ঢাকা রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫

রপ্তানির বাজার বিস্তৃত করতে হবে

সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২৫, ১২:২৮ এএম

বিশ্ববাণিজ্যের উত্তাল সময়ে জটিল ও দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পালটা শুল্কের বেড়াজাল থেকে আংশিকভাবে মুক্তি পেয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত ৩৫ শতাংশ পালটা শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। দীর্ঘ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে, যা রপ্তানিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক  বিশ্লেষকেরা।  

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জন্য আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্যভেদে ২ থেকে ১৬ শতাংশ শুল্ক বজায় ছিল। এখন পালটা শুল্ক ২০ শতাংশসহ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশকে দিতে হবে ২২ থেকে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি গন্তব্য। কিন্তু সম্প্রতি কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর শুল্ক হার বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত চাপে পড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে আমাদের পোশাকশিল্পসহ অন্যান্য রপ্তানি পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতায়। একই সময়ে অন্যান্য দেশ তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যাচ্ছে, যা আমাদের বাজার ধরে রাখা আরও কঠিন করে তুলছে।

বাণিজ্য বিশ্লেষকেরা বলছেন, মার্কিন শুল্ক কমিয়ে আনা ইতিবাচক দিক। নতুন করে আরোপিত মার্কিন এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। নানা পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছে, এটা ইতিবাচক। এটা অন্য দেশগুলোর তুলনায় ন্যূনতম, যা বাণিজ্যঝুঁকি হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পালটা শুল্কহার হ্রাস পাওয়া আশাব্যঞ্জক হলেও আত্মতুষ্টির জন্য নয় বরং এটি একটি সুযোগ এবং একই সঙ্গে একটি সতর্কবার্তা।

এ পরিস্থিতিতে কেবল একটি বা দুটি বাজারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানির বাজার বৈচিত্র্য আনা সময়ের দাবি। আমাদের রপ্তানি পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি, উদ্ভাবনী ডিজাইন ও দ্রুত সরবরাহ চেইন গড়ে তোলার পাশাপাশি নতুন বাজার অনুসন্ধান ও প্রবেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে।

এ ছাড়া দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর দিকে নজর দিতে হবে। সরকার কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে সমঝোতা বাড়িয়ে এসব অঞ্চলে বাংলাদেশের পণ্যের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে পারে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির বিষয়টি দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজা জরুরি।

বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিপুল সম্ভাবনা দেখছে দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআই। আফ্রিকার বিশাল এ বাজারে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে বাজার সৃষ্টিসহ বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের লাভবান হওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। কেননা প্রচলিত রপ্তানি পণ্যের বাইরেও আমাদের অনেক পণ্য আফ্রিকায় রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক অর্থনীতির অংশীদার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছে। এ প্রেক্ষাপটে একটি দীর্ঘমেয়াদি রপ্তানি কৌশল প্রয়োজন, যেখানে বাজার বৈচিত্র্য, নীতিগত স্থিতিশীলতা এবং প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। রপ্তানির বাজার বিস্তৃত করতে না পারলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টেকসই রাখা কঠিন হবে।