বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫, ০১:৩৪ এএম

স্কুলে অগ্নি নিরাপত্তা ও জরুরি প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হোক

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫, ০১:৩৪ এএম

স্কুলে অগ্নি নিরাপত্তা ও জরুরি প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হোক

একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার সন্তানদের ওপর। সেই সন্তানদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত শিক্ষাব্যবস্থার ছায়াতলে রাখতে না পারলে জাতি হিসেবে আমাদের ভবিষ্যতও অন্ধকারময় হয়ে পড়ে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিকা- বা অন্যান্য জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আজও অনুপস্থিত। এই ঘাটতি আমাদের শিশুদের জীবনকে প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

সম্প্রতি  গত ২১ জুলাই ঢাকার উত্তরা এলাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে একটি বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হয়। এতে ১৭১ জন শিশু শিক্ষার্থী ও অভিভাবক আহত হন এবং ২০ জন প্রাণ হারান। তার মধ্যে ১৭ জনই শিশু ছিল। দুর্ঘটনার সময় স্কুল ভবনে আটকা পড়া অনেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আগুনে পুড়ে কিংবা আতঙ্কিত হয়ে দিকভ্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান। মহান আল্লাহ তায়ালা আহতদের সুস্থতা দান করুন এবং নিহতদের জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন- আমিন। এই হৃদয়বিদারক ঘটনা আমাদের জাতিকে গভীরভাবে শোকগ্রস্ত করেছে এবং সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা একদম স্পষ্ট করে দিয়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ স্কুলেই কার্যকর অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নেই, থাকলেও তা অকেজো বা অচল অবস্থায় পড়ে থাকে।

কোথাও ‘ফায়ার এক্সিট’ বা জরুরি নির্গমন পথ থাকলেও অনেক সময় তালাবদ্ধ থাকে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার বা জরুরি নিরাপত্তা বিধি সম্পর্কে কোনো প্রশিক্ষণ নেই। অধিকাংশ স্কুলে কোনো ফায়ার ড্রিল আয়োজন হয় না। ফলে জরুরি মুহূর্তে কেউ জানে না কোন পথে বের হতে হবে বা কাকে সাহায্যের জন্য জানাতে হবে, যা বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

জাতীয় শিক্ষাক্রমে অগ্নি নিরাপত্তা ও জরুরি প্রতিক্রিয়া বিষয়ক কোনো পাঠ অন্তর্ভুক্ত না থাকাও উদ্বেগজনক। কোথাও বলা নেই কীভাবে ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করতে হয়, কোথায় জড়ো হতে হবে বা কার কাছে ফোন করতে হবে। অথচ এসব মৌলিক জীবন রক্ষাকারী জ্ঞানই সংকটময় মুহূর্তে প্রাণ বাঁচাতে পারে। 
শিক্ষা যেন শুধুমাত্র পাঠ্যবইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে জীবন রক্ষার দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে। তাই

জাতীয়ভাবে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যকর অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবেÑ প্রতিটি স্কুলে পর্যাপ্ত ও কার্যকর অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বসানো এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা। বছরে অন্তত দুইবার ফায়ার ড্রিল বা জরুরি মহড়া আয়োজন, যাতে শিক্ষার্থীরা বাস্তব পরিস্থিতিতে দ্রুত ও সঠিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য অগ্নি নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ চালু করা, যাতে তারা সংকট মুহূর্তে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারে।  অন্যদিকে, জাতীয় পাঠ্যক্রমে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত অগ্নি নিরাপত্তা ও জরুরি প্রতিক্রিয়া বিষয়ক পাঠ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এতে শিশুদের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় মানসিক প্রস্তুতিও গড়ে উঠবে। নতুন স্কুল ভবন নির্মাণের সময় অবশ্যই জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুসরণ করতে হবে এবং অগ্নি নিরাপত্তা বিধি কঠোরভাবে মানা নিশ্চিত করতে হবে। পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন দ্রুত সংস্কার বা পুনর্নির্মাণের আওতায় আনতে হবে। অভিভাবকদের মধ্যেও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, যেন তারা শুধু ফলাফলের পেছনে না ছুটে সন্তানের নিরাপত্তাকেও অগ্রাধিকার দেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরকে সরাসরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত করে একটি জাতীয় কর্মসূচির আওতায় প্রশিক্ষণ ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, শিক্ষা বোর্ড ও স্কুল কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা প্রয়োজন। শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মধ্যেও অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা এখন সময়ের দাবি। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে স্কুল স্তর থেকেই ভূমিকম্প, অগ্নিকা-, বন্যা বা যেকোনো দুর্যোগে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হয় তা শেখানো হয়। আমাদেরও উচিত তাদের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে দেশের বাস্তবতা অনুযায়ী কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। শেষ কথা, প্রতিটি শিশুর জীবন অমূল্য। দুর্ঘটনা সবসময় ঠেকানো সম্ভব নয়, তবে সঠিক প্রস্তুতি ও সচেতন প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাণহানি অনেকাংশে প্রতিরোধযোগ্য। মাইলস্টোন দুর্ঘটনা আমাদের গভীরভাবে আঘাত করেছে- এখন সেই বেদনা শক্তিতে রূপান্তর করার সময়। আমরা চাই এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে শিশুদের শিক্ষা শুধু পাঠ্যজ্ঞান নয়, দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত ও সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। অগ্নি নিরাপত্তা ও জরুরি প্রশিক্ষণ ছাড়া শিক্ষার কাঠামো অসম্পূর্ণ। তাই আর বিলম্ব নয়Ñ আজই সময় ব্যবস্থা নেওয়ার।

মো. শামীম মিয়া
প্রাবন্ধিক ও শিক্ষার্থী, ফুলছড়ি সরকারি কলেজ
জুমারবাড়ী, সাঘাটা, গাইবান্ধা

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!