গল্পে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পটভূমিতে আগামীতে আরও অসংখ্য গল্প, উপন্যাসগ্রন্থ প্রকাশিত হবে। তবে এক্ষেত্রে আলোচ্য গল্পগ্রন্থ ‘দ্রোহকাল’একটি অনবদ্য সংযোজন নিঃসন্দেহে। গ্রন্থটির প্রকাশক পাপুল। ১১২ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য ৩০০ টাকা। দ্রোহকাল বইটির অনুপম প্রচ্ছদ ডিজাইন করেছেন রজত। বইটির বহুল প্রচার কামনা করছি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন