মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২৫, ১২:২৭ এএম

৬২ শিক্ষা প্রকল্প ‘অদক্ষদের’ বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি মন্ত্রণালয়ের

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২৫, ১২:২৭ এএম

৬২ শিক্ষা প্রকল্প ‘অদক্ষদের’ বিরুদ্ধে কঠোর  হুঁশিয়ারি মন্ত্রণালয়ের

২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) বাজেট শতভাগ খরচ করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রকল্পগুলো। মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাজেট অর্ধেক করার পরও আরএডিপি বাজেট শতভাগ খরচ করতে না পারায় প্রচ- ক্ষুব্ধ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলেছে, আরএডিপি বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা জাতির কাছে ‘অক্ষম কর্মকর্তা’ হিসেবে পরিচিত হবে। বছর শেষে পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করে এসব প্রকল্প পরিচালক ও বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থাকবে কি না সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আরএডিপিতে অন্তর্ভুক্ত প্রকল্পগুলোর জুলাই ২০২৪ থেকে মে ২০২৫ পর্যন্ত অর্থছাড় ও ব্যয় পর্যালোচনা সভার কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের (পরিকল্পনা) সভাপতিত্বে গত ২ জুন ভার্চুয়াল জুম প্ল্যাটফর্মে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এবার ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটির কারণে কার্যবিবরণী প্রকাশ হয় চলতি মাসে।
সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ৬২টি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় জানানো হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আরএডিপিতে ৬২টি প্রকল্পের বিপরীতে ৫ হাজার ৪১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এই বরাদ্দের বিপরীতে চলতি বছরের মে পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৪৪৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এই খরচ মোট বরাদ্দের ৬৩.৭২ শতাংশ। অর্থাৎ খরচ কম হয়েছে ৩৬.২৮ শতাংশ। যা আরডিপিতে মোট বরাদ্দ থেকে ৫০০ কোটি টাকা কম। মূল এডিপি অর্ধেক কমানোর পরও আরএডিপি শতভাগ বাস্তবায়ন  না হওয়ায় সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সভাপতি। 
সভাপতি বলেন, আরএডিপি শতভাগ বাস্তবায়ন করতে না পারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি। এই কর্মকর্তারা জাতির কাছে ‘অক্ষম’ হিসেবে পরিচিত হবেন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
যৌক্তিক কারণ ব্যতিত কোনো কর্মকর্তার (প্রকল্প পরিচালক অথবা সংস্থাপ্রধান) গাফিলতির কারণে মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি খারাপ হলে তা বছর শেষে মূল্যায়ন করা হবে বলে জানান সভাপতি। এই বিভাগের  অগ্রগতির ওপর প্রকল্প পরিচারকদের পারফরম্যান্স নির্ভর করবে বলেও তিনি জানান। কর্মকর্তাদের কঠোর বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, বছর শেষে কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্বে থাকবেন কি না, তা মূল্যায়ন করা হবে।
যেসব প্রকল্পে অর্থছাড় নিয়ে জটিলতা রয়েছে, তা নিরসনে সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতার বিষয়েও আশ্বস্ত করেন সভাপতি।
সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ বিভাগের প্রকল্পে আরএডিপিতে বরাদ্দ অর্থছাড়, চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত ব্যয় এবং ৩০ জুন পর্যন্ত সম্ভাব্য ব্যয় প্রকল্পওয়ারি পর্যালোচনা করা হয়। পর্যালোচনায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা করচ না হওয়ায় সভাপতি বিস্ময় প্রকাশ করেন। সভাপতি বরাদ্দ করা অর্থ শতভাগ খরচের জন্য জোর প্রয়াস চালানোর নির্দেশনা দেন। সভাপতি বলেন, এই সভাটি এ অর্থবছরের কার্যক্রম শতভাগ সুসম্পন্ন করার তাগিদ হিসেবে করা হচ্ছে। যেহেতু এই সভাটি জুম প্ল্যাটফর্মে করা হচ্ছে, তাই এটি আগামীতে প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। 
সভায় উপস্থিত সূত্র জানিয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের এসব প্রকল্পের মধ্যে ৩৩টিরও বেশি রয়েছে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) আওতাধীন। সভায় এসব প্রকল্পের আরএডিপি বাস্তবায়নে যথেষ্ট অগ্রগতি না হওয়ার বিষয়টিই বেশি আলোচনায় আসে। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে অচলাবস্থা, প্রশাসনে পরিবর্তন ইত্যাদি নানা কারণে ইউজিসি আওতাধীন প্রকল্পগুলোর আরএডিপি বাস্তবায়নের হার কম বলে সভায় উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের আওতাধীন কয়েকটি প্রকল্পের আরএডিপি বাস্তবায়নের হার কম। তবে চলমান থাকা অবস্থায় প্রকল্পে নীতিগত সিদ্ধান্তে পরিবর্তন, কমপোনেন্টে (প্রকল্পের অঙ্গ) পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে আরএডিপি বাস্তবায়নের হার কম বলে দাবি সূত্রের। 
যেসব প্রকল্পে আরএডিপি বাস্তবায়ন শতভাগ হয়নি, তেমন একটি প্রকল্প হলোÑ মাউশির আওতাধীন ‘আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার প্রচলন (২য় পর্যায়)’ প্রকল্প। এটি মূলত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং আধুনিকীকরণের একটি প্রয়াস। এই প্রকল্পের অধীনে, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি সরঞ্জাম সরবরাহ, কনটেন্ট উন্নয়ন এবং অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত। শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করা, শিক্ষকদের আইসিটি দক্ষতা বৃদ্ধি করা, যাতে তারা ক্লাসরুমে আরও কার্যকরভাবে আইসিটি ব্যবহার করতে পারে। এই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের মূল লক্ষ্য হলো, প্রথম পর্যায়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শিক্ষাব্যবস্থায় আইসিটির ব্যবহার আরও ব্যাপকভাবে কার্যকর করা।
বর্তমানে এই প্রকল্পে পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন অধ্যাপক শাহেদুল কবির। চলমান অবস্থায় প্রকল্পের কমপোনেন্টে পরিবর্তন হওয়ার কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই প্রকল্পে আরএডিপি শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান। রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, আমার প্রকল্পের মূল কাজ হচ্ছে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ প্রস্তুত করা। শিক্ষক প্রশিক্ষণের কাজটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শতভাগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে চলমান থাকা অবস্থায় প্রকল্পের কমপোনেন্টে পরিবর্তন হওয়ায় আরএডিপি শতভাগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। 
এ বিষয়ে তিনি জানান, প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষে আগে স্মার্ট টিভি স্থাপনের সিদ্ধান্ত ছিল। পরবর্তীতে স্মার্ট টিভির বদলে ইন্টারঅ্যাকটিভ এডুকেশন প্যানেল বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। চলতি বছরের মে মাসে এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন হয়েছে। এটি এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় আরএডিপি বাস্তবায়নও শতভাগ হয়নি।  
আরএডিপি শতভাগ বাস্তবায়ন না হওয়া আরেকটি প্রকল্প হলোÑ ‘ইম্প্রুভিং কম্পিউটার অ্যান্ড সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং টারশিয়ারি এডুকেশন প্রজেক্ট (আইসিএসইটিইপি)’। এটি ইউজিসি কর্তৃক বাস্তবায়িত একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হলো দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও সফটওয়্যার প্রকৌশল (সিএসই) এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) শিক্ষার মান উন্নয়ন করা। এই প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আমিনুল হক এই প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন। সম্প্রতি এই পদে আরেকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, এটি একটি বিশেষ ধরনের প্রকল্প। বুয়েট, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে বড় তিনটি ভবনসহ কম্পিউটার সংক্রান্ত নানা বিষয় ছিল এই প্রকল্পে। ভবন নির্মাণের জন্য টেন্ডার হয়েছে। তবে কিছু জটিলতার কারণে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি হয়নি। এসব ভবন নির্মাণের জন্য ৭৫ শতাংশ কাজে সংশ্লিষ্টতা বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। কিন্তু নানা সমস্যায় এটি হয়নি। ফলে আরএডিপি বাস্তবায়নও আশানুরূপ হয়নি। 
ইউজিসির আওতাধীন আরেকটি প্রকল্প হলোÑ ‘হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট)’। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে গুণগত মানোন্নয়ন ও রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করছে এই প্রকল্প। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে এই প্রকল্প। এই প্রকল্পে পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন প্রফেসর ড. আসাদুজ্জামান। আরএডিপি বাস্তবায়নের বিষয়ে রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, কাগজপত্র না দেখে কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে তা বলতে পারব না, তবে শতভাগ হয়নি। 
অন্যদিকে চট্টগ্রামের ভেটিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্স বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে ঢাকার পূর্বাচলে টিচিং ও ট্রেনিং পেট  (পোষা প্রাণী) হাসপাতাল ও কক্সবাজারে এ-সংক্রান্ত গবেষণা কার্যক্রম শক্তিশালীকরণের জন্য একটি প্রকল্প চলছে। ২০১৮ সালে এই প্রকল্প শুরু হয়। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এর মেয়াদ ছিল। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৭ পর্যন্ত করা হয়েছে। এই প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন ড. ইমতিয়াজউদ্দিন। ড. ইমতিয়াজউদ্দিন রূপালী বাংলাদেশকে জানান, গত ৩০ জুন তিনি প্রকল্প থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। বর্তমানে সালাম মোর্শেদ নামে একজন অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের কাজ পরিচালনা করছেন। ড. ইমতিয়াজউদ্দিন আরও জানান, কক্সবাজারে ডরমেটরি ও গবেষণাগারের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। তবে ঢাকার পূর্বাচলে পেট (পোষা প্রাণী) হাসপাতালের কাজ হয়নি। অথচ এই প্রকল্প ইতিমধ্যেই সাত বছর পার করে ফেলেছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!