দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি নারী হলেও জাতীয় সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব এখনো হতাশাজনকভাবে কম। এ অবস্থা পরিবর্তনে প্রস্তাবিত জুলাই সনদের খসড়ায় উল্লিখিত সংসদে বর্ধিত সংরক্ষিত ১০০ আসনে সরাসরি নির্বাচন নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে ‘নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম’। এ ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দাবি করেছে তারা।
গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানায় নারীর অধিকারবিষয়ক ১২টি সংগঠনের এ জোট।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সুস্মিতা রায় বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সংসদে নারীর সরাসরি নির্বাচিত প্রতিনিধির সংখ্যা সীমিত। বর্তমানে সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদে মাত্র ৫০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে; যা দলীয় মনোনয়নের ভিত্তিতে পূরণ হয়। ফলে নারীরা স্বাধীন রাজনৈতিক পরিচয়ে অগ্রসর হতে পারছেন না।
লিখিত বক্তব্যে তিনি ২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকেই নারীদের জন্য সংরক্ষিত ১০০ আসনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন নিশ্চিত করার দাবি জানান। রাজনৈতিক দলে ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন বাধ্যতামূলক করা ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে ধাপে ধাপে ৫০ শতাংশে উন্নীত করা এবং জুলাই সনদে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাব বিষয়ে সরাসরি নির্বাচন ও নির্বাচনি পদ্ধতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়ার দাবি করা হয়।
এ সময় রাজনৈতিক দল মনোনীত কিংবা স্বতন্ত্র সব নারী প্রার্থীর জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বিশেষ আর্থিক সহায়তা বরাদ্দের দাবি জানান বক্তারা।
ফোরাম সদস্য মাহিন সুলতান বলেন, নারীর নেতৃত্ব বিকাশের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। এ জন্য ২০২৬ সালের নির্বাচনে অন্তত ১০০ আসনে নারী প্রার্থীকে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
অ্যাকশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির অভিযোগ করেন, সংসদীয় রাজনীতিতে নারীর অবদান সব সময়ই গৌন রাখা হয়েছে। সমাজ, অর্থনীতি ও মুক্তিযুদ্ধে নারীর অসামান্য অবদান থাকলেও তা জাতীয় সংসদে প্রতিফলিত হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলো নারীর নেতৃত্ব তৈরিতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে নারী সংগঠক, শিক্ষাবিদ, গবেষক, আইনজীবী, সমাজকর্মীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সবার অভিন্ন মতামত ছিল যথাযথ নারী প্রতিনিধিত্ব ছাড়া প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।