বাংলাদেশ-ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৬টি দেশে ৫ দশমিক ৯ মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস। গতকাল রোববার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১১ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে এই কম্পন অনুভূত হয়। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশসহ চীন, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল এবং ভুটানেও এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। তবে এই ভূমিকম্পে তাৎক্ষণিকভাবে কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতি কিংবা হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি।
মার্কিন জরিপ সংস্থা ভূমিকম্পের তীব্রতা ৫ দশমিক ৯ মাত্রা বললেও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবীর বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ৫ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে বলে রেকর্ড আছে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৩৮০ কিলোমিটার দূরে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের উদলগুরি জেলার ঢেকিয়াজুলি। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার ভূগর্ভে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। তবে উৎপত্তি বেশি গভীরে না হওয়ায় ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলে তীব্র কম্পন অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, উৎপত্তিস্থলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৯। উৎপত্তিস্থলটি আসামের রাজধানী গুয়াহাটি থেকে দূরে আসাম ভ্যালি ও হিমালয়ের মাঝামাঝি। এটি মাঝারি থেকে ভারী মাত্রার ভূমিকম্প।
এদিকে জার্মানির ভূতাত্ত্বিক গবেষণা সংস্থা জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেস (জিএফজেড) বলছে, গতকাল উত্তর-পূর্ব ভারতে ৫ দশমিক ৭১ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার (৬ দশমিক ২১ মাইল) ভূগর্ভে।
এদিকে ভারতের আসামের ওই ভূমিকম্পের জেরে কোচবিহারসহ গোটা উত্তরবঙ্গে কম্পন অনুভূত হয়েছে। এ সময় উত্তরবঙ্গের পাহাড় এবং সমতলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। মৃদু কম্পন টের পাওয়া গিয়েছে কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গেও। আনন্দবাজারের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গতকাল বিকেল ৪টা ৪১ মিনিটে ভূমিকম্পটি হয়েছে। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৮।
ভূমিকম্পের জেরে ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর প্রাথমিকভাবে মেলেনি। তবে কম্পন টের পেতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। ভয়ে অনেকে বাড়ি ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন।
ভূমিকম্পের সময় আসামের রাজধানী গুয়াহাটির অনেক বাসিন্দা আতঙ্কে বাড়িঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন। সেখানকার স্থানীয় এক বাসিন্দা দেশটির সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, ‘মনে হচ্ছিল এই কম্পন কখনো থামবে না।’
এর আগে গত এপ্রিলে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এই ভূমিকম্প কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়। রিখটার স্কেলে ওই সময় কম্পনের মাত্রা ছিল ৪। ভূমিকম্পের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেককে পোস্ট দিতে দেখা যায়।
অন্যদিকে ইউরোপিয়ান-মেডিটেরানিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টারের (ইএমএসসি) তথ্য মতে, রিখটার স্কেলে ওই দিনের কম্পনের মাত্রা ছিল ৪। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল ভারতের আগরতলা শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার উত্তরে এবং বাংলাদেশের কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৬৮ কিলোমিটার উত্তরে। এর গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার।