ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বিভিন্ন পদে নির্বাচিত হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার তিনজন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ইমরান হোসাইন কার্যনির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেল থেকে। তিনি ৬ হাজার ২৫৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তিনি উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের কোনাঘাটা গ্রামের শামসু মিয়ার ছেলে। সংস্কৃত বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী শিমু আক্তার হল সংসদ থেকে কবি সুফিয়া কামাল হলে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬৫৫ ভোট পেয়ে এজিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি কুটি ইউনিয়নের জাজিয়ারা গ্রামের মো. আতিকুর রহমানের মেয়ে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্যানেল থেকে হল সংসদে ফিলোসফি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের মো. মোজাম্মেল হক স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ১৯৪ ভোট পেয়ে সমাজসেবা সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের গণকমোড়া গ্রামের আবু হানিফের ছেলে।
নির্বাচিত কেন্দ্রীয় সংসদের কার্যনির্বাহী সদস্য ইমরান হোসাইন বলেন, ‘বিজয়ী হয়ে খুবই ভালো লাগছে, আমার এখন প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া। পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকীকরণ যেমনÑ গ্রন্থাগার ও ল্যাব উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের গবেষণা সুযোগ বৃদ্ধি এবং আবাসন ও খাদ্যসুবিধা, হলের সিট বণ্টনে স্বচ্ছতা, মেস ও ক্যান্টিনে ভর্তুকি, আবাসনের নিরাপত্তা, পরিবহন ও অবকাঠামো, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রম এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার ও কল্যাণ নিয়ে কাজ করে যাব ইনশাআল্লাহ।’
হল সংসদে কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে এজিএস পদে নির্বাচিত শিমু আক্তার বলেন, ‘আমি হল সংসদে নির্বাচন করি এবং হলের সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্তির মাধ্যমে জয়ী হই, যার অভিব্যক্তি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমার প্রতি সবার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়ার মাধ্যমে। সে জায়গা থেকে আমি অঙ্গীকারবদ্ধ শিক্ষার্থীদের প্রতি। আমার ইশতেহারে দেওয়া প্রতিটি বিষয় যেমনÑ হলের খাবারের মানোন্নয়ন, নারী নিরাপত্তা, আবাসন সমস্যা, যাতায়াত সমস্যা নিয়ে আমি কাজ করব ইনশাআল্লাহ। শিক্ষার্থীদের সব যৌক্তিক দাবিদাওয়াই আমার কাজের জায়গা।’
ছাত্রদল প্যানেল থেকে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হল থেকে সমাজসেবা সম্পাদক পদে নির্বাচিত মোজাম্মেল হক বলেন, ডাকসুর অংশ হতে পারা নিঃসন্দেহে অনেক গৌরবের। আর সমাজসেবা সম্পাদক হিসেবে হলের প্রতিটি জায়গায় কাজ করার সুযোগ আছে। সুতরাং দায়িত্ব অনেক। সর্বোপরি আলহামদুলিল্লাহ। আমার হলে আমি দুই সপ্তাহের মধ্যেই স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা আনছি। তা ছাড়া আর্থিক সমস্যায় থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি খাবারের ব্যবস্থা করছি। পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা দিয়ে পাশে থাকছি। ভবিষ্যতে বৃহৎ পরিসরে আমার দলের সহায়তায় কাজ করতে চাই।
তাদের এমন সাফল্যে খুশি কসবার সব শ্রেণি-পেশার লোকজন। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে শিক্ষাঙ্গনÑ সব দিকেই চলছে নানান আলোচনা। আড়াইবাড়ী ইসলামিয়া সাঈদিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এবার ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ীদের মধ্যে আমাদের মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষার্থীও আছে, পাশাপাশি যে তিনজন কসবার সন্তান নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের জানাই অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। আশা করি তারা তাদের প্রতিশ্রুযতি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা ও নিরাপদ শিক্ষাঙ্গন বিনির্মাণে কাজ করে যাবে।’
কসবা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির শিবলী নোমানী বলেন, এটি অবশ্যই আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের যে, আমাদের কসবার তিনজন শিক্ষার্থী এবার ডাকসু নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। তাদের জন্য শুভকামনা থাকল।
কসবা উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সিরাজুল হক ইমু বলেন, আমাদের কসবার শিক্ষার্থীদের এমন অর্জন আমাদের মুগ্ধ করেছে। বিশেষ করে আমাদের ছাত্রদলের প্যানেল থেকে বিজয়ী মোজাম্মেল একজন মেধাবী শিক্ষার্থী এবং উদীয়মান তরুণ ছাত্রনেতা। আশা করি সে ডাকসুর গ-ি পেরিয়ে একসময় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে নেতৃত্ব দেবে। সব মিলিয়ে কসবা উপজেলার সর্বমহলেই বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এই ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ী তিন শিক্ষার্থী নিয়ে।