বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিপ্লব কুমার রায়, সিনিয়র শিক্ষক, ইন্টারন্যাশনাল স্কলার্স স্কুল, রংপুর

প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫, ০১:৩৮ এএম

মাইলস্টোনে ট্রেনিং বিমান বিধ্বস্ত

শিক্ষা, নিরাপত্তা ও জবাবদিহির প্রশ্ন

বিপ্লব কুমার রায়, সিনিয়র শিক্ষক, ইন্টারন্যাশনাল স্কলার্স স্কুল, রংপুর

প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫, ০১:৩৮ এএম

শিক্ষা, নিরাপত্তা ও জবাবদিহির প্রশ্ন

ঢাকার উত্তরায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মাইলস্টোন কলেজের একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা আমাদের জাতীয় মননকে নাড়া দিয়েছে। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার ফলে ২০ জন নিহত এবং দেড়শ’র অধিক গুরুতর আহত হয়েছেন। শান্তিপূর্ণ একটি সকালে, শিক্ষাবান্ধব পরিবেশে এমন এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা শুধু সংশ্লিষ্ট পরিবার নয়, বরং গোটা জাতিকেই স্তব্ধ করে দিয়েছে। এখন সময় এসেছে, প্রশ্ন তোলার। এই দুর্ঘটনা কি নিছক দুর্ঘটনা, না কি এটি ছিল অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতির ফল?

বলা হয়ে থাকে, প্রশিক্ষণ বিমানের ফ্লাইটগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এগুলোর পেছনে থাকে শিক্ষানবিশ পাইলট ও সীমিত অভিজ্ঞতার গাইড পাইলট। কিন্তু তাই বলে কী নিয়ম, নিরাপত্তা প্রটোকল ও যথাযথ নজরদারির অভাব গ্রহণযোগ্য? উত্তরার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এত নিচু উচ্চতায় একটি প্রশিক্ষণ বিমান উড়ছিল কেন? এটাই প্রথম ও মৌলিক প্রশ্ন। প্রশিক্ষণ ফ্লাইটের জন্য নির্ধারিত এলাকাগুলো, যেমন নির্জন বা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ আকাশপথ, তা নিশ্চিত করা কি কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নয়?

এই দুর্ঘটনার পেছনে বিমানটির যান্ত্রিক ত্রুটি, আবহাওয়া কিংবা মানবিক ভুল, যেটিই থাকুক না কেন, তার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায় নির্ধারণ অত্যন্ত জরুরি। কারণ এই দুর্ঘটনা প্রমাণ করে, আমাদের দেশের এভিয়েশন সেক্টরের ভিত এখনো ভঙ্গুর এবং অব্যবস্থাপনার ছাপ এখানেও বিদ্যমান।

প্রশ্ন জাগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম কতটা নিরাপদ? মাইলস্টোন কলেজ একটি খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেখানে প্রশিক্ষণ বিমান কার্যক্রম চলে আসছে বেশ কিছুদিন ধরে। এটি কি তাদের একাডেমিক কাঠামোর অংশ? যদি তা-ই হয়, তবে সেই কার্যক্রম কি সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (ঈঅঅই) এর সঙ্গে নিবিড়ভাবে সমন্বিত? ছাত্র-ছাত্রীদের এভিয়েশন প্রশিক্ষণ দেওয়ার আগে কি পরিবারকে সম্পূর্ণ ঝুঁকির চিত্র জানানো হয়? আদৌ কি তাদের জন্য বিমানে ওঠা বাধ্যতামূলক ছিল?

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানেই একটি নিরাপদ পরিবেশ। সেখানে যদি প্রশিক্ষণের নামে শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে এমন ভয়াবহ পরীক্ষা চালানো হয়, তাহলে অভিভাবকেরা সন্তানদের হাতে বইয়ের বদলে কফিন তুলে দেওয়ার ভয় নিয়ে বসবাস করবেন।

এ ধরনের ঘটনায় একটি সাধারণ প্রবণতা হলো দায় এড়ানো। কর্তৃপক্ষ বলবে যান্ত্রিক ত্রুটি, প্রতিষ্ঠান বলবে ‘নিয়ম মেনেই সব কিছু হয়েছে’, এবং আমরা, সাধারণ জনগণ শুধু মর্মাহত হব। কিন্তু এই দায় এড়ানোর সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

কেন একটি প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় উড়ছিল? তার ফ্লাইট পাথ কে নির্ধারণ করেছিল? বিমানটির সর্বশেষ রক্ষণাবেক্ষণ কখন হয়েছিল? পাইলটের অভিজ্ঞতা কতটুকু ছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর একবারেই দেওয়া উচিত নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে, যেটির সদস্য হবেন সিভিল এভিয়েশন, এয়ার ফোর্স, এবং স্বাধীন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।

তদন্ত রিপোর্ট যেন কেবল কাগজে আটকে না থাকে, বরং দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক, সেটাই সময়ের দাবি।

বাংলাদেশে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অধীনে বেসরকারি ও সরকারিভাবে পরিচালিত বেশকিছু ফ্লাইট ট্রেইনিং স্কুল ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিমানের মান, ফ্লাইটের সময়সূচি, প্রশিক্ষণের ধরন ও পরিবেশ, সবকিছু নিয়ে তদারকি থাকার কথা ঈঅঅই-এর। কিন্তু বাস্তবে, বহু প্রতিষ্ঠান নিয়মের ফাঁক দিয়ে ব্যবসা চালায়, যেখানে সবচেয়ে অবহেলিত হয় নিরাপত্তা।

বিশ্বে যেখানে এভিয়েশন শিক্ষার জন্য কঠোর মানদ- রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশে এখনো সেটি গড়ে ওঠেনি। বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত হয়, কিন্তু তার ফলাফল বা সুপারিশ কতটা বাস্তবায়িত হয়, তা বড় প্রশ্ন।
এই দুর্ঘটনায় যে ২০ তরুণের প্রাণ ঝরে গেল, তারা হতে পারত দেশের সেরা ফাইটার পাইলট, অথবা আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতনামা এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ। কিন্তু তাদের স্বপ্ন থেমে গেল একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষের নিচে। আর যারা গুরুতর আহত, তাদের জীবনযাপন আর কোনোদিন স্বাভাবিক হবে কি না, জানা নেই।

একটি জাতির জন্য সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তার যুবসমাজ। যদি তাদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, এমনকি সুরক্ষাও হুমকির মুখে পড়ে, তাহলে আমাদের উন্নয়নের ভিত্তিই দুর্বল হয়ে পড়ে।
এই দুর্ঘটনা হঠাৎ করে ভুলে যাওয়ার নয়। এখনই সময়, আমরা এই ঘটনাকে শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করি। আমাদের প্রয়োজন-
১. প্রশিক্ষণ বিমান ফ্লাইটের ওপর নতুন করে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ।
২. বসতিপূর্ণ এলাকায় ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞা।
৩. এভিয়েশন প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সিং ও পর্যালোচনার স্বচ্ছ ব্যবস্থা।
৪. পরিবারের সম্মতি ছাড়া কোনো শিক্ষার্থীকে এভিয়েশন ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণ না করানো।
৫. প্রতিটি দুর্ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত ও ফলাফল প্রকাশ।
৬. দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা, যাতে ভবিষ্যতে কেউ দায়িত্বহীনতা দেখাতে সাহস না পায়।
আমাদের উচিত এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত ও জবাবদিহির ব্যবস্থা নিশ্চিত করে ভবিষ্যতে এমন ট্র্যাজেডি যেন আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করা, প্রয়োজন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ। কারণ, প্রতিটি প্রাণের মূল্য অপরিসীম।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!