নিরেট ভদ্রলোক হিসেবে তার সুনাম সিলেটজুড়ে। নিজের দল বিএনপির কাছে তিনি পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক। এলাকায় সবার কাছে তিনি পরিচিত স্বচ্ছ ও সৎ রাজনীতিবিদ হিসেবে। নিজের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও যোগ্যতায় তৃণমূল থেকে আজ জাতীয় পর্যায়ে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি মিফতাহ সিদ্দিকী। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ)। সিলেট বিএনপির অন্যতম আলোকিত মুখ। তার বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক দুর্নাম নেই। আবার দলের প্রতি পূর্ণ আস্থায়ও পরীক্ষিত তিনি।
গত ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট আমলে দলের দুর্দিনে যখন অনেকেই হামলা-মামলার ভয়ে ঘরবাসী হয়েছেন, কেউ পাড়ি জমিয়েছেন দেশের বাইরে, তখনো মিফতাহ সিদ্দিকী মাঠ ছেড়ে যাননি কিংবা ৫ আগস্টের পর নানান বিতর্ক যখন সিলেট বিএনপির নেতাদের গায়ে আঁচড় বসাচ্ছিল, তিনি ছিলেন সেখানে পরিচ্ছন্নতার প্রতীক। আওয়ামী লীগ নেতাদের যখন সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠছিল অনেকের নামে; এমনকি এখনো তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চলা, তাদের সম্পত্তি নিরাপদ রাখা কিংবা বিদেশে পাড়ি দিতে সহায়তা করা নিয়ে অনেকের নামে দলের ভেতরে ও বাইরে আলোচনার খোরাক জোগাচ্ছে, মিফতাহ সিদ্দিকী এসব বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে তৃণমূলে দলকে সুসংগঠিত করে যাচ্ছেন। চষে বেড়াচ্ছেন পুরো সিলেট বিভাগ।
বিশেষ করে যখন সীমান্ত এলাকাগুলোতে চোরাচালান ও মাদক ব্যবসা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, বালু-পাথরমহাল ইস্যুতে দল বিতর্কিত হয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি সেখানে দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিয়েছেন জিরো টলারেন্স নীতি। দলকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে নিয়ে আসতে কঠোরভাবে চোরাচালান ও মাদক দমনের সংগ্রামে তিনি অগ্রসৈনিক।
সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জকে নিয়ে তিনি এগোচ্ছেন ইতিবাচক পরিকল্পনাসহকারে। দলের ৩১ দফা সামনে রেখে সেখানে রাজনৈতিক গণজাগরণ তৈরি করছেন। চাঙা হয়ে উঠেছে সীমান্তবর্তী তিন উপজেলা বিএনপি।
ইতিমধ্যে কোম্পানীগঞ্জ-জৈন্তাপুরে একাধিক সফল সমাবেশ করেছেন তিনি। বাকি উপজেলায়ও নামছেন শিগগির। জুনের শেষ দিকে জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপির সমাবেশ করেন তিনি। এর আগে ২১ জুন করেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সমাবেশ। ১৬ জুলাই জৈন্তাপুরে সমাবেশ করার আগে ১৫ জুলাই করেন জাফলংয়ে দলীয় সমাবেশ। সমাবেশ করেছেন দরবস্ত বাজারেও। গেল সপ্তাহে সম্মেলন করেছেন মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায়। এর আগে কুলাউড়া উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে সম্মেলনে সেরে নিয়েছেন।
সুযোগ পেলে প্রায় প্রতিদিন তিনি নিজের নির্বাচনি এলাকায় গিয়ে সমাবেশ করছেন, যোগ দিচ্ছেন সামাজিক অনুষ্ঠানে, মিশছেন মানুষের সঙ্গে। শুনছেন তাদের আশা-আকাক্সক্ষা ও সুখ-দুঃখের কথা। এ জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন জাতীয় সংসদের সিলেট-৪ আসনে। তার এই তৎপরতায় বিএনপির প্রতি মানুষের আস্থা ও আকাক্সক্ষা বেড়েই লেছে। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে জোরেশোরে। দলের নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে হাইকমান্ডের গুডবুকে আছেন তিনি। ফলে সিলেট-৪ আসনে প্রার্থিতার ক্ষেত্রে তার এখন উজ্জ্বল সম্ভাবনা! আলোচনার টেবিলে আছে তার নামও।
ছাত্রদল হয়ে শুরু করা রাজনীতির পর নিজের শ্রম ও রাজনৈতিক কর্মদক্ষতায় জায়গা করে নিয়েছেন বিএনপিতে। দলের দুর্দিনে বিশ্বাসঘাতকতা না করার পুরস্কারস্বরূপ তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় দলের কেন্দ্রীয় ফোরামে। গত ১৫ জুন ২০২৪ থেকে বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) হিসেবে তিনি এখনো সুনামের সঙ্গে রাজনৈতিক মেধা ও প্রজ্ঞার সমন্বয়ে দলকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যাচ্ছেন। একসময় তিনি ছিলেন সিলেট মহানগর বিএনপি নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি সিলেট বিভাগে বিএনপিকে শক্তিশালী করতে নিরলসভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। গত সরকারের ১৬ বছর রাজপথে থেকে সরকারবিরোধী সব আন্দোলনে তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব নেতাকর্মীদের প্রতিনিয়ত উজ্জীবিত করেছে। মিফতাহ সিদ্দিকী কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহপ্রচার সম্পাদক ও সদস্যও ছিলেন। তিনি সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও এমসি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নির্বাচিত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে ’৯০-পরবর্তী সিলেট ছাত্রদলকে সুসংগঠিত করতে কাজ করেছেন।
দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপকালে তিনি তার পরিকল্পনার কথা জানান। সিলেট-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়নের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বলেন, “উত্তর-পূর্ব সিলেট অঞ্চল থেকে শুরু করে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত পুরো সীমান্ত এলাকা নিয়ে ‘পর্যটন হাব’ গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। আমি সেই সুযোগ কাজে লাগাব। পাশাপাশি পাথর, বালুসহ প্রাকৃতিক সম্পদকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলকে একটি ‘ইন্ডাস্ট্রি বেইজ’ এলাকায় পরিণত করব।
সে ক্ষেত্রে পরিবেশকে রক্ষা করে পাথর ও বালু কোয়ারি এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্প ও বাণিজ্যকে একটি সুর্নিদিষ্ট কাঠামোর ভেতরে নিয়ে আসার প্ল্যান রয়েছে আমার। শুধু সেই এলাকা নয়, সিলেটসহ পুরো দেশের অর্থনীতিতে এই অঞ্চল মারাত্মক রকমের ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারত। কিন্তু আজও সেই সুযোগ কাজে লাগানো হচ্ছে না।
পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে না। আমি সেই উদ্যোগ নিতে চাই। এ অঞ্চলকে একটি সফল বাণিজ্যিক ও পর্যটন অঞ্চলে নিয়ে যেতে চাই। সেখানকার নদীগুলো খুবই উপযোগী বাণিজ্যের জন্য। অর্থনৈতিক স্বার্থে সেই নদীগুলো বাঁচিয়ে তুলতে এবং রাখতে হবে। এতে যেমন সরকারের রাজস্ব আয়ের দারুণ সোর্স তৈরি হবে, তেমনি এই এলাকার উন্নতি হবে কল্পনাতীত।” তিনি বলেন, “শিক্ষার ক্ষেত্রে সিলেটের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অঞ্চল এটি। কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট আর জৈন্তাপুরে ভালো মানের কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। কোম্পানীগঞ্জে একটি মাত্র কলেজ রয়েছে।
সেখানকার ‘এম. সাইফুর রহমান ডিগ্রি কলেজ’ শুধু নামের কারণে সরকারীকরণ হয়নি। সুযোগ পেলে আমি এই অঞ্চলের শিক্ষা নিয়ে সবার আগে কাজ শুরু করব। সিলেট-৪ আসন নিয়ে আমার ভিশন ও মিশন এই দুটি। অতীতে হয়নি বলে ভবিষ্যতেও হবে নাÑ এটিতে আমি বিশ্বাসী নই। আমি মনে করি, এখন সময় এসেছে। সেই সময়কে কাজে লাগাতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে চেষ্টা চালাতে হবে।”