ঢাকা শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৫

১২ অক্টোবর থেকে মাসব্যাপী  টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৫, ১১:৩৭ পিএম

* ৫ কোটি শিশুকে দেওয়া হবে ১ ডোজ টিকা
* কমে আসবে টাইফয়েডের প্রকোপ
* নিশ্চিত হয়েছে টিকার সব ধরনের নিরাপত্তা : ডা. মো. সায়েদুর রহমান

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেছেন, আগামী ১২ অক্টোবর (রোববার) থেকে সারা দেশে মাসব্যাপী ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫’ শুরু হচ্ছে। এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে দেশের প্রায় ৫ কোটি শিশুকে ১ ডোজ কার্যকর টাইফয়েড টিকা বিনা মূল্যে দেওয়া হবে। এতে শিশুদের টাইফয়েডজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুহার বহুলাংশে কমে আসবে। এই টিকার সব ধরনের নিরাপত্তা যাচাই করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। 

গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ক্যাম্পেইনের আওতায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রাক-প্রাথমিক (প্লে, নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন) থেকে নবম শ্রেণি/সমমান (মাদ্রাসা, ইংরেজি মাধ্যম) পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে টিকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে থাকা ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের কমিউনিটি পর্যায়ে ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রে বিনা মূল্যে টিকা দেওয়া হবে।

ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব অধিদপ্তর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, কওমি মাদ্রাসা, স্কাউট ও গার্লস গাইডের সহযোগিতায় ক্যাম্পেইন সফলভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও সুবিধাবঞ্চিত শিশু, বেদে পল্লি, চা-বাগান, এতিমখানা, শিশু ও কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র, পথশিশু ও যৌনপল্লীতে থাকা শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে টিকা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

অধ্যাপক সায়েদুর রহমান জানান, ইপিআই পরিচালিত এই টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে পরীক্ষিত ও সম্পূর্ণ নিরাপদ। এতে প্রোটিন ও শর্করা উভয় উপাদান থাকায় শরীরে অধিক কার্যকরভাবে প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার কোনো টিকা ব্যবহারের আগে তার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা শতভাগ নিশ্চিত করে। সামান্যতম সন্দেহ থাকলে সেই টিকা অনুমোদন দেওয়া হয় না। 

ডা. সায়েদুর রহমান জানান, এই টিকায় শরিয়তবিরোধী কোনো উপাদান নেই। এটি সৌদি হালাল সেন্টার থেকে হালাল সনদপ্রাপ্ত। ২০১৯ সালে পাকিস্তান এবং ২০২২ সালে নেপাল এই টিকা চালু করেছে। উভয় দেশেই শিশুদের মধ্যে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। ভারতের মুম্বাই সিটি করপোরেশনেও একই টিকা সফলভাবে ব্যবহার হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টিকা গ্রহণের পর সামান্য ব্যথা, হালকা জ্বর বা ক্লান্তি দেখা দিতে পারেÑ যা স্বাভাবিক ও অল্প সময়ের মধ্যে সেরে যায়। কিছু ক্ষেত্রে মানসিক ভীতিজনিত কারণে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে মাস সাইকোজেনিক ইলনেসেস নামে পরিচিত। এটি টিকাজনিত নয়, মানসিক ভীতিজনিত প্রতিক্রিয়া।

টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনে অংশ নিতে ঠধীবঢ়র.মড়া.নফ ওয়েবসাইটে গিয়ে ১৭ সংখ্যার জন্মনিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে নিবন্ধন করা যাবে।

গতকাল পর্যন্ত ১ কোটি ৬৮ লাখ শিশু টিকার জন্য নিবন্ধিত হয়েছে। যাদের জন্মনিবন্ধন নেই, তাদের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় তালিকা করে টিকা দেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইপিআই বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম সফল জনস্বাস্থ্য কর্মসূচি, যার মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় ৪২ লাখ শিশুকে বিভিন্ন প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে টিকা দেওয়া হয় এবং বছরে প্রায় ১ লাখ শিশুর জীবন রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।