শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৫, ০৩:২৭ এএম

অটোরিকশার দৌরাত্ম্য থামাতে নীতিমালা জরুরি

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৫, ০৩:২৭ এএম

অটোরিকশার দৌরাত্ম্য থামাতে নীতিমালা জরুরি

রাজধানী ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম্য এখন এক অনিবার্য বাস্তবতা। এক সময় গলিপথে সীমাবদ্ধ থাকা এই যান এখন রাজধানীর প্রধান সড়ক, ফ্লাইওভার এমনকি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সামনেও বেপরোয়া গতিতে ছুটে চলেছে। দয়াগঞ্জ, দোলাইরপাড়, যাত্রাবাড়ী, মগবাজার-মৌচাক কিংবা ফার্মগেটসহ ঢাকার প্রায় প্রতিটি ব্যস্ত মোড়ে এখন একই দৃশ্য। সিগন্যাল অমান্য, উল্টো পথে প্রবেশ, হঠাৎ ইউটার্ন, দ্রুত গতি কিংবা আকস্মিক ব্রেক, সব মিলিয়ে সড়কে এক অরাজক পরিস্থিতির জন্ম দিচ্ছে এই বাহন। প্রতিদিন সৃষ্ট হচ্ছে ভয়াবহ যানজট, ঘটছে ছোট-বড় অসংখ্য দুর্ঘটনা, বিপন্ন হচ্ছে পথচারী থেকে শুরু করে গণপরিবহনের চালক-যাত্রী সকলেই।

২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ঐতিহাসিক আন্দোলনের পর দ্রুতই ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ পাস হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো, দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা কমানো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আইনটি আজ কার্যত কাগুজে আইন হয়েই আছে। কড়াকড়ি প্রয়োগের অভাবে এবং বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় অটোরিকশাগুলো আগের তুলনায় আরও বেশি দাপটের সঙ্গে রাস্তায় নেমেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ অটোরিকশার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রতিদিন শত শত অভিযান চলার পরও কেন সড়কের চিত্র বদলাচ্ছে না? উত্তর স্পষ্ট: বাহনের সংখ্যা এত বিপুল এবং চাহিদা এত ব্যাপক যে আংশিক পদক্ষেপ কার্যকর হতে পারছে না।

ঢাকায় বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। এদের অধিকাংশই নিবন্ধনবিহীন, নিরাপত্তাহীন এবং সম্পূর্ণ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে পরিচালিত। অটোরিকশার ব্রেকিং সিস্টেম দুর্বল, কাঠামো অনিরাপদ এবং ব্যাটারি সংযোজনের কারণে এদের সেন্টার অব গ্রাভিটি ভেঙে যায়। ফলে দ্রুত বাঁক নিলে সহজেই উল্টে যেতে পারে। অন্যদিকে চালকেরা পেশাগত প্রশিক্ষণহীন। আইন মানার সংস্কৃতিও নেই। এরা সিগন্যাল অমান্য করে, উল্টো পথে চলে, হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে, যার ফলে প্রধান সড়কে চলাচলরত গাড়ির চালকেরা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে থাকেন।

কিন্তু সমস্যা শুধু সড়কের বিশৃঙ্খলা বা দুর্ঘটনা ঝুঁকির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার যানজট প্রতিদিন আমাদের অর্থনীতিকে শত কোটি টাকার ক্ষতির মুখে ফেলে। কাজের ঘণ্টা নষ্ট হয়, উৎপাদনশীলতা কমে যায়, জ্বালানি অপচয় হয়। উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত অর্থনীতির পথে এগোতে চাইলে প্রথমেই আমাদের সড়ক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। অথচ বাস্তবে ঘটছে উল্টোটা। অটোরিকশার অনিয়ন্ত্রিত চলাচল ঢাকার সড়ক ব্যবস্থাকে অচল করে দিচ্ছে।

ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকাও এখানে সীমিত। দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বারবার অভিযোগ করেছেন, অটোরিকশার চালকেরা দলবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, কান্নাকাটি করে সহানুভূতি আদায় করে। তা ছাড়া, এক জায়গায় অভিযান চালালেই অন্য জায়গায় এরা উল্টো পথে ঢুকে পড়ে। ফলে স্থায়ী সমাধান আসে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা ছাড়া হঠাৎ করে অটোরিকশা বন্ধ করা সম্ভব নয়। নগরবাসীকে টেকসই ও নির্ভরযোগ্য গণপরিবহনের বিকল্প না দিয়ে শুধু দমনমূলক পদক্ষেপ কার্যকর হবে না।

অটোরিকশা যেমন নি¤œবিত্ত মানুষের জীবিকার সঙ্গে জড়িয়ে আছে, অন্যদিকে এটি শহরের শৃঙ্খলার জন্য বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্র যদি বিকল্প কর্মসংস্থান, বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা ও কঠোর আইনের প্রয়োগ একসঙ্গে নিশ্চিত না করে, তবে এই সমস্যা শুধু বাড়তেই থাকবে।

ঢাকা এখন দ্রুত বর্ধনশীল মেগাসিটি। অথচ নগর জীবনের স্বাভাবিক গতি প্রতিদিন ব্যাহত হচ্ছে একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক যানব্যবস্থার কারণে। আমরা মনে করি, উন্নত নগরায়ণ ও নিরাপদ সড়কের স্বপ্ন পূরণ করতে হলে অটোরিকশার এই দৌরাত্ম্যের অবসান জরুরি। সরকার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবহন বিশেষজ্ঞসহ সবপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এটি সম্ভব নয়। সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই। এখনই শক্ত হাতে উদ্যোগ না নিলে আগামী দিনের ঢাকার সড়ক আরও অচল হয়ে পড়বে। আর তার খেসারত দিতে হবে সাধারণ মানুষকেই।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!