মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২৫, ০৩:২০ এএম

কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২৫, ০৩:২০ এএম

কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে

একটি দেশের অর্থনীতির মেরুদ- হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে ভূমিকা পালন করে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুদ্রানীতি প্রণয়ন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা, ব্যাংকিং খাতের তদারকি এবং আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা রক্ষা, এসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাঁধে। অতএব, এর প্রতিটি সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপ হতে হবে যথেষ্ট দায়িত্বশীল, স্বচ্ছ এবং সময়োপযোগী।

বর্তমানে দেশের আর্থিক খাতে যে অস্থিরতা ও অনিয়ম দেখা যাচ্ছে, তার পেছনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যাপ্ত নজরদারির অভাব এবং দুর্বল নীতিমালা প্রণয়নের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে ঋণখেলাপি সমস্যা, ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি, এবং বৈদেশিক মুদ্রার অনিয়ন্ত্রিত বাজার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্ষমতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এর ফলে জনগণের আস্থা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি বিনিয়োগকারীদেরও অনিশ্চয়তা বেড়েছে।

সোমবার রূপালী বাংলাদেশের এক বিশেষ প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বহীনতার পরিচয় ফুটে ওঠে। ‘স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংককে সুবিধা দিতে উল্টে গেল আইন’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভার্টিস বাংলাদেশ লিমিটেডের শেয়ার হস্তান্তর নিয়ে তুঘলকি কা- ঘটেছে। বিষয়টি এখন শুধু আর্থিক লেনদেন নয়, দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিয়েও বড় ধরনের প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার কঠোর আইন শিথিল করে সুবিধা দিয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংককে।

চলতি মাসের ২ জুলাই স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংককে ২৪১ কোটি ৫০ লাখ টাকা পাঠানোর অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।  যা  কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার স্পষ্ট লঙ্ঘন ও দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি চরম অবজ্ঞা। যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর (আরজেএসসি) তথ্য উপেক্ষা করে এমন অযোগ্য লেনদেন শুধু ব্যাংকের অবহেলা নয়, বরং দেশের অর্থনীতির জন্যও নিরাপত্তা হুমকির শামিল। কেননা, আর্থিক অনিয়ম এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান বিসিআইসির স্বার্থ ক্ষুণœ হওয়ার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেও একাধিক মামলা প্রক্রিয়াধীন।

এসব তথ্য আড়াল করে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা পরিবর্তন করা হয়েছে। নোভার্টিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ৬০ শতাংশ শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে কোম্পানিটির আংশিক মালিকানা অর্জন করেছে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। এই শেয়ার বিক্রির বিপরীতে প্রায় ২৪১ কোটি ৫০ লাখ টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রায়) সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত মূল কোম্পানি নোভার্টিস এজিকে পাঠাতে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এজন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স অনুমোদনের আবেদন করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৩ এপ্রিল এক আনুষ্ঠানিক চিঠির মাধ্যমে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর (আরজেএসসি) কর্তৃক প্রদত্ত ফর্ম-১১৭ এবং সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রেশন ডকুমেন্টগুলো যথাযথভাবে যাচাই করে অর্থ পাঠানো অনুমোদনযোগ্য হবে। চিঠিতে স্পষ্টভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই বলেছে, শেয়ার হস্তান্তরের সব আইনি আনুষ্ঠানিকতা ও নথিপত্র সম্পন্ন হওয়ার পরেই কেবল অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। এর বাইরে কোনো ধরনের তাড়াহুড়া বা নিয়মবহির্ভূত পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার জন্যও সতর্ক করা হয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরজেএসসি থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন ছাড়াই ফর্ম-১১৭ স্বাক্ষরিত না থাকা অবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রায় টাকা পাঠানো স্পষ্ট আইন লঙ্ঘন। একই সঙ্গে উচ্চ আদালতের আদেশ থাকা অবস্থায় এই লেনদেন সম্পন্ন হলে তা আদালতের শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো অপরাধ। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মনে রাখতে হবে, এর প্রধান দায়িত্ব অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও সুষম প্রবৃদ্ধির পথে পরিচালিত করা। রাজনৈতিক চাপ বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ উপেক্ষা করে এটি স্বাধীনভাবে এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ না করলে সামগ্রিক অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে। বিশেষ করে দেশের রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা, মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন এবং বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষায় আরও কার্যকর ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রযুক্তিগত দক্ষতা, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ সংস্কারও অত্যন্ত জরুরি। একই সঙ্গে, স্বচ্ছতা ও তথ্যপ্রকাশের ক্ষেত্রে আরও অগ্রগামী হতে হবে, যাতে জনগণ এবং অন্যান্য নীতিনির্ধারক প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

আমরা আশা করি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার সংবিধানিক দায়িত্ব ও নৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকে কার্যকর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।  অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য এটি একান্ত প্রয়োজন।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!