- নিরীহ মানুষকে ধরে এনে টাকা আদায় করতেন
- মারধরের শিকার হয়ে মামলা করেন আরেক ছাত্রদল নেতা
- চুল কেটে টাকা না দিয়ে উল্টো চাঁদা দাবি, না দেওয়ায় সেলুনে তালা
- অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতাকে বহিষ্কার, পরে ওই নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩
ময়মনসিংহের তারাকান্দায় হিজবুল আলম জিয়েস নামে এক ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতার আয়না ঘরের সন্ধান মিলেছে। সেই আয়না ঘরে সাধারণ মানুষকে ধরে এনে বেধড়ক মারধরের পর জিম্মি করে টাকা আদায় করত। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি সামনে আসে। এরপর তার একের পর এক অপকর্ম ও চাঁদাবাজির বিষয় সামনে আসতে শুরু করে।
এসব ঘটনায় সমালোচনার মুখে গত রোববার রাতে জিয়েসের দুই সহযোগী রাফি এবং আব্দুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলার পর গত সোমবার রাত ৯টার দিকে প্রধান আসামি হিজবুল আলম জিয়েসকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ছাত্রদল নেতা হিজবুল আলম জিয়েস বানিহালা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও মাঝিয়ালি গ্রামের মঞ্জুরুল ইসলামের ছেলে। ৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজিসহ নানা কর্মকা-ে বেপরোয়া হয়ে ওঠে জিয়েস।
গত ৮ আগস্ট শনিবার বিকেলে জিয়েস মাঝিয়ালি বাজারে চুল কেটে টাকা না দিয়ে উল্টো দোকানি হক মিয়ার কাছে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় সেলুন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে সেলুনে তালাও লাগিয়ে দেয়। এ সময় হক মিয়ার বড় ভাই লাক মিয়াকেও তার দোকানে গিয়ে মারধর করা হয়।
ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক মামুন সরকারের আশ্বাসে রোববার বিকেলে সেলুন খোলেন হক মিয়া। পরে সন্ধ্যার দিকে তাকে মারধর করে জিয়েস। হক মিয়া বিষয়টি মামুন সরকারকে জানালে সে ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে তাকেও পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়।
এ ঘটনায় গত সোমবার দুপুরে তারাকান্দা থানায় বাদী হয়ে জিয়েসকে প্রধান করে অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন মামুন সরকার।
ছাত্রদল নেতা মামুন সরকার বলেন, ছাত্রদল তারেক রহমানের আদর্শে গড়া সংগঠন। আর সেই সংগঠনের পদ ব্যবহার করে জিয়েস ৫ আগস্টের পর থেকে চাঁদাবাজি, তার টর্চার সেলে সাধারণ মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন, মাদক সেবন এমন কোনো অপরাধ নেই যে সে করে নাই। চুল কেটে নাপিতকে টাকা না দিয়ে উল্টো চাঁদা দাবি করে। এটা ছাত্রদলের আদর্শ পরিপন্থি। তার প্রতিবাদ করায় আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর আহত করেছে। তাই বিচারের প্রত্যাশায় মামলা করেছি।
নির্যাতনের শিকার হক মিয়া বলেন, চুল কাটার পর ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে জিয়েস। টাকা না দিলে মারধর করে দোকান থেকে বের করে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে মামুন ভাইয়ের কথায় দোকান খুললে পুনরায় আমাকে এবং মামুন ভাইকেও আঘাত করে।
জানা গেছে, জিয়েস নিজের পুকুর পাড়ে একটি টিনের ঘরে গড়ে তুলে আয়নাঘর তৈরি করেছে। সেই ঘরে সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে। সম্প্রতি এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, এক যুবককে জিয়েসের সহযোগী রাফি এবং আব্দুল্লাহ মারধর করছে। ওই যুবকের গলায় অস্ত্র ধরে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। পরে চাঁদার টাকা দিতে রাজি হলে তাকে ছাড়া হয়।
জিয়েসের নির্যাতনের শিকার জুয়েল ও রাসেল বলেন, জিয়েস প্রভাব খাটিয়ে তাদের কাছে টাকা পাবে মর্মে ভিডিও স্বীকারোক্তি আদায় করতে মারধর করে। প্রাণনাশের ভয়ে তারাও স্বীকারোক্তি দেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু তাহের বলেন, জিয়েস সবসময় নেশার মধ্যে থাকে। বিভিন্ন সময় সে আমাকেও হুমকি দিয়েছে। তার টর্চার সেল রয়েছে। সবকিছু নির্মুল করে তাদের সর্বোচ্চ বিচার করা হোক।
তারাকান্দা থানার ওসি মুহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, অভিযোগ পেয়ে থানায় মামলা নেওয়া হয়েছে। ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকা দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। সোমবার রাতে গ্রেপ্তার হওয়া জিয়েসকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে হাজির করা হবে। এসব ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে হিজবুল আলম জিয়েস বানিহালা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছে। সে গ্রেপ্তারের পর সোমবার রাতে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন তালুকদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে তার পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন