প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস পর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-কুয়েটে ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি তাদের চলমান কর্মসূচি স্থগিত করায় ক্লাস শুরু করা নিয়ে সংকটের অবসান হলো। এতে দীর্ঘদিন পর ক্লাস ও পরীক্ষা শুরুর ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
গতকাল সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি তাদের চলমান আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে। এরপর দুপুরে কুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক মো. মাকসুদ হেলালী আজ মঙ্গলবার থেকে ক্লাস শুরুর নির্দেশ দেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষক ও ছাত্ররা একমত হয়েছে, ক্লাস ও তদন্ত কার্যক্রম একসঙ্গে চলবে। এ জন্য মঙ্গলবার (আজ) থেকে ক্লাস শুরুর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, উপাচার্যের আশ্বাসে আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। প্রশাসন ক্লাস শুরুর ঘোষণা দিলে শিক্ষকরা যোগ দেবে।
এর আগে গত দুই দিন ধরে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, সাধারণ শিক্ষার্থী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনীর কর্মকর্তা এবং স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি বন্ধকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। ওই দিন রাতে উপাচার্যের বিরুদ্ধে হামলাকারীদের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা। দাবি না মানায় ১৯ ফেব্রুয়ারি বেলা দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনগুলোয় তালা ঝুলিয়ে দেন।
পরবর্তী সময়ে ২১ ফেব্রুয়ারি কুয়েটের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে উপাচার্য বাসভবনে প্রবেশ করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে বাসভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঈদুল ফিতরের ছুটির পর ১৪ এপ্রিল সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। ৩৭ জনকে বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ভিসির পদত্যাগ দাবি করে ওই দিন থেকে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে ২১ এপ্রিল থেকে অনশন শুরু করেন ৩২ শিক্ষার্থী।
কুয়েটের এ সংকট সমাধানে গত ২৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) একটি প্রতিনিধি দল এবং শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার কুয়েটে যান। সেখানে শিক্ষা উপদেষ্টার দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙেন। ওই দিন রাতেই কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শেখ শরীফুল আলমকে অপসারণের প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানায় সরকার।
আপনার মতামত লিখুন :