- এখনো অপেক্ষায় থাকেন মা রোকেয়া খাতুন
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার খুনিদের ফাঁসি কার্যকর দেখার অপেক্ষায় পরিবার ও স্বজনরা। হত্যাকা-ের ছয় বছর হয়ে গেলেও আবরারের স্মৃতি আঁকড়ে এবং হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় কার্যকর দেখার অপেক্ষায় সময় কাটছে তাদের। অথচ নৃশংস এ হত্যাকা-ের ছয় বছর পূর্ণ হলেও হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ২০ আসামির ফাঁসি আজও কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। একই সঙ্গে সম্ভব হয়নি ফাঁসির দ-প্রাপ্ত পলাতক চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা।
হত্যার রায় কার্যকর ও পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে দীর্ঘসূত্রিতায় ক্ষুব্ধ আবরারের মা রোকেয়া খাতুন ও বাবা বরকত উল্লাহ। তারা বলেন, ‘বিচারের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। কিন্তু বিচারের রায় কার্যকরে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়া এবং পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর আন্তরিকতা পরিলক্ষিত না হওয়ায় আমরা হতাশ।’
আবরারের মা রোকেয়া খাতুন এখনো ভাবেন-আবরার ফিরে আসবে, মা বলে ডাকবে! তিনি বললেন, ‘৬টা বছর! অনেক দিন হয়ে গেল ছেলেটা নেই। কী নিষ্ঠুরভাবে তাকে খুন করেছে! যারা খুন করেছে তাদের সাজা হয়েছে, এটা যেন কার্যকর হয়। আশা করছি, এ সরকার রায় কার্যকর করে মামলাটা নিষ্পত্তি করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুখে বলি ছেলেটা মারা গেছে। কিন্তু বিশ্বাস করতে পারি না, আমার ছেলেটা আর আসবে না। এখনো ভাবি, আবরার ফিরে আসবে, আমাকে মা বলে ডাকবে। ওর ব্যবহৃত জিনিসগুলো কাউকে ধরতে দিই না।’
কুষ্টিয়া ছেড়ে এখন ঢাকায় থাকছেন রোকেয়া খাতুন। তার ছোট ছেলে আবরার ফায়াজ বুয়েটে পড়ছে। বুয়েট থেকে পাস করে দেশের বাইরে চলে যাওয়ার ইচ্ছা তার। ‘তখন তো ওকে আর কাছে পাব না। আর ওরে রেখে থাকতে কষ্ট হয়। এ জন্য ঢাকায় বাসা নিয়ে ছেলের সঙ্গে থাকছি,’ বলেন রোকেয়া।
আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখেছেন। আশা করছি, আপিল বিভাগেও হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে। এ সরকার রায় কার্যকর করবে।’ এ মামলায় দ-িত ২৫ আসামির মধ্যে চারজন এখনো পলাতক। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান বরকত উল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘ছয় বছর ধরে মামলার পিছে দৌড়াচ্ছি। জীবনটাই শেষ হয়ে যাচ্ছে। রায়টা কার্যকর হলেও শান্তি পেতাম।’
আবরার ছিলেন বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। ওই ঘটনায় চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা। সেই মামলার রায়ে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর বুয়েটের ২০ শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদ- এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আপিল বেঞ্চ এ বছর ১৬ মার্চ সেই সাজাই বহাল রাখে।
আবরার হত্যা মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্তরা হলেন, বুয়েট ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক সরকার, উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, মো. মনিরুজ্জামান মনির, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, শিক্ষার্থী মো. মুজাহিদুর রহমান এবং এ এস এম নাজমুস সাদাত, বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, মুনতাসির আল জেমি, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শাসছুল আরেফিন রাফাত, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, হোসেন মোহাম্মাদ তোহা, বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র মোর্শেদ অমত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু, বুয়েটের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র মুহাম্মাদ মোর্শেদ-উজ-জামান ম-ল ওরফে জিসান, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের ছাত্র মুজতবা রাফিদ।
যাবজ্জীবন কারাদ- প্রাপ্তরা হলেন-বুয়েট ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, গ্রন্থ ও প্রকাশনা-বিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আকাশ হোসেন ও মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন