দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় এই রোগে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৮১ জন। মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ৮৮৫ জন। আর মৃতের সংখ্যা হয়েছে ২২৪। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সমন্বিতভাবে আমরা কাজ করছি। কিন্তু কারো ঘরে গিয়ে মশারি টাঙ্গানোর কাজটি তো আর আমরা করতে পারব না। তাই ডেঙ্গুতে থেকে বাঁচতে ব্যক্তি সচেতনতার বিকল্প নেই।
গতকাল বৃহস্পতিবার ডেঙ্গুবিষয়ক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বুধবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮২ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১০১ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১৬২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১১৬ জন, খুলনা বিভাগে ৪৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪০ জন, রাজশাহী বিভাগে ৬৩ জন, রংপুর বিভাগে ৩২ জন ও সিলেট বিভাগে ৭ জন ভর্তি হয়েছেন।
একই দিন ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫’ নিয়ে আয়োজিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে ডেঙ্গুবিষয়ক এক প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, এবার গতবারের চেয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। তবে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুহার কম হচ্ছে। একটি মৃত্যুও আমাদের কাম্য নয়। তাই আমরা আমাদের চিকিৎসার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। পরিসংখ্যান এবং হাসপাতাল থেকে যে মৃত্যুর তথ্য পাচ্ছি তাতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রথমদিনেই বেশির ভাগ রোগী ৫০ শতাংশের বেশি মারা যাচ্ছে। তার মানে রোগের যে আক্রমণ হয়েছে এটা অনেক আগে। রোগীরা হাসপাতালে পরে এসেছে। আমরা হাসপাতালে যথেষ্ট পরিমাণ ব্যবস্থাপনার চেষ্টা করছি।
তিনি আরও বলেন, এখন যেটা সবচেয়ে বড় বিষয়, সেটা হলো জনগণের সচেতনতা। যেহেতু মশা উৎপন্ন হওয়ার বিষয় আছে, সেজন্য মশা ধ্বংসেরও বিষয় আছে। তাদের লার্ভা ধ্বংস করার বিষয় আছে। লোকজন যেন প্রোটেকটেড থাকে সেজন্য মশারি টাঙানো। এগুলো খুবই জরুরি। এগুলো হচ্ছে মূলত ব্যক্তিগত পর্যায়ের বিষয়। এগুলো যদি আমরা অবজ্ঞা করি তবে ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পাওয়া মুশকিল। আবু জাফর বলেন, ডেঙ্গু হলেও আমরা প্রথম পর্যায়ে যদি শনাক্ত করতে পারি ডেঙ্গুর চিকিৎসা বাসায় বসেই হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। সিভিআর পর্যায়ে না গেলে হাসপাতালে যাওয়া জরুরি নয়। এর সম্পর্কে সম্যক ধারণা এবং সচেতনতার অভাব ও অবহেলার কারণে আমাদের মূলত ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার বেড়ে যাচ্ছে।
এ সময় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ টি এম সাইফুল ইসলাম জানান, ২০২৩ ক্যালেন্ডার বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল তিন লাখের বেশি এবং মৃত্যুবরণ করেছিল এক হাজার ৭৫০ জনের মতো। ২০২৪ ক্যালেন্ডার বছরে আক্রান্ত হয়েছিল এক লাখ ৫ হাজারের মতো, মৃত্যু হয় ৫২০ জনের। চলতি বছর শনাক্ত রোগী বেড়ে ৫২ হাজার ৮৮৫ জনে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, এবার আমরা ক্যালেন্ডার বছরের শেষপর্যায়ে পৌঁছেছি। গতকাল (বুধবার) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছে ২২০ জন। ক্রমান্বয়ে ডেঙ্গু যে প্রতিরোধের বিষয়টা, সেটি আমরা নির্মূল করতে পারিনি, কিন্তু সরকারের প্রচেষ্টায় আমরা সফলতার দিকে এগোচ্ছি। সামনে একজনও মৃত্যুবরণ করবে না, আমরা সেদিকে এগোচ্ছি। তারপরও যতটা প্রতিরোধ করা সম্ভব আমরা চেষ্টা করছি।