জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশে যে এখনো ভালো মানুষ আছে, বাংলাদেশ যে এখনো নষ্ট হয়ে যায়নি, বিশ্বের দরবারে নিজেদের অবস্থানের জন্য বাংলাদেশের মানুষের যে একটা স্পৃহা আছে, তার প্রমাণ এই জুলাই বিপ্লব। এটি একটি মাইলফলক।
জুলাই বিপ্লবের শহিদদের আত্মত্যাগের স্মরণে এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় গতকাল শনিবার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠানমালা ২০২৫-এর অংশ হিসেবে এক আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। রাজধানীর পেট্রোবাংলা ভবনের ড. হাবিবুর রহমান অডিটরিয়ামে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সচিব এসব কথা বলেন।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং এর আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ও কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, জুলাই আন্দোলনের শহিদ পরিবারের সদস্য, আহত জুলাইযোদ্ধারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। জুলাই বিপ্লবের শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তাদের আত্মত্যাগকে জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন বলে অভিহিত করেন সচিব।
অনুষ্ঠানে আহত জুলাইযোদ্ধা হোসাইন আহমেদ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগকে এমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য এবং তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানার সামনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমার হাতে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে, যার ফলে আমার হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর মৃত ভেবে আমাকে গাড়িতে তোলা হয়।’ তারপর তার ভাইয়েরা তাকে উদ্ধার করে কীভাবে হাসপাতালে ভর্তি করে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেন।
নিহত ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া তার বক্তব্যে বলেন, আমার ছেলের বিদেশে চলে যাওয়ার কথা ছিল। তার সরকারি চাকরি করার কথা ছিল না। তারপরও সে আন্দোলনে গিয়েছিল বৈষম্য, দুর্নীতি, অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। ১৮ জুলাই ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের কাছে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়। তিনি আরও বলেন, পিতার কাছে সন্তানের লাশ সবচেয়ে ভারী। এসব অনুষ্ঠানে এলে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ আরও বেড়ে যায়, তারপরও সন্তানের জন্য সম্মান পাচ্ছিÑ এটা ভেবে সম্মানিত বোধ করি।
আরিফ নামের একজন জুলাইযোদ্ধার স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, সে তার মাকে চিঠি লিখে আন্দোলনে যায়, সে না ফিরলেও তার দেশ ফিরবে। এ থেকে বোঝা যায়Ñ জুলাই বিপ্লব সরাসরি দেশপ্রেমের সঙ্গে জড়িত। দুর্নীতি ও জুলাই আন্দোলন দুটি সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী ব্যাপার।
বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বলেন, আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ কাজ আছে, দায়িত্ব আছে, আমরা যদি নিজ নিজ কাজ সঠিকভাবে করি, সঠিক দায়িত্ব পালন করিÑ তবে মানুষের অধিকার ক্ষুণœ হয় না, বৈষম্য তৈরি হয় না। সরকারি কর্মচারী হিসেবে আমাদের মনে রাখতে হবেÑ একদিন আমাদের জবাবদিহি করতে হবে, প্রধান বিচারপতি হলেও পার পাওয়া যাবে না।
আলোচনা শেষে জ্বালানি বিভাগের বিভিন্ন কোম্পানির পক্ষ থেকে জুলাই শহিদ ১৬টি পরিবার ও একজন আহতের মাঝে সম্মাননা স্মারক হিসেবে এক লাখ টাকা করে মোট ১৭ লাখ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান জুলাই আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে দেশ গঠনে কাজ করার আহ্বান জানান।
আপনার মতামত লিখুন :