ঢাকা শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

৯ কৌশলে অ্যাকশন প্ল্যানে এসএমপি

আব্দুল আহাদ, সিলেট
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫, ১২:২৭ এএম
  • স্মার্ট ও নিরাপদ নগরে রূপান্তরের লক্ষ্য

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) সামনে এখন স্থির তিনটি লক্ষ্য। অপরাধ দমন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারÑ বড় দাগে এই তিন টার্গেট সামনে রেখে সিলেটকে একটি আধুনিক, স্মার্ট ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তাযুক্ত নগরীতে পরিণত করতে চায় পুলিশ। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগদান করে নতুন এই লক্ষ্য স্থির করে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করেছেন নবনিযুক্ত পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী।

গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেট মহানগরীর দায়িত্বভার কাঁধে নিয়ে পুরো টিমের সামনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন তার প্রধান লক্ষ্য। তিনি সিলেটকে নিয়ে যেতে চান নতুন উচ্চতায়। এই উদ্দেশ্যে তিনি একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন, যার মূল ভিত্তি হলো অপরাধ দমন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং জনগণের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তোলা।

কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সাথে আলাপকালে তার স্বপ্নের কথা জানান। যাকে তিনি ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ হিসেবে অভিহিত করেন। বলেন, ‘বর্তমান সময়ে পুলিশিংয়ের ধরন ব্যাপক পরিবর্তিত হয়েছে। তাই ঐতিহ্যগত পদ্ধতির পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার না করলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।’ তিনি জানান, শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে, যা অপরাধ ও যানজট পর্যবেক্ষণে সহায়তা করবে। পাশাপাশি, একটি মোবাইল অ্যাপ ‘জিনিয়া’ তৈরি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে নাগরিকরা জরুরি অবস্থায় পুলিশের সাথে দ্রুত ও সহজে যোগাযোগ করতে পারবেন।

অপরাধ নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স-নীতি গ্রহণের কথা উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, বিশেষ করে মাদক, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো হবে। মাদক নির্মূলের জন্য বিশেষ ইউনিট গঠন এবং সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

ট্রাফিক ও যানজটের সমস্যায়ও তার পরিকল্পনা স্পষ্ট। সিলেট শহরে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ পার্কিং ও যানজট বড় সমস্যা হিসেবে বিদ্যমান। অবৈধ পার্কিং বন্ধ করে নির্দিষ্ট পার্কিং জোন তৈরি করা হবে। স্মার্ট ট্রাফিক সিগন্যাল ও সেন্সর বসিয়ে যানজট নিয়ন্ত্রণে আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে বলে জানান এসএমপি কমিশনার।

নাগরিকদের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক উন্নয়নের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন কমিশনার। তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও জনগণের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ অনেক সহজ হবে।’ এ জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিউনিটি পুলিশ অফিসার নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে, যারা স্থানীয় মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করবে এবং সমাজসচেতনতা বাড়াবে।

দ্রুত সাড়া দেওয়ার জন্য র‌্যাপিড রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে, যারা জরুরি অবস্থায় মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে। পাশাপাশি পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধি ও আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মদক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।

এই কর্মসূচিগুলো নিয়মিত মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণ করা হবে। মাসিক ভিত্তিতে কমিটির মাধ্যমে কর্মপরিকল্পনার অগ্রগতি পর্যালোচনা ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা হবে।

কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী বলেন, সিলেটবাসী শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের অধিকার রাখে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশ প্রশাসনের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। তিনি বলেন, ‘আমরা সিলেটকে দেশের অন্যতম নিরাপদ ও আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। এ জন্য পুলিশের সঙ্গে জনসাধারণের সহযোগিতা প্রয়োজন।’

সিলেটবাসী আশা করছেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে শহরের নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে, অপরাধ কমে যাবে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। সিলেট হবে একটি মডেল স্মার্ট নগরী, যেখানে আধুনিক প্রযুক্তি ও মানবিক পুলিশিংয়ের সমন্বয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকবে।

সম্প্রতি সিলেটে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় কমিশনার আরও জানান, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সিলেটবাসীর জন্য একটি নিরাপদ, আধুনিক এবং জনগণের কাছে স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল পুলিশি সেবা নিশ্চিত করা। এ জন্য আমরা অপরাধ প্রতিরোধে প্রো-অ্যাকটিভ পুলিশিং (প্রতিক্রিয়া না দিয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা) কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।’

তিনি আরও জানান, নগরের প্রধান নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ যেমনÑ ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদকপ্রবাহ, কিশোর গ্যাং, যানজট ও সাইবার ক্রাইম মোকাবিলায় একযোগে কাজ করা হবে। ‘আমাদের জিরো টলারেন্স-নীতি থাকবে, কোনো অপরাধ ছাড় দেওয়া হবে না। অপরাধী যেকোনো অবস্থায় আইনের আওতায় আনা হবে’, বলেন তিনি।

ট্রাফিক ও যানজট নিরসনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে অবৈধ যানবাহন চলাচল ও অবৈধ সিএনজিস্ট্যান্ড বন্ধ করা হবে। ‘শহরের যানজট কমাতে পরিকল্পিত এবং নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা হবে।’ তিনি জানান, সিলেট মহানগরকে যানজটমুক্ত  রাখার জন্য নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা,  রেজিস্ট্রেশনবিহীন/ভুয়া নম্বর প্লেট যুক্ত কোন যানবাহন সিলেট মহানগরীতে চলাচল করতে পারবে না। অনুমোদিত স্ট্যান্ডে নির্দিষ্টসংখ্যক সিএনজিচালিত থ্রিহুইলারের অধিক যানবাহন রাখা যাবে না। অননুমোদিত স্ট্যান্ডে পার্কিং করা যাবে না।

কমিশনার জানান, সদ্য সম্পন্ন অভিযানে মাত্র দুই দিনে ৭৮ জন অপরাধীকে আটক করা হয়েছে এবং এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ অপরাধ নির্মূল না হয়।

সিলেটবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সিলেটের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা একসঙ্গে কাজ করলে সিলেট হবে দেশের সবচেয়ে নিরাপদ ও আধুনিক স্মার্ট নগরী।’