চিত্রনায়ক মামনুন হাসান ইমন। মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করে নাম লেখিয়েছেন ছোট ও বড় পর্দায়। ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘লাল টিপ’ ও ‘পদ্ম পাতার জল’ সিনেমার পাশাপাশি সর্বশেষ ওয়েব ফিল্ম ‘মায়া’য় অভিনয় করে তিনি দর্শকের মন জয় করেছেন। সম্প্রতি সিনেমা ও বিজ্ঞাপনের কাজ শেষে পরিবারসহ আমেরিকায় বেড়াতে গিয়ে ইমন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে খোলামেলা আলাপচারিতায় অংশ নিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রকিবুল ইসলাম আফ্রিদি
ব্যস্ততা কি নিয়ে?
আলহামদুলিল্লাহ, ভালো ব্যস্ততা চলছে। এরই মধ্যে দুটি সিনেমার শুটিং শেষ করলাম এবং কিছু বিজ্ঞাপনের শুটিং করেছি। তারপর আমেরিকায় বেড়াতে আসলাম। সবকিছু মিলিয়ে ভালো আছি।
‘ডাইরেক্ট অ্যাটাক’ মুক্তি পেয়েছে। প্রচারণায় নেই কেন?
বেশ অনেক বছর আগে সিনেমাটির শুটিং করা হয়েছিল। আগে সিনেমাটি কেন মুক্তি পাইনি এটা আসলে আমি জানি না। প্রযোজক ও পরিচালক ভালো বলতে পারবেন। এই সিনেমাটা নিয়ে আমার কোনো আইডিয়া নেই। প্রচারণা বা মুক্তির বিষয়ে আমার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। এখন ভালো ভালো সিনেমা মুক্তি দিতে হবে। তারপরও এই সিনেমার জন্য শুভকামনা।
অভিনয়ে প্রেরণা কে ছিল?
আমার আইডল ছিলেন নোবেল (আদিল হোসেন নোবেল) ভাই। মডেলিংয়ে ভালো কাজ করছিলাম, তখন হঠাৎ নাটকে সুযোগ পেলাম। কিন্তু তখন অভিনয়ের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই শুরুতে তেমন ভালো করতে পারিনি। এরপর জাহিদ হাসান, মাহফুজ, তৌকীর আহমেদ, হুমায়ুন ফরিদী ভাইসহ সবার অভিনয় মনোযোগ দিয়ে দেখা শুরু করলাম। তাদের দেখে বাড়িতে চর্চা করতাম। ধীরে ধীরে অভিনয়ের প্রতি নেশা তৈরি হলো, মনে হলো এটা একটা চ্যালেঞ্জ; আমাকে এটা করতেই হবে। সেই আগ্রহ থেকেই অভিনয়ে পথচলা শুরু, যা এখনো চলছে।
ভালো চরিত্র বাছাই করার মানদণ্ড কী?
আগে যখন নতুন ছিলাম তখন সিনেমার বিষয়ে বুঝতাম না। সর্বশেষ পাঁচ বছর ধরে চরিত্র নির্বাচনে অনেক চিন্তাভাবনা করি। যেমন ‘পাসওয়ার্ড’ সিনেমা থেকে শুরু হলো আমার চরিত্র বাছাই করা। এরপর ‘মায়া’ ওয়েব ফিল্ম করলাম। এই কাজটিতে প্রায় ১৫টির মতো অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। চরিত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমার চরিত্রটা কেমন; সেটা দর্শকের কাছে কতটা পৌঁছাবে, কতটা চ্যালেঞ্জিং। শুধু আসা-যাওয়া বা গানের দৃশ্যে থাকা চরিত্রে আর কাজ করছি না। বর্তমানে অনেক বছর আগের পুরোনো সিনেমা মুক্তি দেয়, এটা আবার আমার জন্য সমস্যা হয়ে যায়।
ওটিটি
‘মায়া’ ওয়েব ফিল্মে কাজ করে বেশ সাড়া পেয়েছি। আমার ইচ্ছা আছে ওটিটিতে কাজ করার। এই প্ল্যাটফর্মে কাজ করে অনেক মজা পেয়েছি। অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সেই চ্যালেঞ্জটা আমি নিতে চাই। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ওটিটিতে অবশ্যই কাজ করতে চাই।
শিল্পী সমিতির ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক পদে আছেন। কিন্তু খেলাধুলা নিয়ে ভূমিকা দেখছি না কেন?
আমি ভীষণ খেলাপাগল একজন মানুষ। সর্বশেষ এক বছরে খেলাধুলার মতো পরিবেশ-পরিস্থিতি ছিল না। এবারের ডিসেম্বরে যখন শীত পড়বে তখন ইচ্ছা আছে ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের আয়োজন করব। এ রকম প্রচেষ্টা আমি নিয়েছিলাম কিন্তু হয়নি। ব্যাডমিন্টনের পাশাপাশি ফুটবল, ক্রিকেট খেলা নিয়েও একটি পরিকল্পনা আছে। এই শীতে এগুলো নিয়ে একটু আগাতে চাই।
আগামী শিল্পী সমিতির নির্বাচন করবেন?
এখনই বলতে পারছি না। আগামীকাল কি ঘটবে সেটাই যেহেতু বলতে পারছি না আর শিল্পী সমিতির নির্বাচন তো এখনো লম্বা সময় আছে। তখন অবস্থা বুঝে একটা সিদ্ধান্ত নেব। ভবিষ্যতের কথা বলতে পারছি না। করতেও পারি, নাও করতে পারি।
আমেরিকায় সিনেমা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে?
আসলে চলচ্চিত্রের মানুষেরা যখন একসঙ্গে হয়ে যায়, তখন অনেক আড্ডা-আলোচনা হয়। আহমেদ শরীফ ভাইয়ের সঙ্গে জায়েদ ভাই সবাইকে দাওয়াত দিয়েছিল। আমরা সবাই যখন গেলাম তার সিনেমার জীবনের অনেক বর্ণাঢ্য গল্প শুনলাম। তারপরও এখন একসঙ্গে কাজ হবে কিনা বলতে পারছি না; হতেও পারে।
শুরুর সময়ের ছোট পারিশ্রমিক আর বড় স্বপ্নের গল্পটা কেমন ছিল?
আমি যখন মডেলিং থেকে অভিনয় নাম লেখাই তখন মডেল হিসেবে মোটামুটি সবাই আমাকে চিনত। নাটক দিয়েই ক্যারিয়ার শুরু। তখন কখনোই টাকার পরিমাণ পরিচালককে জিজ্ঞাসা করতাম না। অভিনয় করতাম মন দিয়ে। পরিচালককে যথেষ্ট সহযোগিতা করতাম। শুটিং দুই দিনের জায়গায় তিন দিন হলেও কোনো অভিযোগ দিতাম না। অভিনয়ের প্রতি সেই অন্তঃপ্রাণ ভালোবাসা ছিল। তখন কাজকে প্রাধান্য দিতাম।
চলচ্চিত্রের অগ্রগতি সম্পর্কে আপনার মত কী?
আমাদের এখন শুধু ঈদে সিনেমা মুক্তি পায়। আমাদের অনেক সিনেমা এবং কোয়ালিটিফুল সিনেমা নির্মাণ করতে হবে। যে সকল পরিচালক এখন নিয়মিত সিনেমা নির্মাণ করছেন, তাদের আরও বহু তারকাভিনেতাকে নিয়ে সিনেমা বানানো দরকার। সবাইকে দিয়ে একসঙ্গে কাজ করলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিটা আরও বড় হবে। যেমন আহমেদ শরীফ ভাই, তার সঙ্গে গল্প করে বুঝলাম তার অভিনয়ের খুদা মরে যায়নি এখনো। সেইসঙ্গে আমিন খান, আলেকজান্ডার ভাই, এই অভিনেতাগুলো তৈরি আছেন। নতুন-পুরোনো শিল্পীদের সমন্বয়ে কাজ করা গেলে ইন্ডাস্ট্রিটা আবারও ঘুরে দাঁড়াবে। এ বিষয়ে অবশ্যই পরিচালক এবং প্রযোজকদের নজর দিতে হবে।
আপনার জন্য অভিনয় শিল্প নাকি জীবনের অংশ?
অভিনয়টা এই মুহূর্তে আমার জীবনের একটা অংশ। কারণ অভিনয় ছাড়া আমি থাকতে পারব না। যতদিন বাঁচব অভিনয় করতে চাই।
আমেরিকায় স্থায়ী হচ্ছেন?
না না, আমি স্থায়ী হচ্ছি না। এর আগেও বিভিন্ন কাজে অনেকবার আমেরিকা এসেছিলাম। আমার পরিবার এই প্রথম আমার সঙ্গে এসেছেন। পরিবার নিয়ে একটু ঘুরতে আসলাম এ জন্য একটু লম্বা সময় থাকছি। খুব শিগগিরই দেশে ফিরব।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন