বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রিন্টু আনোয়ার

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৫, ০৮:০৯ এএম

সোশ্যাল মিডিয়ার গুজব রুখতে হবে

রিন্টু আনোয়ার

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৫, ০৮:০৯ এএম

সোশ্যাল মিডিয়া

সোশ্যাল মিডিয়া

সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এআইর আগ্রাসনে আক্রান্ত দেশ-সমাজ। মূল ধারার গণমাধ্যমকে নাস্তানাবুদ করে মারাত্মক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে উপরিউক্ত প্রযুক্তিনির্ভর মাধ্যম দুটি। কিছু একটা বলে বা লিখে দিলেই হয়। কোনো কনটেন্ট দাঁড় করিয়ে দিতে পারলে তো কথাই নেই। সামনের নির্বাচন পর্যন্ত এর জেরে কোথায় গিয়ে ঠেকবে কে জানে। এরই মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীনও তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। সরকারের বিশেষ গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও কিছু শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত প্রায় ১২ মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাক্সিক্ষত উন্নতি হয়নি। বরং দিন দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ফলে দেশের মানুষ চরম বিপাকে। একে সুযোগ হিসেবে ঢাকা-কলকাতাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী ইউটিউবাররা যা ইচ্ছা তা তৈরি করে ছড়াচ্ছে, যা মুহূর্তেই ভাইরালও হয়ে যাচ্ছে। এতে দেশে বা জাতির কী হলো, তা তাদের বিবেচ্য নয়। হিট বা ভাইরাল হওয়া দিয়ে কথা। নিজেদের চ্যানেলে ও ফেসবুকে ‘লাইক-ভিউ’ বাড়িয়ে কিছু ডলার প্রাপ্তির প্রশ্নে তারা লাভবান। নির্বাচন যখন দোরগোড়ায় তখন কেউ নির্বাচন বানচাল করতে, কেউ নির্বাচন পেছাতে তৎপর। এ বিভাজন এখন তাদের কাছে কড়া আইটেম। শেখ হাসিনা পালানোর পর থেকেই আওয়ামী লীগের অলিগার্করা কোমর বেঁধে নেমেছে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ভার্চুয়ালি অপপ্রচারে। দেশের একটি মহলও এতে শামিল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় বেশ পুলক তাদের। তাদের আওয়ামী লীগ থেকে ভালো ফান্ড দেওয়া হচ্ছে-হয়েছে, বলে কথাবার্তা আছে।

ভার্চুয়াল এ রেসে বিএনপি-জামায়াতের সম্পৃক্তার অভিযোগও আছে। তবে, বিএনপির চেয়ে এগিয়ে জামায়াত। তাদের সাংগঠনিক এক্সপার্ট টিম রয়েছে। দলটি এখন তাদের পিআর পদ্ধতির পক্ষে জনমত তৈরিতে বেশ তৎপর। এ দাবির পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালিয়ে অনেক দূর এগিয়েও গেছে। এর বাইরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখা কিছু দেশি-প্রবাসী ইউটিউবারও বেশ কামিয়ে নিচ্ছে। সব ইস্যুতেই কনটেন্ট থাকছে তাদের। ফলে সোশ্যাল মিডিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়ছে  দর্শকরা। ভিউ বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় কনটেন্ট ক্রিয়েটররা ‘সেনা শাসন’ আসছে এমন প্রচারণাও চালাচ্ছে। 

মুখে মুখে নানা সমালোচনা থাকলেও সোশ্যাল মিডিয়াকে অগ্রাহ্য করার সুযোগ আপাতত নেই। এ ছাড়া বর্তমানে ইউটিউব আয়ের একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক হিসাব বলছে, বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ ইউটিউবে কনটেন্ট তৈরি করে মাসে হাজার হাজার ডলার আয় করছেন। ইউটিউবে ১ হাজার ভিউ থেকে আয় হয় ০.৫০ থেকে পাঁচ মার্কিন ডলার পর্যন্ত, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫৫ থেকে ৫৫০ টাকার মতো।

গুজব বা ট্রইস্ট করে ভিডিওর থাম্বনেল যত আকর্ষণীয় হচ্ছে, মানুষের আগ্রহ তত বেশি জাগছে। বাড়ছে ভিউ। দর্শক বেড়ে কনটেন্ট ক্রিয়েটরের আয়ও বাড়ে। এখানে নীতি-নৈতিকতা, সত্য-মিথ্যার তেমন বালাই নেই। বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি অন্বেষণের সুযোগ দিতে পারে, এর সহজলভ্যতার কারণে। তবে, এ সহজলভ্যতার জন্য প্রায়ই ভুল তথ্য ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে তৈরি হয়, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যদিও ভুল তথ্য জীবনের প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করতে পারে, তবে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ভুল তথ্য মানুষের জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ সহজ হয়ে গেছে, কিন্তু অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতা বা অবাস্তব প্রত্যাশার কারণে এটি মানুষের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

এই যোগাযোগগুলো ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু মস্তিষ্কে সেগুলো এনকোড হওয়া এবং নিউরোনাল কার্যকলাপের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি জিন এক্সপ্রেশনে পরিবর্তন ঘটাতে পারে। হাইপোথ্যালামাস একটি নিউরোএন্ডোক্রাইন রিলে কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে, যা স্ট্রেস ফিজিওলজি বা চাপের শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত।

আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্তরা এতে কষ্ট পান। প্রতিপক্ষ  বেজার হন। আবার পরক্ষণে নিজের পক্ষে  গেলে তৃপ্তি অনুভব করেন। সরকারের জন্য গোটা বিষয়টিই বিব্রতকর। সহ্য করতে হচ্ছে। ঠেকানোর পথ না থাকায় সহ্য এবং হজম করতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে ঠেকানোর বা প্রচার হয়ে যাওয়ার পর প্রতিবাদ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কিছু দিন আগে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অপতথ্যের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘ভুল বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য শুধু জনমতকে বিভ্রান্ত করে না বরং রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা ও সামাজিক শান্তিকেও বিঘিœত করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অপতথ্য প্রতিরোধে কেবল রাষ্ট্র নয়, সাধারণ মানুষেরও সচেতন ভূমিকা থাকতে হবে। গণমাধ্যম, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করেই একটি টেকসই ও নৈতিক তথ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।’

সোশ্যাল মিডিয়া প্রায়ই মানুষকে একে অপরের সঙ্গে তুলনা করার সুযোগ তৈরি করে। এটি সামাজিকভাবে বিভেদ এবং হিংস্রতার জন্ম দেয়। মানুষ অন্যের সাফল্য দেখে ঈর্ষান্বিত হয় এবং নিজেকে সেই তুলনায় ছোট মনে করে। আবার অনেকে সফলতার কৃত্রিম চিত্র সৃষ্টি করে অন্যকে নিচু দেখানোর চেষ্টা করে। ফলে সামাজিক সম্পর্কগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সমাজে একধরনের হিংসাত্মক প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর ফেক কনটেন্ট পাওয়া যায়, যেখানে মানুষ নাটকীয় গল্প তৈরি করে সহজেই মানুষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। এটি যেমন তথ্য ও বিনোদনের মাধ্যমে মানুষের  জীবনে সহজতা নিয়ে এসেছে, তেমনি এর নেতিবাচক প্রভাবও কম নয়। সোশ্যাল মিডিয়ার ভুল ব্যবহারে মানুষ মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে, সমাজে বিভেদ ও হিংস্রতা বাড়ছে এবং মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস ও ভুল ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে। সত্য বা বাস্তবতা না থাকলেও এ ধরনের কনটেন্টগুলোয় অতি-আকর্ষণীয় গল্প তৈরি করা হয়, যা সহজে ভাইরাল হয় এবং প্রচুর অর্থ আয় করে। কিন্তু এ গল্পগুলোয় বাস্তবতা নেই।

এই ভুয়া কনটেন্ট সমাজে একটি ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করে, যেখানে মানুষ বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে। সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের তথ্যের সহজলভ্যতা দিয়েছে, কিন্তু সেই তথ্য কতটুকু সঠিক, তা যাচাই করার প্রবণতা কমে যাচ্ছে। ভুয়া খবর, অতিরঞ্জিত কাহিনি বা ভুল তথ্য শেয়ার করার ফলে সমাজে অবিশ্বাসের বার্তাবরণ তৈরি হচ্ছে। মানুষ অনেক সময় ভুল ধারণা নিয়ে কাজ করছে এবং ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।

ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (সাবেক টুইটার) কিংবা টিকটক প্রতিদিনই এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে নানা গুজব, বিকৃত তথ্য এবং উদ্দেশ্যমূলক বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট। বর্তমান ডিজিটাল যুগে তথ্য যাচাই (ফ্যাক্ট-চেকিং) ও গবেষণাভিত্তিক প্রতিবেদন তৈরি অত্যন্ত জরুরি। গুজব ও অপতথ্য রোধে ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়াতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ সঠিক তথ্য চিনে নিতে পারে। ভুয়া অ্যাকাউন্ট শনাক্ত ও রিপোর্ট করা, বিশ্বাসযোগ্য প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার এবং এআই প্রযুক্তি দিয়ে তথ্য বিশ্লেষণ করাও এখন সময়ের দাবি। একই সঙ্গে সাইবার অপরাধ দমনে কঠোর আইন প্রয়োগ, অনলাইনে নজরদারি এবং কমিউনিটি পর্যায়ে রিপোর্টিং সিস্টেম চালু করা যায়।

এসব তথ্যের অনেক যাচাই-বাছাই না করে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে নিচ্ছেন, ফলে তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তি, আতঙ্ক এবং সামাজিক উত্তেজনা। তাতে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের কিছু যায়-আসে না। যেমন সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়, দেশের কয়েকটি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে। ভিডিওটি শেয়ার, মন্তব্য আর রিঅ্যাকশনে ভেসে গেছে মুহূর্তেই। অথচ ভিডিওটির কোনো সত্যতা ছিল না, ছিল না কোনো নির্ভরযোগ্য উৎস। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভিডিওটি তৈরির মূল উদ্দেশ্য ছিল জনমনে ভীতি তৈরি এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা দুর্বল করা।

এ ধরনের গুজব শুধু অর্থনৈতিক খাতেই নয়, ধর্মীয়, রাজনৈতিক এমনকি স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিষয়েও প্রতিনিয়ত ছড়ানো হচ্ছে নানা ভুল তথ্য। ‘কোনো এক তারকা মারা গেছেন’ এমন গুজব অথবা ‘কোনো নতুন ওষুধ খেলেই সারবে করোনা’, আবার কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিকে ঘিরে এমন মিথ্যা তথ্য বহু মানুষ বিশ্বাস করে ফেলছে। এর বাইরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে এমন সব রিয়েলিস্টিক ভিডিও বানানো সম্ভব, যেগুলো দেখে সাধারণ মানুষের পক্ষে  আসল নাকি নকল বোঝা প্রায় অসম্ভব। ফলে মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া খুব সহজ হয়ে গেছে। ফলে সরকারের উচিত একটি কেন্দ্রীয় ফ্যাক্টচেকিং ইউনিট গঠন করা। অন্য দেশে ভুল তথ্য যাচাইয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি ওয়েবপোর্টাল রয়েছে। যেখানে প্রতিদিনের ভুল তথ্য যাচাই করে সঠিক তথ্য জানানো হয়। ততক্ষণে যার যা ক্ষতি হওয়ার সেটা হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে যতদূর সম্ভব সাবধানে থাকা ছাড়া আপাতত বিকল্প নেই।

রিন্টু আনোয়ার, সাংবাদিক ও কলামিস্ট

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!