জীবনের দুঃসময়ে আমরা প্রায়ই ভেঙে পড়ি। কিছুই ভালো লাগে না। কেউ দৌড়াই চিকিৎসকের কাছে, কেউ আবার মানুষের সঙ্গে কষ্টের কথা ভাগাভাগি করে শান্তি খোঁজেন। অথচ খুব কম মানুষই সমস্যা সমাধানের প্রথম উপায় হিসেবে আল্লাহর দিকে ফিরে যান।
প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, আল্লাহর জিকির ছাড়া অতিরিক্ত কথা বলো না। কারণ, আল্লাহর স্মরণ ছাড়া বেশি কথা বললে হৃদয় কঠিন হয়ে যায়। আর কঠিন হৃদয়ওয়ালাই আল্লাহ থেকে সবচেয়ে দূরে থাকে। (তিরমিজি)
তিনি আরও বলেছেন, যে ঘরে আল্লাহর স্মরণ করা হয় আর যে ঘরে করা হয় নাÑ এই দুই ঘরের পার্থক্য জীবিত ও মৃত মানুষের মতো। (মুসলিম)
নিচে নবী করিম (সা.)-এর শেখানো এমন সাতটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া তুলে ধরা হলো, যা প্রত্যেক মুসলমানের জানা ও আমল করা জরুরি।
১. সর্বোত্তম জিকির
রাসুল (সা.) বলেছেন, সর্বোত্তম জিকির হলোÑ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই)। আর সর্বোত্তম দোয়া হলোÑ আলহামদুলিল্লাহ (সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য)। (তিরমিজি)
২. আল্লাহর মহিমা বর্ণনার দোয়া
সুবহানাল্লাহ ওয়া বিহামদিহি আদাদা খালকিহি ওয়া রিদা নাফসিহি ওয়া জিনাতা আরশিহি ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি।
অর্থ: আল্লাহ পবিত্র, আমি তার প্রশংসা করছি তার সৃষ্টির সংখ্যা অনুযায়ী, তার সন্তুষ্টি অনুযায়ী, তার আরশের ওজন অনুযায়ী এবং তার বাণী লেখার জন্য যত কালির প্রয়োজন তার সমান। (মুসলিম)
৩. দুনিয়া ও আখেরাতের মঙ্গল কামনার দোয়া
উচ্চারণ : রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাওঁ ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়া ক্বিনা আযাবান্নার।
অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করো, আখেরাতেও কল্যাণ দান করো এবং আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো। (বুখারি ও মুসলিম)
৪. ক্ষমা প্রার্থনার সর্বোত্তম দোয়া
রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার সর্বোত্তম দোয়া হলোÑ
আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আ’লা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাস্তাতাতু, আউজুবিকা মিন শার্রি মা সানাতু, আবু উলাকা বি নিআমাতিকা আলাইয়া, ওয়া আবু উলাকা বি জানবি, ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আন্তা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আমার রব। আপনার ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমি আপনার বান্দা। আপনার অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির প্রতি যথাসাধ্য বিশ্বস্ত থাকার চেষ্টা করি। আমি আমার কৃত খারাপ কাজের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনার অনুগ্রহ স্বীকার করছি এবং আমার গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তাই আমাকে ক্ষমা করুন, কারণ আপনার ছাড়া কেউ গুনাহ মাফ করতে পারে না।
যে ব্যক্তি এই দোয়াটি রাতে পড়ে মারা যায়, সে জান্নাতে যাবে। আর সকালে পড়ে মারা গেলে তার প্রতিদানও একই হবে। (বুখারি)
৫. নিরাপত্তার দোয়া
রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার এই দোয়াটি পড়ে, তাকে কোনো অমঙ্গল স্পর্শ করতে পারে না।
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মা’আসমিহি শাইউঁ ফিল আরদি ওয়ালা ফিসসামা’ ওয়াহুয়াস সামিউল আলিম।
অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি, তার নামের বরকতে আকাশ ও জমিনের কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (আবু দাউদ ও তিরমিজি)
৬. হতাশা ও দুঃখ দূর করার দোয়া
রাসুল (সা.) বলেছেন, নবী ইউনুস (আ.) যখন মাছের পেটে ছিলেন, তখন তিনি দোয়া করেছিলেনÑ লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইননি কুনতু মিনাজ্জালিমিন।
অর্থ: আপনার ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আপনি পবিত্র, আমি নিশ্চয়ই অন্যায়কারীদের একজন ছিলাম।
রাসুল (সা.) বলেন, কোনো মুসলমান এ দোয়াটি পড়ে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ তার দোয়ায় সাড়া দেন। (তিরমিজি)
৭. অন্তরের প্রশান্তির দোয়া
আবু মূসা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, আমি কি তোমাকে জান্নাতের ভা-ারসম একটি বাক্য শেখাব না? তিনি বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল! নবী করিম (সা.) বললেন, বলোÑ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কারো কোনো শক্তি বা ক্ষমতা নেই। (বুখারি ও মুসলিম)

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন