আগামী রোববার অর্থাৎ ১২ অক্টোবর থেকে দেশজুড়ে শুরু হবে শিশুদের টাইফয়েডের টিকাদান কর্মসূচি। এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। জন্মনিবন্ধন ছাড়াই ঢাকার উত্তর সিটিতে প্রায় ১৩ লাখ শিশু এবং দক্ষিণ সিটিতে ১০ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে রাজধানীতে প্রায় ২৩ লাখ শিশুকে টাইফয়েডের টিকা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
গতকাল বুধবার গুলশান-২ এ ডিএনসিসির নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাহমুদা আলী বলেন, প্রায় ১৩ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যে সিটি করপোরেশন কাজ করছে। টাইফয়েড প্রতিরোধে ১২ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত মাসব্যাপী ডিএনসিসির ১০টি অঞ্চলে দেওয়া হবে এ টিকা। এ ১০ অঞ্চলে প্রায় ১৩ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ১৮১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭ লাখ ৬০ হাজার ৭৯০ জন ছাত্র-ছাত্রী এবং কমিউনিটির ৫ লাখ ৩৩ হাজার ২৭৯ জন শিশুকে টাইফয়েডের টিকা দেওয়া হবে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ৯ মাস থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত শিশু-কিশোরদের জন্য এই টিকা বিনা মূল্যে দেওয়া হবে। এ জন্য সরকারের নির্ধারিত ভ্যাকসিন নিবন্ধন পোর্টালে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। এ নিবন্ধন করার সময় শিশুদের জন্মনিবন্ধন নম্বর দিতে হয়। অন্যথায় নিবন্ধন সাবমিট হয় না এবং ভ্যাকসিন কার্ডও পাওয়া যায় না।
যেসব শিশুর জন্মনিবন্ধন নেই, তাদের ক্ষেত্রে করণীয় কী? এমন প্রশ্নের জবাবে মাহমুদা আলী জানান, নানা কারণে নগরের অনেক শিশুর জন্মনিবন্ধন করা হয়নি। অনেক এলাকার অভিভাবকরা নিবন্ধন করতে পারছেন না। তাই তাদের জন্য বলব, শিশু-কিশোরদের নিয়ে সরাসরি নির্ধারিত কেন্দ্রে চলে যেতে। সেখানে থাকা ডিএনসিসির সংশ্লিষ্টরা তথ্য নিয়ে টিকা কার্ড বের করে দেবেন। এরপর তারা টিকা নিতে পারবে। তিনি জানান, যেসব শিশু জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে টিকা কার্ড সংগ্রহ করবে তাদের টিকা সার্টিফিকেট হলুদ রঙের হবে। আর যেসব শিশু জন্মনিবন্ধন ছাড়া টিকা নেবে, তাদের সবুজ রঙের সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী। তিনি জানান, ১২ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া মোট ১০ দিন টিকা দেওয়া হবে। আবার ১৩ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত মোট ১৮ দিন টিকা দেওয়া হবে।
এ ছাড়া ১ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত স্যাটেলাইট বা আউটরিচ ইপিআই কেন্দ্রগুলোতে টিকা দেওয়া হবে শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া। প্রতিটি টিমে দুজন টিকাদান কর্মী ও তিনজন ভলান্টিয়ার কাজ করবে। ক্যাম্পেইনের সেশন শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলবে।
এদিকে শিশুদের টাইফয়েড প্রতিরোধে ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৫’ সফল বাস্তবায়নে কাজ করছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম জানান, দেশব্যাপী ৯ মাস হতে ১৫ বছর বয়সি শিশুদের এক ডোজ টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিবি) টিকা প্রদানের অংশ হিসেবে ডিএসসিসি এলাকায় ১২ অক্টোবর থেকে এই টিকা প্রদান শুরু হবে। তিনি বলেন, টাইফয়েড ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত একটি রোগ, যেটি দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। টাইফয়েড টিকা গ্রহণের মাধ্যমে টাইফয়েড জ্বর ও জ্বরজনিত জটিলতা প্রতিরোধ করা যায়। ১২ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৫’-এর আওতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় প্রায় ১০ লাখ শিশুকে বিনামূল্যে এই টিকা দেওয়া হবে।
২ হাজার ২৫২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ওয়ার্ড কার্যালয়ে ৭৫টি স্থায়ী কেন্দ্র ও প্রায় ৪৫০টি অস্থায়ী কেন্দ্রের মাধ্যমে ২টি পর্যায়ে এই টিকাদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে। প্রথম পর্যায়ে ১২ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের টিকাদান করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে, ১ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত অস্থায়ী কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানবহির্ভূত কমিউনিটির শিশু এবং প্রান্তিক পর্যায়ের শিশুদের টিকাদান করা হবে। এ ছাড়া, ১২ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিটি ওয়ার্ড কার্যালয়ে স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র থেকে এই টিকা গ্রহণ করা যাবে।
তিনি জানান, টিকা গ্রহণের জন্য শিশুর অনলাইনে বিদ্যমান ১৭ ডিজিটের জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে িি.িাধীবঢ়র.মড়া.নফ ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে টিকা কার্ড ডাউনলোড করতে হবে। যাদের জন্মনিবন্ধন নম্বর অনলাইনে নেই বা পূর্বে জন্মনিবন্ধন করা হয়নি তাদের নিজ নিজ ওয়ার্ড কার্যালয়ে যোগাযোগপূর্বক অনলাইন জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, টাইফয়েড টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক পরীক্ষিত। সবার সহযোগিতায় আমরা শিশুদের টিকাদান কার্যক্রমকে একটি উৎসবে পরিণত করতে চাই। টিকা গ্রহণের জন্য জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন বিধায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জন্ম নিবন্ধন সেবা প্রদানের জন্য ডিএসসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন