মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক বাংলাদেশে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ এখন একটি সাধারণ ও নিয়মিত দুর্ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে বাসাবাড়ি, হোটেল-রেস্তোরাঁ, যানবাহন কিংবা সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অগ্নিকা-ের ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় প্রায়শই প্রাণহানি ঘটে, আহত ও পঙ্গু হন বহু মানুষ, ধ্বংস হয় ঘরবাড়ি ও সম্পদ। অনেক ক্ষেত্রে একটি পুরো পরিবারের জীবনে নেমে আসে চিরস্থায়ী অন্ধকার। এসব মর্মান্তিক ঘটনার অন্যতম কারণ হলো মেয়াদোত্তীর্ণ বা ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার।
প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডারের একটি নির্ধারিত আয়ুষ্কাল বা মেয়াদ থাকে, সাধারণত যা ১০ বছর। এই সময়ের পর সিলিন্ডারের গায়ে থাকা ধাতব আবরণে জং ধরতে পারে, ক্ষয় হতে পারে, ভেতরে চাপ সঞ্চারিত হওয়ার ক্ষমতা কমে যায়, এবং ফুটো বা চিড় ধরার সম্ভাবনা তৈরি হয়। ফলে যেকোনো সময় এটি বিস্ফোরিত হয়ে ভয়াবহ অগ্নিকা- ঘটাতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত এলপিজি গ্যাস ২ শতাংশ ও লাইনের প্রাকৃতিক গ্যাস ৫ শতাংশ বাতাসের সংস্পর্শে এলেই তা বিস্ফোরণের ঝুঁকি তৈরি করে। লাইন গ্যাসের চেয়ে ১০-১২ গুণ চাপ কম থাকে সিলিন্ডার গ্যাসে। ফলে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হলে ক্ষয়ক্ষতি খুব বেশি হওয়ার কথা নয়। তবুও দেশে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। এর প্রধান কারণ মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার। এটি রোধ করা না গেলে এই আকস্মিক দূর্ঘটনা প্রতিরোধ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
রূপালী বাংলাদেশের বিশেষ প্রতিবেদন বলছে, মেয়াদোত্তীর্ণ ও ত্রুটিযুক্ত সিলিন্ডার নিয়ে বছরের পর বছর কাজ চললেও এটি নিয়ে যেন কারো মাথাব্যথা নেই। সিলিন্ডারের নামে একেকটি বোমা নিয়ে বসতবাড়িসহ রাস্তার যানবাহনগুলো নিয়মিত চলাচল করছে। এতে করে দিনের পর দিন ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। দেশের বাজারে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৩০টি কোম্পানির প্রায় দুই কোটি গ্যাস সিলিন্ডার রয়েছে বাজারে। মেয়াদ শেষ হলেও হয় না এসবের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এসব সিলিন্ডারের মান পরীক্ষার জন্য অনুমোদিত কোনো পরীক্ষণ কেন্দ্রও গড়ে ওঠেনি।
সিলিন্ডার নামক বোমাগুলোর নিয়মিত তদারকি না হলে দিন দিন এসব আকস্মিক দুর্ঘটনা বাড়তেই থাকবে। প্রতিটি সিলিন্ডারে একটি বারকোড যুক্ত করে এর উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, রিফিল হিস্টোরি ও পরীক্ষার রিপোর্ট সংরক্ষণ করা যেতে পারে। ভোক্তারা মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করে সিলিন্ডারের তথ্য যাচাই করতে পারবেন। সেই সঙ্গে পুরোনো সিলিন্ডার ধ্বংস না করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় রিফারবিশ করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে তোলা যেতে পারে। তবে তা অবশ্যই আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী পরীক্ষা সাপেক্ষে।
মানুষের জীবন ও নিরাপত্তার চেয়ে মূল্যবান কিছু হতে পারে না। একটি গাফিলতি পুরো একটি পরিবার ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই গ্যাস সিলিন্ডারের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি আমাদের প্রত্যেককেই সচেতন হতে হবে।
সরকার, সংশ্লিষ্ট সংস্থা, গ্যাস কোম্পানি এবং ভোক্তাদের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার্থে এখনই সময় দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়ার। সুরক্ষা নিশ্চিতে, গাফিলতির কোনো সুযোগ নেই।আমরা আশা করব, সরকারে সংশ্লিষ্ট বিভাগ এই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখেবে। যথাযথ তদারকির ব্যবস্থা গ্রহণ করে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।