শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রেজাউল করিম খোকন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম

অভাবনীয় সাফল্য পেলেন কল্যাণী

রেজাউল করিম খোকন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম

অভাবনীয় সাফল্য পেলেন কল্যাণী

বক্স অফিসে ঝড়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ দর্শকের প্রশংসা আর সমালোচকদের ইতিবাচক রিভিউ, গত ২৮ আগস্ট মুক্তির পর থেকে এর সবই পেয়েছে মালয়ালম সিনেমা ‘লোকা চ্যাপ্টার ১: চন্দ্রা’। কেবল দক্ষিণ ভারত নয়, গোটা ভারতীয় সিনেমাপ্রেমীর দৃষ্টি এখন ডোমিনিক অরুণ পরিচালিত এই সুপারহিরো সিনেমাটির দিকে। কল্যাণী প্রিয়দর্শন অভিনীত এই মালয়ালম সুপারহিরো সিনেমা বক্স অফিসে নতুন রেকর্ড গড়ে চলেছে। মুক্তির ১৫ দিনের মাথায় সিনেমাটির বিশ্বব্যাপী আয় পেরিয়ে গেছে ১৫০ কোটির ঘর, যা ইতোমধ্যেই বেশ কিছু মালয়ালম ও তামিল হিট সিনেমার লাইফটাইম আয়ের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।

প্রথম সপ্তাহ ভারতে এর নিট আয় দাঁড়িয়েছে ৫৪ দশমিক ৩৫ কোটি রুপি। সাফল্যের নানা ধাপ অতিক্রম করার মাধ্যমে প্রমাণ করে সিনেমাটির জনপ্রিয়তা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আগামী দিনগুলোতে আরও বড় সাফল্যের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। বিদেশেও সিনেমাটি দারুণ ব্যবসা করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে আয় করেছে প্রায় ৭ মিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে আট দিনে বিশ্বব্যাপী আয় ছাড়িয়েছে ১২০ কোটি রুপি। আরেকটি বড় অর্জন হলো- দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসে নারী-নেতৃত্বাধীন সিনেমার মধ্যে ‘লোকাহ চ্যাপ্টার ১: চন্দ্রা’ এখন শীর্ষে।
এ পথে কল্যাণী প্রিয়দর্শনের সিনেমা পেছনে ফেলেছে কীর্তি সুরেশের মহানতি (৮৫ কোটি রুপি) ও অনুশকা শেঠির অরুন্ধতীকে (৬৯ কোটি রুপি)। রেকর্ডের পর রেকর্ড সৃষ্টিকারী নতুন এই সিনেমাটি মাত্র এক সপ্তাহেই অতিক্রম করেছেমালয়ালম হিট মার্কো (১১০ কোটি) ও এআরএম (১০৭ কোটি)-এর আয়। এমনকি ধানুশ ও নাগার্জুনা অভিনীত তামিল-তেলেগু দ্বিভাষিক সিনেমা কুবেরা (১১৫ কোটি)-কেও পেছনে ফেলেছে। তারকাদের প্রশংসা ডোমিনিক অরুণ পরিচালিত ও দুলকার সালমান প্রযোজিত এই সিনেমা আসলে ওয়েফেয়ারার সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের প্রথম কিস্তি। সিনেমার প্রশংসায় ইতোমধ্যেই মুখ খুলেছেন বলিউড তারকারা।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ইনস্টাগ্রামে পোস্টার শেয়ার করে লিখেছেন, ‘ভারতের প্রথম নারী সুপারহিরো হাজির। অভিনন্দন দুলকার ও পুরো টিমকে। মালয়ালমে যেভাবে জয় করে নিয়েছে, এবার হিন্দিতেও হাজির। ওয়াচলিস্টে যোগ করে ফেলেছি, আপনারা করেছেন তো?’

আলিয়া ভাট লিখেছেন, ‘পুরাণ কাহিনি আর রহস্যের দারুণ মিশেল। এই ভালোবাসা প্রাপ্যই ছিল।’ অক্ষয় কুমারও এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘কল্যাণী প্রিয়দর্শনের অভিনয় নিয়ে দারুণ কথা শুনছি। হিন্দি সংস্করণ মুক্তির জন্য শুভেচ্ছা।’

‘চন্দ্রা’ সিনেমায় কল্যাণীকে দেখা গেছে চন্দ্রা চরিত্রে এক শক্তিশালী নারী হিসেবে। যিনি পুরাণ কাহিনি ও আধুনিক বাস্তবতার মিশ্র জগতে পথ খুঁজছেন। ৩০০-৪০০ কোটি রূপি বাজেটে নির্মিত বড় বড় ব্যানারের স্পাই ইউনিভার্সের বড় বড় সুপারস্টারদের সিনেমা যখন সিনেমার লগ্নি ফেরত আনতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে তখন স্বল্প বাজেটে নির্মিত মালায়লাম সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি সাহসিকতার সঙ্গে নিজস্ব ইউনিভার্সের সূচনা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সিনেবিশ্লেষকদের।

মাত্র ৩০-৩৩ কোটি বাজেটে নির্মিত সিনেমাটি মুক্তির পহেলা সপ্তাহে বক্স অফিসে আয় করেছে প্রায় ১০০ কোটি রুপিরও বেশি এবং হলমুখি দর্শকদের ভিড়ে এখনো প্রতিটি শো হাউজফুল যাচ্ছে। ‘লোকাহ-চ্যাপ্টার ওয়ান: চন্দ্রা’ সুপারহিরো সিনেমা হিসেবে এটি হচ্ছে ভারতের প্রথম লেডি সুপারহিরো স্টোরি। সিনেমাটিতে হাই অকটেন্ট ভিজ্যুয়াল এবং দুর্দান্ত মিউজিকে নজর কেড়েছেন অভিনেত্রী কল্যাণী প্রিয়াদর্শন। ‘লোকাহ’ সিনেমাটি পৌরাণিক কাহিনি, বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ও লোক কাহিনির উপাদানকে অত্যন্ত সৃজনশীলভাবে উপস্থাপন করেছে। গল্পে মিথ, রহস্য এবং দৃশ্যমান বিস্ময় ভক্তদের মাঝে নতুন এক উম্মাদনা তৈরি করেছে। সুপারহিরো সিনেমা হিসেবে স্বল্প বাজেটে নির্মিত হলেও সিনেমাটি গল্পের প্রয়োজন অনুসারে গ্রান্ড স্কেলের ফ্যান্টাসি ও ভিজ্যুয়ালাইজেশনে চোখ ধাঁধানো সব দৃশ্যপট তুলে ধরেছে।

সিনেসংশ্লিষ্টদের দাবি, এটি কেবল আরেকটি সিনেমা নয় বরং মালায়ালাম সিনেমার প্রথম পূর্ণাঙ্গ সুপারহিরো মহাবিশ্বের সূচনা। লোকাহ সিনেমাটিক ইউনিভার্সের প্রথম কিস্তি হিসেবে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে কল্যাণী প্রিয়দর্শনের পারফরম্যান্স সবকিছু ছাপিয়ে অসাধারণ একটি ব্যাপার হয়ে উঠেছে। ‘লোকাহ-চ্যাপ্টার ১: চন্দ্রা’ সিনেমাটি সমালোচক ও দর্শকের কাছ থেকে পেয়েছে ইতিবাচক সাড়া। এই সুপার হিরো ইউনিভার্সের আরও ৪টি পর্ব আসবে আগামীতে। তবে সেখানে চন্দ্রা চরিত্রটি থাকছে কিনা সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না এখন পর্যন্ত। কল্যাণী দর্শক মনে আলাদা ক্রেজ সৃষ্টি করেছেন তুমুলভাবে।

কল্যাণী প্রিয়দর্শন ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। এখন তার বয়স ৩২ চলছে। দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে মালয়ালম, তেলুগু এবং তামিল চলচ্চিত্রে অভিনয় করে চলেছেন তিনি বিগত কয়েক বছর ধরে। তার অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘চিত্রালাহারি’, ‘রনরঙ্গম’, ‘হিরো’, ‘পুথাম পুধু কালাই’, ‘মানাধু’, ‘মারাক্কার’, ‘থাল্লুমালা’ প্রভৃতি।

নিউইয়র্ক সিটির পার্সসন স্কুল অব ডিজাইন থেকে আর্কিটেকচার ডিজাইনিংয়ে স্নাতক গ্রহণের পর বলিউড সিনেমা ‘কৃষ ৩’ এবং দক্ষিণী ‘ইরু মুগান’-এর প্রোডাকশন ডিজাইনে একজন সহকারী হিসাবে কাজ দিয়ে শুরু করেছিলেন ক্যারিয়ার। ২০১৭ সালের তেলুগু চলচ্চিত্রের ‘হ্যালো’তে অভিনয়ের মাধ্যমে তার অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে, যার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ নবাগতা অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার দক্ষিণ এবং ৭ম দক্ষিণ ভারতীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিলেন।

কল্যাণী প্রখ্যাত দক্ষিণী চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রিয়দর্শন এবং অভিনেত্রী লিসি দম্পতির বড় সন্তান। দুই ভাই-বোনের মাঝে কল্যাণী বড়। ২০১৪ সালে তার বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। কল্যাণী তার স্কুলের প্রাথমিক পড়াশোনা চেন্নাইয়ের লেডি আন্দাল এবং পরে সিঙ্গাপুরে করেছেন, যেখানে তিনি গ্রুপ  থিয়েটারের সঙ্গে কাজ করেন। স্কুল পর্ব শেষ করার পরে তিনি নিউইয়র্ক সিটির পার্সসন স্কুল অব ডিজাইন থেকে আর্কিটেকচার ডিজাইনিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এই সময়েও তিনি মঞ্চ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ভারতে ফিরে তিনি পন্ডিচেরির আদিশক্তি থিয়েটারে একটি অভিনয় কর্মশালায় অংশ নেন। তিনি  প্রোডাকশন ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করলেও পরে তেলুগু সিনেমা ‘হ্যালো’ দিয়ে অভিনয়ের সূচনা করেছিলেন। সিনেমাটিতে অভিনয়ের জন্য তিনি ইতিবাচক সাড়া পেয়েছিলেন।

মালয়ালম সিনেমায় কল্যাণীর অভিষেক ঘটেছিল তার পিতা প্রিয়দর্শন পরিচালিত ২০২০ সালের প্রাগৈতিহাসিক যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র মারাক্কর: আরবিকাদালিন্তে সিংহাম দিয়ে। যদিও এই ভাষায় তার অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রটি ছিল পারিবারিক-নাট্য চলচ্চিত্র বারাণে আকাশ্যমুন্ডু।

আগামীতে কল্যাণী অভিনীত তামিল সিনেমা ‘জিনি’ এবং ‘মার্শাল’ মুক্তি পাবে। দক্ষিণী সিনেমায় কল্যাণীর অভিনয় জীবন ৭ বছরের হলেও এবারই প্রথম দারুণ চমক সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। এখন সবার মুখে মুখে তাকে নিয়ে আলোচনা চলছে। যারা আগে তার নাম শোনেনি কিংবা তার কোনো সিনেমা দেখেনি তারাও কৌতূহলী হয়ে উঠেছেন কল্যাণীর ব্যাপারে। দক্ষিণী সিনেমা তো বটেই, ইদানিং বলিউডের সিনেমাতে তাকে নিয়ে আসার কথা আলোচিত হচ্ছে। হয়তো খুব শিগগিরই বলিউডেও তার পদচারণা লক্ষ্য করা যাবে।

একসময় দক্ষিণী চিত্রনির্মাতা হিসেবে বলিউডে নিয়মিত সিনেমা পরিচালনা করেছেন প্রিয়দর্শন। তার সিনেমা একের পর এক সুপারহিট হয়েছে। সেই কৃতি, মেধাবী চিত্রনির্মাতা প্রিয়দর্শনের কন্যা কল্যাণী আজ নিজের যোগ্যতায় নতুন সেনসেশন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।

ভারতের মালায়ালাম সিনেমায় নতুন ইতিহাস গড়লেন কল্যাণী প্রিয়দর্শন। ‘লোকাহ: চ্যাপ্টার ১’ সিনেমার মাধ্যমে তিনি শুধু ভারতের প্রথম নারী সুপারহিরো চরিত্রে অভিনয় করেননি, সেই সঙ্গে বক্স অফিসেও ২০০ কোটির ক্লাবে পৌঁছানো প্রথম নারী অভিনেত্রী হিসেবে নাম লিখিয়েছেন রেকর্ডের খাতায়। নারী সুপারহিরো হয়ে অভাবনীয় সাফল্য পেলেন কল্যাণী।

২০১৭ সালে তেলুগু সিনেমা ‘হ্যালো’ দিয়ে অভিনয় শুরু করেন তিনি। এই আট বছরে হাতেগোনা কিছু তেলুগু, তামিল ও মালয়ালম সিনেমায় দেখা গেছে তাকে। শুরু থেকেই গল্প ও চরিত্রের ব্যাপারে ভীষণ চুজি তিনি। লোকাহ সিনেমার সাফল্যের মধ্য দিয়ে সেই ধৈর্যের ফল এতদিনে এসে পেলেন কল্যাণী।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!