রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল (শেবাচিম) হাসপাতাল প্রশাসন। বাইরের ডায়াগনস্টিক কর্মী ও দালাল দেখামাত্র গ্রেপ্তার করাসহ হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপেশাদার আচরণ প্রতীয়মান হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়। বিশেষ করে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অবহেলা এবং ইউনিট বা কোনো ওয়ার্ড অপরিচ্ছন্ন দেখা গেলেও সংশ্লিষ্টদের বেতন কর্তনের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শেবাচিম হাসপাতালের অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মহিউদ্দিন রনির সরব আন্দোলনের মুখে শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত মঙ্গলবার এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।
জানা গেছে, ২০২২ সালে রেলওয়ের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলে ব্যাপক আলোচিত মহিউদ্দিন রনি সপ্তাহ দুয়েক আগে সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে বরিশালে আসেন এবং শেবাচিম হাসপাতালে রোগী ভোগান্তি রোধকল্পে একাধিক কর্মসূচির আয়োজন করেন। বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক এই শিক্ষার্থীর ডাকে রাস্তায় নেমে আসেন সাধারণ মানুষ। সেখান থেকে শেবাচিম হাসপাতালকে অনিয়ম-দুর্নীতি ও দালালমুক্তকরণে জোরালো দাবি ওঠে।
শেবাচিম সূত্র নিশ্চিত করেছে, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট রনির অভিযোগের প্রেক্ষাপটে গত ৩ আগস্ট হাসপাতালে ট্রলি বাণিজ্যের হোতা ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম ও তার ছেলে অফিস সহায়ক বায়েজিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এর পরেও বিভিন্ন অভিযোগে রনির আন্দোলন অব্যাহত থাকলে গত সোমবার জরুরি সভা ডাকতে বাধ্য হয় শেবাচিম হাসপাতাল প্রশাসন। সেখান থেকেই অনিয়ম রোধে হার্ডলাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ওই বৈঠকে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউল মুনীরের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন কলেজের উপাধ্যক্ষ ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আনোয়ার হোসেন বাবলু, এনেসথেসিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম এবং সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আহসান হাবিবসহ সব বিভাগের বিভাগীয় প্রধ নেরা।
বৈঠকে অংশ নেওয়া শেবাচিম হাসপাতালের একজন চিকিৎসক রূপালী বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, পরিচালক রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দেওয়া এবং হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ ওষুধ কোম্পনির প্রতিনিধিদের হাসপাতাল এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ, বাইরের ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোনো প্রতিনিধি বা রোগীর দালালকে হাসপাতালে পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা এবং অতিরিক্ত রোগীর চাপ থাকায় পুরাতন ভবনে বিভাগ সম্প্রসারণ করা। এছাড়া অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ওয়ার্ড বা ইউনিট অপরিচ্ছন্ন থাকলে সংশ্লিষ্ট পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ বেতন কর্তনের নীতিও চালু করা হয়।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বৈঠকের পরপর পুলিশ ও আনসার বাহিনী হাসপাতালের মেডিসিন ভবন থেকে জনৈক তপু সিকদার নামের ডায়াগনস্টিক কর্মীকে আটক করে। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারী তপুকে পরে কোতয়ালি মডেল থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
শেবাচিম হাসপাতালে অনিয়ম বন্ধ করাসহ রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চতকরণে কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ বরিশালবাসীর মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। এর মধ্য দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন বরিশালের সন্তান আন্দোলনকর্মী মহিউদ্দিন রনি। তবে পরিচালক সেনা কর্মকর্তা ডা. এ কে এম মশিউল মুনীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দমিয়ে রাখাসহ শেবাচিমকে ঢেলে সাজাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন রয়েছে।
এ বিষয়ে পরিচালকের বক্তব্য হচ্ছে, শেবাচিম হাসপাতালে চাকরি করতে হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবাইকে আইন মানতে হবে। কারও ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :