ঢাকা সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বিকল্প বিনোদনে ডিজিটাল  প্ল্যাটফর্মে শিশুরা, বাড়ছে ঝুঁঁকি

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ১১:৪৯ পিএম

ডিজিটাল প্লাটফর্মে (ভার্চুয়াল জগৎ) শিশুদের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, বিকল্প বিনোদনের সুযোগ না থাকায় শিশু-কিশোররা মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তারা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। যা তাদের স্বাভাবিক মেধা বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাই জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবারসহ সবাইকে সচেতন হতে হবে।

গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘স্পিক আপ; ইউ-সিএসও’ প্রকল্পের সূচনা অনুষ্ঠানের এসব কথা বলেন তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় উন্নয়ন সংস্থা ‘টেরে ডেস হোমস্ নেদারল্যান্ডস’ (টিডিএইচ-এনএল), আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স (বিটিএস) ও ইনসিডিন বাংলাদেশ আয়োজিত ওই সংলাপে সভাপতিত্ব করেন টিডিএইচ-এনএল বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার নজরুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ টেলি কমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. সাইফুল হাসান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ মিশনের টিম লিডার এনরিকো লরেনজো, ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী, বিটিএস’র জাহিদ হোসেন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তাহমিনা বেগম প্রমুখ। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, প্রতিনিয়ত শিশু-কিশোররা ডিজিটাল প্লাটফর্মের ওপর নির্ভার হয়ে পড়ছে। কারণ আমরা তাদের বিকল্প দিতে পারছি না। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের শিশু-কিশোরদের অবাধ বিচরণের কারণে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অভাবে নানা ধরনের হয়রানি বাড়ছে। এই অবস্থায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মতামত প্রদানের স্বাধীনতা এবং শিশুদের অনলাইন হয়রানি ও নির্যাতনের ঝুঁকি হ্রাসে যুবসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। সুশীল সমাজের সংগঠনের সাথে কর্ম-সম্পর্ক নির্মাণের মাধ্যমে স্থানীয় সুরক্ষা কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম বলেন, শিশু ও যুবদের ডিজিটাল নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। যাতে তাদের অনলাইনে অংশগ্রহণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তথ্য উপস্থাপন ও আইনগত সংস্কারকে উৎসাহিত করতে হবে, যাতে জবাবদিহিতা ও অনলাইন নিরাপত্তা কাঠামো উন্নত হয়। এক্ষেত্রে সরকার, বেসরকারি খাত, গণমাধ্যম ও কমিউনিটির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। শিশু ও যুব, নাগরিক সংগঠন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সরকারি কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী, অভিভাবক, কমিউনিটিসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। 

অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্যে বলা হয়, ‘স্পিক আপ; ইউ-সিএসও’ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ১২ থেকে ২৪ বছর বয়সি শিশু ও যুবদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা ও উন্নীত করা, বিশেষত ডিজিটাল পরিসরে। প্রকল্পে অনলাইনে যৌন শোষণ ও নির্যাতন, সাইবার বুলিং, ভুল তথ্য প্রচার ও হয়রানির মতো ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবিলার পাশাপাশি লিঙ্গ সমতা ও অন্তর্ভুক্তির ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য হলো, নাগরিক সংগঠনগুলোর ক্ষমতায়ন করা, যাতে তারা অনলাইনে তরুণদের অধিকারের সমর্থক ও রক্ষক হিসেবে কাজ করতে পারে। তাদের কারিগরি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে, নীতিগত সহায়তার মাধ্যমে শিশু ও যুবদের নেতৃত্বে একটি অধিকারভিত্তিক আলোচনার পরিবেশ গড়ে তুলতে পারে। যেখানে প্রান্তিক, প্রতিবন্ধী ও লিঙ্গ বৈচিত্র্যসম্পন্ন শিশু ও যুবদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেয়ে ও তরুণীরা অনলাইনে নির্যাতনের শিকার হওয়ায় এই প্রকল্পে লিঙ্গ-সংবেদনশীল, ট্রমা-সচেতন ও শিশুবান্ধব পদ্ধতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।