চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদ-ের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে শহীদ আবু সাঈদের পরিবার।
রায় ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় শহিদ আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যরা পলাতক শেখ হাসিনাসহ অন্য আসামিদের দ্রুত দেশে এনে রায় কার্যকর করার দাবি জানান।
শহিদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, ‘বাংলার মাটিতে শেখ হাসিনাকে এনে ফাঁসি কার্যকর করা হোক, এটা দেখে মরে যেতে চাই। আমি রায়ে খুশি; কিন্তু বিচার দেখতে চাই। আমার ছেলে শহিদ হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশ আমার ছেলেকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছে। আমি হুকুমদাতাসহ পুলিশের বিচার চাই। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই। হত্যা করার অনুমতি দিয়েছিল বলেই আমার ছেলের মতো হাজার হাজার মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে বাংলার মাটিতে নিয়ে এসে রায় কার্যকর করতে হবে।’
আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমরা সবার বিচার চাই। যারা হুকুম দিয়েছে, যারা গুলি করেছে সবাইকে ফাঁসি দিতে হবে। আমি মা, আজ বুঝতে পারছি ছেলে হারানোর কষ্ট। আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে আমার মতো অনেক মা, বোন, ভাই সন্তান হারিয়েছে, স্বামী হারিয়েছে। অনেক জীবন সংসার শেষ হয়ে গেছে। এসবের বিচার হতে হবে।’
আবু সাঈদের বড়ভাই আবু হোসেন বলেন, ‘শুধু রায় ঘোষণা করলে হবে না বিচার কার্যকর করতে হবে। শেখ হাসিনা ও তার দোসররা দীর্ঘদিন স্বৈরাচারী সিস্টেমে গুম খুন করেছে। জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতাকে নির্মমভাবে গণহত্যা করে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। আজ (গতকাল সোমবার) প্রথম রায় হয়েছে। শুধু রায় নয়, এটি কার্যকর করতে হলে শেখ হাসিনাকে এই দেশের মাটিতে এনে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। তা না হলে শহিদদের আত্মা শান্তি পাবে না।’
আবু সাঈদ হত্যা মামলার বাদী ও আরেক বড়ভাই রমজান আলী বলেন, ‘আবু সাঈদকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো বিশ্ব দেখেছে। খুনিরা যে দেশেই পালিয়ে থাকুক তাদের ধরে এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। তাদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে বাংলার মানুষকে দেখাতে হবে এমন স্বৈরাচারের বিচার কী হতে পারে।’
শহিদ আবু সাঈদের গ্রামের স্থানীয়রা প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘হত্যাকা-ে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- দিয়েছেন আদালত। আমরা রায়ে খুশি, কিন্তু তা যদি কার্যকর না হয় তাহলে সব কিছুই বৃথা যাবে।’
প্রসঙ্গত, সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩ আসামির রায় ঘোষণা করা হয়। মামলার অপর আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। রায়ে শেখ হাসিনা ও কামালকে মৃত্যুদ- এবং সাবেক আইজিপিকে ৫ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়।

