বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে (সাকা চৌধুরী) বিচারিক হত্যা বা জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে। তিনি নির্দোষ ছিলেন, বিষয়টি প্রমাণের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন তার বড় ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। সাকা চৌধুরীর পক্ষে সাক্ষী দেওয়ার জন্য বিদেশ থেকে চারজন আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ষড়যন্ত্র করে তাদের দেশে আসতে বাধা দিয়েছিল বলে জানান তিনি। এই বাধা দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ এবং ওই সময়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যেসব কর্মকর্তা দায়ী, তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে সাকা চৌধুরীর পরিবার।
সাক্ষীদের বিদেশ থেকে আসতে না দেওয়ার সাইফার মেসেজসহ অন্যান্য মেসেজ উদ্ধার ও এর সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশের দাবিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে লিগ্যাল নোটিশ দেবে তার পরিবার। আগামী রোববার এই নোটিশ দেওয়ার কথা রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ধানমন্ডির বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সাকা চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা। এ সময় তার স্ত্রী, দুই ছেলে এবং মেয়ে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে হুম্মাম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাবা (সাকা চৌধুরী) পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। এ বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে চারজন বিদেশি সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে আসার জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন। তারা হলেন- মুহিব আরজুমান খান, আম্বার হারুন সায়গাল, ইসহাক খান খাকওয়ানী এবং রিয়াজ আহমেদ নূহ। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপন বার্তার মাধ্যমে ওই চারজন সাক্ষীকে দেশে আসতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। তাদের ভিসা প্রাপ্তিতেও বাধা দেওয়া হয়েছিল।
সেই সাক্ষীদের আসতে না দেওয়ার পেছনে তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু সাইফার মেসেজ জড়িত ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে অনেক মানুষ এখন কথা বলতে, সাহস দেখাতে শুরু করেছেন। অনেকেই প্রমাণ নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন। এগুলোর মধ্যে একটা বড় জিনিস আমাদের হাতে পৌঁছেছে। এটি হলো, বাংলাদেশের ফরেন মিনিস্ট্রি যখন বিদেশি দূতদের কাছে কোনো মেসেজ পাঠায়, এ মেসেজগুলোকে সাইফার মেসেজ বলা হয়। এ সাইফারগুলোয় বেশির ভাগ সময় কোডেড সিক্রেট থাকে। এ ধরনেরই একটা সাইফার মেসেজ আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে।’
হুম্মাম বলেন, ‘আমার বাবাকে তারা কোনোভাবেই ফেয়ার জাস্টিসের ধারেকাছেও নিতে পারেনি। আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। এটা একটা জুডিশিয়াল মার্ডার ছিল এবং এটার সঙ্গে আওয়ামী রেজিমের সরকার সরাসরি জড়িত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বর্তমান ফরেন মিনিস্ট্রিকে একটি আইনি নোটিশ পাঠাব। আমরা তাদের কাছে দাবি করছি, এ সাইফার মেসেজগুলোকে ডি-ক্লাসিফাই (উন্মুক্ত) করে দেওয়া হোক। আমার বাবার ট্রায়ালের সঙ্গে জড়িত যত সাইফার মেসেজ আছে, প্রতিটাকেই যেন ডি-ক্লাসিফাই করে দেওয়া হয় এবং সেগুলোকে যেন আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।’
হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, হাসিনার লক্ষ্য ছিল তার বিরোধীদের সরিয়ে দেওয়া। গুম, খুন, হত্যা করে টিকে থাকাই ছিল তার উদ্দেশ্য। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীও হাসিনার আক্রোশের স্বীকার- বলে উল্লেখ করেন হুম্মাম।
সে সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) কীভাবে কাজ করতÑ সেটিও স্পষ্ট নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০টি চার্জের মধ্যে চারটিতে সাক্ষী হাজির করতে পেরেছিল তার বাবার বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে সাফাই সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার কাছে ওই বিচারক অনুমতি চেয়েও পাননি। আব্বার মামলা চলাকালীন স্কাইপ কেলেঙ্কোরির কাহিনি বের হয়েছিল। ওই কেলেঙ্কারির অডিওতে শোনা যাচ্ছিল, তখনকার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিমের কণ্ঠ। নাসিম বলছিলেন, ‘সাকাকে যদি ঝুলিয়ে দিতে পারি, তাহলে আমাকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে, ওই জায়গা ফাঁকা আছে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন