রাজবাড়ী ও রাজশাহীতে একযোগে বিক্ষোভ করেছে এইচএসসি ২০২৫ ব্যাচের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মাইলস্টোন স্কুলে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে তারা শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগ দাবি করে রাজপথে নামে।
রাজবাড়ীতে বিক্ষোভ ও সমাবেশ
মঙ্গলবার (২২জুলাই) দুপুরে রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়, সেখানে অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শিক্ষার্থী তামিম, আতিক, উম্মে সাদিয়াসহ আরও অনেকে।
বক্তারা বলেন, ‘গতকাল মাইলস্টোনে ঘটে যাওয়া ঘটনায় আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। আমরা চেয়েছিলাম শুধু পরীক্ষা স্থগিত হোক, কিন্তু গভীর রাতে যেভাবে সিদ্ধান্ত এসেছে তা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্যায়। শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের জন্য আমরা তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করছি। আমরা আর এক মুহূর্তও তাদের দায়িত্বে দেখতে চাই না।’
রাজশাহীতে শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও
একই দিন দুপুরসাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহীতেও আন্দোলনে নামেন এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। তারা রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করে ১২ দফা দাবি উত্থাপন করে।
তাদের ১২ দফা দাবিগুলোর মধ্যে ছিল:
১. শিক্ষা উপদেষ্টা, সকল বোর্ডের চেয়াম্যান, শিক্ষা সচিবসহ যারা পরীক্ষার সাথে জড়িত তাদেরকে পদত্যাগ করে, সেই জায়গায় শিক্ষার্থীবান্ধব কাউকে নিয়োগ দিতে হবে।
২. আজকে বিকেল ৫টার দিকে মাইলস্টোন স্কুলে হওয়া হতাহতের ঘটনার সঠিক বিবরণ দিতে হবে। কতজন স্টুডেন্টের লাশ পাওয়া গিয়েছে তার সঠিক হিসেব দিতে হবে প্রমাণসহ।
৩. মাইলস্টোন স্কুলের ঘটনার সাথে যারা জড়িত এবং যারা দায়ী, তাদের সকলের নাম প্রকাশ করতে হবে এবং তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৪. আজকে পরীক্ষা কেন রাত ৩টার সময় স্থগিত করা হলো, তার জবাব দিতে হবে।
৫. CQ & MCQ একসাথে পাশ দিতে হবে।
৬. গ্রেস মার্কের নিয়ম আগের মতো রাখতে হবে।
৭. যেসব টিচাররা খাতা দেখায় অনিয়ম করেছেন এবং টিকটকারদেরকে দিয়ে খাতা দেখিয়েছেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৮. পরীক্ষার রেজাল্টের ০১ মাসের মধ্যে সাপ্লিমেন্টারী পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে, যেন সবাই একসাথে কলেজে ভর্তি হতে পারে এবং এডমিশনে পরীক্ষা দিতে পারে।
৯. রেজাল্টের সময় অথবা পুনর্মূল্যায়নের সময় সবার খাতা অনলাইনে দেখার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে করে ফেইল করা শিক্ষার্থীরা তাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারে। এবং তারা সত্যিই ফেইল করেছে কি না, সেইটা বুঝতে পারে।
১০. অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা নিতে হবে।
১১. পরীক্ষার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ টিম দিয়ে প্রশ্ন যাছাই করে, নির্ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা নিতে হবে।
১২. পরীক্ষা বা রেজাল্ট নিয়ে নতুন কোনো নিয়ম চালু করলে, সেটা ওই ব্যাচের ক্লাস শুরুর আগেই জানাতে হবে। পরীক্ষার সময় বা রেজাল্টের সময় জোর করে নতুন নতুন নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা বারবার উপেক্ষিত। কোনো ব্যাচকে নিয়ে এমন নাটকীয়তা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা যুক্তিসংগত ও বাস্তবসম্মত দাবি তুলেছি।’
দুই সমাবেশ থেকেই একই স্পষ্ট দাবি এসেছে—শিক্ষার্থীরা আর চুপ থাকবে না। শিক্ষা ব্যবস্থায় দায়বদ্ধতা, স্বচ্ছতা ও সম্মান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা রাস্তায় নেমেছে এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে বলেও জানানো হয়।
আপনার মতামত লিখুন :