পালটা শুল্ক নিয়ে তৃতীয় দফা আলোচনার জন্য বারবার সময় চেয়েও যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া না পেয়ে এবার সুনির্দিষ্টভাবে আগামী সপ্তাহের রোববার মিটিংয়ের সময় চেয়ে ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভকে (ইউএসটিআর) চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সময় পেলে সে অনুযায়ী চূড়ান্ত আলোচনা করতে রওনা দেবে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। নির্ধারিত দিনে যুক্তরাষ্ট্র সময় না দিয়ে অন্য কোনো দিন সময় দিলে, সে অনুযায়ী যাবেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত চুক্তির খসড়ার আলোকে আমরা মঙ্গলবার ইউএসটিআরকে বাংলাদেশের অবস্থানপত্র পাঠিয়েছি। পাশাপাশি আগামী সপ্তাহে বৈঠকের নির্দিষ্ট সময় চেয়ে চিঠিও দিয়েছি। এখন আমাদের অনুরোধ অনুযায়ী তারা যদি বৈঠকের সময় নির্ধারণ করে, আমরা সেই অনুযায়ী যাব। না হলে, যুক্তরাষ্ট্র যখন সময় দেবে, তখনই যাব।’
গত ৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের রপ্তানিপণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পালটা শুল্কারোপ করে একাধিক চুক্তির খসড়া কাগজপত্র পাঠানো হয়। বিষয়টি নিয়ে তৃতীয় রাউন্ড আলোচনার জন্য ২১ জুলাই ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার বিমান টিকিটও বুকিং দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু গতকাল ইউএসটিআর এক ইমেইলে তাদের কাছ থেকে পূর্বনির্ধারিত সময় না নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের যুক্তরাষ্ট্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেয়। কারণ হিসেবে জানানো হয়, ইউএসটিআরের কর্মকর্তারা বর্তমানে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা নিয়ে প্রস্তুতিতে ব্যস্ত।
তৃতীয় রাউন্ড আলোচনায় বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে থাকবেন জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ তৈয়ব আহমেদ, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা।
দ্বিতীয় রাউন্ড আলোচনার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সেবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অংশ নিয়েছিলেন ৩০ থেকে ৪০ জন কর্মকর্তা, আর বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন মাত্র তিন-চারজন। ফলে দরকষাকষিতে বাংলাদেশ খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। তৃতীয় রাউন্ডে সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে এবার প্রতিনিধি দলে অতিরিক্ত সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব অনুযায়ী ৩৫ শতাংশ ট্যারিফ আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে আলোচনার জন্য হাতে আছে মাত্র আট দিন। তাই দ্রুত সময় নির্ধারণ করা জরুরি। তবে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও সময় দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র যদি নতুন ট্যারিফ কার্যকর করার তারিখ না পেছায়, তবে বাংলাদেশকে অবশ্যই ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মত হতে হবে। তা না হলে বর্তমান ট্যারিফই কার্যকর হবে, যা বাংলাদেশের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশের ওপর আরোপিত শুল্ক কমাতে যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্ক ছাড় দেওয়া এবং দেশটি থেকে সরকারিভাবে (জিটুজি ভিত্তিতে) আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে কোনো ‘অ-বাণিজ্যিক’ শর্ত মেনে নেওয়ার পক্ষে নেই বাংলাদেশ।
জানা গেছে, চুক্তির খসড়ায় যুক্তরাষ্ট্র যেসব অ-বাণিজ্যিক শর্ত রেখেছে, বাংলাদেশ সেগুলো মেনে নেবে না। তবে সরাসরি প্রত্যাখ্যান না করে, কিছু শর্ত পূরণের জন্য ৫ বছর এবং কিছু শর্তের ক্ষেত্রে ১০ বছর সময় চাওয়া হবে।