ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

বৈঠকে ডেকেছে সরকার

তেলের দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের ‘কারণ দর্শাও’ নোটিশ 

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২৫, ১২:২৯ এএম

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, সরকারের অনুমোদন ছাড়াই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া ব্যবসায়ীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আর পাটখাত বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের পাটশিল্প ধ্বংস হওয়ার পেছনে ‘নীতিগত ত্রুটিও’ ছিল। আর ছিল অযোগ্যতা, অদক্ষতা ও দুর্নীতি।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেটের খামারবাড়িতে বস্ত্র অধিদপ্তরের উদ্যোগে ‘জাতীয় বস্ত্র দিবসের’ কর্মশালা শেষে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা আমাদের সঙ্গে কথা বলেননি। আমরা তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছি। একই সঙ্গে আমরা তাদের একটি সভায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি।

গত ১৪ অক্টোবর ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।

বোতলের সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ছয় টাকা এবং খোলা তেল আট টাকা করে বাড়ানোর ঘোষণা আসে। তার একদিন আগে খুচরা বাজারে বোতলের সয়াবিন তেলের দাম ১৮৯ থেকে বেড়ে ১৯৮ টাকা হয়ে যায়। খোলা তেলের লিটারে বাড়ে ৫ টাকা। কিন্তু সরকারের তরফে সেই সিদ্ধান্তে সায় মেলেনি। সরকারকে না জানিয়েই আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছে বলে দাবি করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

তিনি বলেন, তারা (ব্যবসায়ীরা) আমাদের না জানিয়ে কাজটি করেছেন। তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত অনুসারে কাজ করেছেন। আমি বুধবার এটা স্পষ্ট করে বলেছিÑ আমরা ব্যবস্থা নেব।

আগের দিন সরকারের তেল কেনার সবশেষ তথ্য তুলে ধরে শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ওনারা (ব্যবসায়ীরা) যে দামে বাজারে তেল বিক্রি করছেন, সেখান থেকে প্রায় ২০ টাকা কমে আমাদেরই তেল দিয়েছেন। তা হলে ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রির কোনো যৌক্তিকতা দেখি না। গতকালই তো কিনেছি ওনাদের থেকে। ৫০ লাখ লিটার তেল কিনেছি, এক-দুই লিটার না। যদি ৫০ লাখ লিটার তেল টেন্ডারে ২০ টাকা কমে আমরা কিনতে পারি, তা হলে বাজারে কেন এত দাম হবে? যৌক্তিক কারণ তো আমি খুঁজে পাচ্ছি না।

পাট বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, কোনো প্রকার আগাম প্রস্তুতি ছাড়াই শিল্পটি জাতীয়করণ করা হয়েছিল। এ সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা ধ্বংস করে দিয়েছে। জাতীয়করণ করার পরে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তা চালানো হয় সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে। এই সিদ্ধান্ত ‘ভুল’ ছিল মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, অদক্ষ, অযোগ্য এবং দুর্নীতিপরায়ণতা দিয়ে পরিচালিত হয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত কলগুলো। পাটকে বৈচিত্র্যময় করতে ব্যর্থ হয়, উচ্চ বাজার চাহিদা সত্ত্বেও পাটপণ্যের সরবরাহে উল্লেখযোগ্য ঘাটতি ছিল।

পাট নিয়ে সেই ভুল আর হবে নাÑ এমন আশাবাদ রেখে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, অযোগ্য, অদক্ষ লোকগুলো নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে পাট নিয়ে রঙিন স্বপ্ন দেখিয়েছিল, যা বাস্তবমুখী ছিল না। সারা দেশের ৭১টা কলেজ-ইনস্টিটিউট থেকে যে গ্র্যাজুয়েটরা বের হচ্ছেন, তাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা দেশের মোট রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যেতে চাই, যার মধ্যে ৮৫ শতাংশই বস্ত্রখাতের। আমরা রঙিন স্বপ্ন দেখাতে চাই না, যাতে কোনো ভুল আবার না হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার ১৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়েছে তথ্য দিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আরও কয়েকটি শিল্প প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এগুলো ভালো চলছে।