জাতীয় নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তার ওপর হুমকি দেখিয়ে ১৯টি অ-ইউরোপীয় দেশের নাগরিকদের সব ধরনের অভিবাসন আবেদন অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প প্রশাসন মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আফগানিস্তান ও সোমালিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রত্যাশী অ-ইউরোপীয় ১৯টি দেশের নাগরিকদের গ্রিনকার্ড, মার্কিন নাগরিকত্বসহ ভ্রমণ আবেদন পরিবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়, গত জুন মাসে যেসব দেশের নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে ‘আংশিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা’ জারি করা হয়েছিল, ওই দেশগুলোর ওপরই সাময়িক এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে। এবার নিষেধাজ্ঞার মাত্রা আরও কঠোর করা হলো। দেশগুলো হলো : আফগানিস্তান, বার্মা, চাঁদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, ইয়েমেন। এছাড়া আংশিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান, ভেনেজুয়েলা। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি নথিতে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনে গত সপ্তাহে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় এক আফগান ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের কাছে ওই হামলায় দুই আহত সেনার মধ্যে একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এবং আরেকজন গুরুতর আহত হন। এই ঘটনার পর ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রত্যাশীদের নথিপত্র যাচাই-বাছাইয়ে আরও কড়াকড়ি আরোপ করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাম্প্রতিক সময়ে সোমালিদের নিয়ে ‘অপমানজনক মন্তব্য’ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। তিনি গৃহযুদ্ধে জর্জরিত সোমালিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আসা অভিবাসন প্রত্যাশীদের ‘আবর্জনা’ বলে সম্বোধন করেন এবং বলেন, ‘আমরা ওদের দেশে চাই না, তাদের মধ্যে অপরাধ সংঘটনের প্রবণতা বেশি।’ দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের শাসনভার নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসন রোধকে প্রাধান্য দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রত্যাশী বিভিন্ন দেশের কর্মী, শিক্ষার্থীদের ওপরও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে তার প্রশাসন।
দেশ থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করতে নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো বড় বড় শহরে ফেডারেল এজেন্ট পাঠানো, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়া, অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারের প্রচার জোরদার করাসহ নানা কর্মসূচির অনুমোদন দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। ভারত, ভেনেজুয়েলা, মেক্সিকোসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় কয়েক হাজার অভিবাসীকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের ওপর হামলার পরপরই এক ঘোষণায় ট্রাম্প বলেন, ‘প্রয়োজনে যে অভিবাসীরা গ্রিনকার্ড কিংবা মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়ে গেছেন তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাদের প্রত্যেকের নথিপত্র ও আবেদন পুনরায় যাচাই-বাছাই করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ওপর হুমকি এমন কোনো ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেওয়া হবে না।’ এদিকে আমেরিকান ইমিগ্রেশন ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তার জানান, এরই মধ্যে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা দেশের অনেক মানুষের যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্বের শপথ, নাগরিকত্ব সাক্ষাৎকার, এমনকি গ্রিনকার্ডধারী ব্যক্তির স্ট্যাটাস হঠাৎ পরিবর্তন কিংবা বাতিলের খবর পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন