জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদ-ের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদ- দিয়েছে। ৩ বিচারপতির স্বাক্ষরের পর বুধবার তাদের মৃত্যুদ-ের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ফলে বুধবার থেকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে শেখ হাসিনা ও কামালকে।
আসামি থেকে রাজসাক্ষী বনে যাওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ রায়ের কপি হাতে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ১৭ নভেম্বর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদ-ে দ-িত করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই সঙ্গে একই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদ-ে দ-িত করা হয়। ওই দিন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় দেন।
ট্রাইব্যুনালের অপর ২ সদস্য হলেনÑ বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যাকা-সহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা এটিই প্রথম মামলা রায়।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, শেখ হাসিনাসহ ৩ আসামির অপরাধ প্রমাণিত। এর মধ্যে দুটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে। আর একটি অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হওয়ায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণার দিন দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে ছয় অধ্যায়ে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পড়া শুরু করেন বিচারিক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। পরবর্তীতে ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত রায় পড়া শেষে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে এ রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলাটি হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনই এ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
প্রথমদিকে এ মামলায় শেখ হাসিনাই একমাত্র আসামি ছিলেন। তবে চলতি বছরের ১৬ মার্চ এ মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করার আবেদন করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। পরে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন।

