রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গতকাল বুধবার তীব্র যানজট তৈরি হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধসহ বেশ কয়েকটি বিষয় এই যানজটের কারণ বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, গতকাল সায়েন্স ল্যাবে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক আটকে বিক্ষোভ করেন। পল্টনে রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি আছে। এ ছাড়া ছুটির পরদিন হাওয়ায় সড়কে যানবাহনের চাপ আছে; পাশাপাশি সড়কের বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দ থাকায় যানজটের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এ ছাড়া বেলা পৌনে ১টার দিকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেন। এতে সায়েন্স ল্যাব মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়; ভোগান্তি সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, শিক্ষার্থীরা আধা ঘণ্টা পর সড়ক ছাড়েন। এরপর যান চলাচল শুরু হয়।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে গতকাল ঢাকায় ‘বিজয় র্যালি’ করে বিএনপি। এই কর্মসূচি ঘিরে পল্টনসহ আশপাশের এলাকায় যানজট তৈরি হয়। এদিন যাত্রীর চাপ বাড়ায় গণপরিবহনের সংকটে অনেককে প্রচ- ভিড় ঠেলে বাসে উঠতে দেখা গেছে। কর্মজীবী মানুষ, অফিসগামী যাত্রী ও পরীক্ষার্থীরা সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে হিমশিম খেয়েছেন। গাড়ি না পেয়ে অনেকে পায়ে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হতে দেখা গেছে।
রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, সায়েন্স ল্যাব, মিরপুর রোডের বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। এদিকে মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব, গুলিস্তানের দিকেও যানজটে নাকাল হয় মানুষ।
বেসরকারি চাকরিজীবী আলিম বলেন, ‘দুপুরের দিকে অফিস ছিল। অন্যান্য দিনের মতো একই সময়ে বাসা থেকে বের হয়েছিলাম। কিন্তু বাস পাওয়া যাচ্ছিল না। সঙ্গে আবার বৃষ্টি ছিল। তাই খুব কষ্ট করে অফিসে পৌঁছেছি।’
আসাদগেটে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করা যাত্রী বিপুল মিয়া বলেন, ‘কয়েকটা বাস সামনে দিয়ে গেল। ভেতরে ওঠার মতো পরিস্থিতি দেখলাম না। গুলিস্থানে যেতে হবে, গাড়িতে উঠতে না পারলে হেঁটেই যেতে হবে।’
এদিকে, সড়কে প্রচ- চাপের প্রভাব পড়ে মেট্রোরেলেও। ফার্মগেট, পল্লবী, মিরপুরসহ বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন অন্য দিনের চেয়ে গতকাল বেশি ছিল। ফার্মগেট স্টেশনে টিকিটের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রী মিলন আলী বলেন, রাস্তায় জ্যাম দেখে মেট্রোরেলের জন্য এলাম। কিন্তু এখানে এসেও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
এদিন রামপুরা থেকে কাকরাইলের উদ্দেশে রওনা হওয়া যাত্রী জাকির হোসেন বলেন, ‘সারা রাস্তায় গাড়ি আটকানো। পরে মৌচাক মোড়ে গিয়ে রিকশা নিয়ে চলে যাই।’ তার ক্ষোভ, ‘এই ভোগান্তির শেষ কোথায়?’ ওই এলাকার আরেকজন যাত্রী বলেন, ‘জানতে পারি, বাড্ডার দিকে নাকি রাস্তা বন্ধ, এ জন্য হেঁটেই অফিসে যাচ্ছি।’
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মামুন মিয়া বলেন, গতকাল কয়েকটি কর্মসূচির কারণে সকাল ১০টা থেকেই রামপুরা-বাড্ডা রোডে যানবাহন চলাচলে এখন ধীরগতি হয়। লিংক রোডে বেলা ১১টার দিকে রাস্তা বন্ধ ছিল, যার কারণে আশপাশের সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। এ ছাড়া নয়াপল্টনে বিএনপির কর্মসূচি ছিল। এ কারণে সড়কে গাড়ির চাপ থাকে এবং সারা ঢাকায় কিছুটা যানজট তৈরি হয়।
পুলিশি বাধায় ‘ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও’ কর্মসূচি প-
এ ছাড়া পুলিশি বাধায় প- হয়ে গেছে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) ‘ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও’ কর্মসূচি। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গুলশান থানার এডিসি জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি নামে একটি সংগঠন ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও করতে নতুন বাজারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। এ সময় তাদের বাড্ডা লিংক রোডে আটকে দেওয়া হয়। পরে তারা আর আগায়নি। পরিস্থিতি পরে শান্ত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি পালন বাস্তবায়নে রামপুরা থেকে জাগপার কয়েকশ নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে রওনা হন। মিছিলে ব্যানার, ফেস্টুন ছিল প্রত্যেক কর্মীর হাতে। তাদের যাওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ বাড্ডা লিংক রোডে অবস্থান নিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়। এ সময় লিংক রোডসহ আশপাশের সব এলাকায় সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে যানজট স্বাভাবিক হয়।
আপনার মতামত লিখুন :