পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রধান ইমরান খানের সঙ্গে পরিবার ও দলের নেতাদের সাক্ষাৎ করতে না দেওয়া এবং আদালতের আদেশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ও রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে পিটিআই। দুটি শহরেই জনসমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও গতকাল মঙ্গলবার কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় দলটি। ডনের খবরে বলা হয়, উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এড়াতে ইসলামাবাদে ১৮ নভেম্বর থেকে দুই মাসের জন্য গণজমায়েতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সোমবার থেকে তিন দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাওয়ালপিন্ডি প্রশাসনও। তবে বাধা উপেক্ষা করে আন্দোলন কর্মসূচি পালনে অনড় পিটিআই। দলটির নেতা আসাদ কায়সার জানান, জাতীয় সংসদ ও সিনেটের বিরোধী সদস্যরা প্রথমে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে বিক্ষোভ করবেন, এরপর রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারের সামনে অবস্থান নেবেন।
তিনি বলেন, ‘ইসলামাবাদ হাইকোর্ট নিজের আদেশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি এবং আদিয়ালা জেল প্রশাসনও আদালতের নির্দেশ মানছে না। এ কারণেই বিক্ষোভের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ গত সপ্তাহে খাইবার পাখতুনখাওয়া (কেপি) মুখ্যমন্ত্রীকে টানা অষ্টমবার ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে না দেওয়া হলে তিনি জেলগেটেই অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। একইভাবে ইমরান খানের পরিবারকেও কয়েক সপ্তাহ ধরে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এর ফলে ইমরান খানের স্বাস্থ্য ও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নিয়ে গুঞ্জন সৃষ্টি হয়, যদিও সরকার ও পিটিআই নেতারা জানান, ইমরান খান সুস্থ আছেন। এ অবস্থায় প্রায় এক সপ্তাহ পর ইমরান খানের দুই ছেলেÑ কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের আশঙ্কা, জেল কর্তৃপক্ষ তাদের বাবার বিষয়ে ‘অপরিবর্তনীয় কিছু’ গোপন করছে। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও তারা ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি, এমনকি তার স্বাস্থ্যের বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যও পাননি। ইমরান খানের সাবেক স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের গর্ভে জন্ম নেওয়া কাসিম ও সুলাইমান তাদের মায়ের সঙ্গে লন্ডনে বসবাস করছেন।
এতদিন পাকিস্তানের রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও বাবার কারাবন্দিত্বের কারণে এখন প্রকাশ্যে কথা বলতে বাধ্য হচ্ছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কায়সার বলেন, তিনি কোয়েটায় পিটিআইয়ের অধীন বিরোধী জোটের একটি সমাবেশে অংশ নেবেন, তবে অন্য নেতারা ইসলামাবাদ– ও রাওয়ালপিন্ডির বিক্ষোভে যোগ দেবেন। ব্যারিস্টার গোহর আলী খানসহ অন্য নেতারাও উভয় শহরে বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি দাবি করেন, ইমরান খানকে পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে না দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন। গত সোমবার পিটিআই সংসদীয় কমিটি বৈঠক শেষে কেপিতে গভর্নর শাসন আরোপের সম্ভাব্য উদ্যোগ নিয়ে তীব্র সতর্কবার্তা দেয়। কমিটির ভাষ্য, এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রদেশে আরও অস্থিতিশীলতা, অরাজকতা এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ডেকে আনবে।
আসাদ কায়সার বলেন, কেপির নির্বাচিত সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা জনগণের ম্যান্ডেটের প্রতি অবমাননা। তিনি অভিযোগ করেন, ফেডারেল সরকারের নীতির কারণে কেপি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলাও অবনতি হয়েছে। তিনি জানান, কেপিতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সব রাজনৈতিক দল প্রদেশের সমস্যা সমাধানে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। কেন্দ্রের ‘কঠোর’ আচরণের কারণে কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। পাকিস্তান বিশেষত কেপি আরেকটি সংঘাত বহন করতে পারবে না, তাই আফগানিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। এদিকে পিটিআই–কেপি শাখা ঘোষণা করেছে, তারা পেশোয়ার-ইসলামাবাদ মোটরওয়ে ইন্টারচেঞ্জে সমাবেশ করবে এবং সুয়াবি ইন্টারচেঞ্জ পর্যন্ত যাত্রা করবে। পেশোয়ার পিটিআই সভাপতি ইরফান সেলিম জানান, নওশেরা, চরসাড্ডা, মারদান ও সুয়াবি থেকেও বিক্ষোভকারীরা এতে যোগ দেবেন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন