মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সিরাজুল ইসলাম

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫, ০১:২৩ এএম

ডাকসু নির্বাচন বানচালে ষড়যন্ত্র হচ্ছে?

সিরাজুল ইসলাম

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫, ০১:২৩ এএম

ডাকসু নির্বাচন বানচালে ষড়যন্ত্র হচ্ছে?

আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ এবং হল সংসদের ভিপি এবং জিএসসহ বিভিন্ন পদে নেতা নির্বাচন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সে জায়গা থেকে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠান এখন সময়ের প্রশ্ন মাত্র। নির্বাচনে বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন নিজেদের পক্ষে শিক্ষার্থী ভোটারদের সমর্থন টানতে। মঙ্গলবার সকাল থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হবে; সেক্ষেত্রে এখন থেকে ভোটগ্রহণ শুরু করতে প্রকৃতপক্ষে ঘণ্টার কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে। অর্থাৎ এখন আর দিনের হিসাব নয়, কত ঘণ্টা পরে ভোটগ্রহণ শুরু হবে তার হিসাব-নিকাশ চলছে। ভোটগ্রহণের জন্য যেমন সবাই প্রস্তুত, তেমনি ভোট দিতেও সবাই প্রস্তুত। 

কিন্তু তারপরও কথা থেকে যাচ্ছে। সেই কথা আর কিছু নয়, নির্বাচন বানচালের একটা আশঙ্কা। বিভিন্ন মহল থেকে এই আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। এ নিয়ে এই নির্বাচনে অংশ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ দুটি পক্ষ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। আরও কিছু জায়গা থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে নির্বাচন বানচালের। কেউ কেউ বলছেন, ১৯৭৩ সালের মতো নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে। পরিষ্কার করে বলা হচ্ছে, নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের পেছনে রয়েছে পতিত আওয়ামী লীগ ও ভারত। আরও বলা হচ্ছে, ডাকসু নির্বাচনকে বানচাল করে দেওয়ার জন্য বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা ও আওয়ামী লীগের কিছু সন্ত্রাসী চক্রান্ত করছে।

এর মধ্যে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত প্যানেলের বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের বলেছেন, ১৯৭৩ সালের মতো ডাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন। ৩ সেপ্টেম্বর বুধবার মধুর ক্যান্টিনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আব্দুল কাদের বলেন, ‘১৯৭৩ সালে ডাকসু নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করা হয়েছিল; গুলি, বোমাবর্ষণ হয়েছিল। পরে প্রশাসন ওই ডাকসু নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা করে। আজকেও ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গভীর ষড়যন্ত্র এবং বৃহৎ এক রাজনৈতিক শক্তি নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে।’ ডাকসুর এই ভিপি শুধু ষড়যন্ত্রের বিষয়ে কথা বলেননি। তিনি ডাকসু নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। ডাকসুর এই প্রার্থী বলেন, ‘ভোটারদের আগ্রহ ও অনুকূল পরিবেশ অনুযায়ী, সুবিধামতো ডাকসু নির্বাচন বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা যে প্রস্তাব দিচ্ছি, ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে তার বিপরীত কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। বিশেষ কোনো গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে এবং নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছেন তারা।’

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান আবিদ। তিনি বলেছেন, নির্বাচন ঘিরে মব তৈরি ও সাইবার বুলিংয়ের সংখ্যা বেড়েছে। আবিদুল ইসলাম সুস্পষ্টভাবে অভিযোগ করেন, কমিশন দুর্বল ভূমিকা পালন করছে এবং প্রশাসন সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তিনি বলেন, এই নির্বাচন ষড়যন্ত্রের মুখে পড়লে জাতীয় নির্বাচনও ষড়যন্ত্রের মুখে পড়বে। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে তিনি নির্বাচন নির্বিঘœ করার জন্য সরকারের কার্যকর ভূমিকার আহ্বান জানান। 

একই রকমের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা। শিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম গত বৃহস্পতিবার প্রচারণাকালে বলেছেন, ভোট বানচালের চেষ্টা চলছে। তবে সব প্রার্থী দায়িত্বশীল আচরণ করলে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। 

তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের পরিণতি শেখ হাসিনার থেকেও খারাপ হবে। তিনি অভিযোগ করেন, সাইবার বুলিং, প্রপাগান্ডা এবং বহিরাগতদের মাধ্যমে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব বিষয়ে নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। 

এদিকে, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীর সংসদ প্যানেলের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার বলেছেন, ২০১৯ সালের মতো কারচুপি হলে শিক্ষার্থীরা এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করবে। আগাম ব্যালট বাক্স পূরণ বা ভোট কারচুপি করার চেষ্টা করা হলে তা ছাত্র সমাজ মেনে নেবে না। তিনিও অনলাইনে প্রপাগান্ডা ছড়ানোর অভিযোগ করেন এবং অনেকে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন। 

ডাকসু নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও এই যে অভিযোগ এগুলো কিন্তু একেবারে উপেক্ষা করার মতো বিষয় নয়। বরং ক্যাম্পাসে অবস্থানকারী ছাত্রনেতা ও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন প্রার্থীর অভিযোগ গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত। কারণ জুলাই আন্দোলন সফল হওয়ার পর ডাকসু নির্বাচনই বাংলাদেশের প্রথম কোনো নির্বাচন। এই নির্বাচনের সফলতা ব্যর্থতার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। পরিষ্কার করে বললে বলা যাবে, ডাকসু নির্বাচন যদি অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু ও সুন্দর হয় তাহলে আগামী জাতীয় নির্বাচনও একই ধারায় অনুষ্ঠিত হবে। আর যদি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করা হয় কিংবা ষড়যন্ত্র করে বানচাল করে দেওয়া হয় তাহলে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে মারাত্মক রকমের প্রশ্ন তৈরি হবে।

অল্প কথায়-ডাকসু নির্বাচন সফল হলে জাতীয় নির্বাচনের পথ খুলে যাবে। আর ডাকসু নির্বাচন ব্যর্থ বা বানচাল হলে জাতীয় নির্বাচনের পথ রুদ্ধ হবে। ফলে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, আমরা যদি দেশকে গণতান্ত্রিক পথে ফিরিয়ে নিতে চাই তাহলে ডাকসু নির্বাচন সফল করার কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে দেশের সর্বমহলের উচিত হচ্ছে- নির্বাচন সফল করার জন্য সর্বাত্মক ও কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা।

সিরাজুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!