দীর্ঘদিন পর উপকূলের জেলেদের জালে ধরা পড়তে শুরু করেছে আশানুরূপ রুপালি ইলিশ। তারপরও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। তাই ইলিশের এলাকা উপকূলের মানুষ স্বাদ নিতে পারছেন না। তবে পর্যাপ্ত সরবারহ বাড়লে ইলিশের দাম কিছুটা কমতে পারে বলে জানিয়েছেন মৎস্য সংশ্লিষ্টরা।
জেলেরা জানিয়েছেন, গত ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষে গভীর সমুদ্রে যায় জেলেরা। এরপর বৈরী আবহাওয়ার কারণে ৫ দফা সাগর গিয়ে খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে। এতে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েন জেলেরা। তবে সর্বশেষ ৫ জুলাইয়ের পর থেকে সাগরে যাওয়া বেশির জেলেই ফিরেছেন আশানুরূপ বড় সাইজের ইলিশ নিয়ে। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে জেলেপল্লীতে। ইলিশের চড়া মূল্যে মৎস্য সংশ্লিষ্টরা খুশি হলেও কেনার সামর্থ্য হারিয়েছেন উপকূলের সাধারণ মানুষ।
বিসমিল্লাহ-১ ট্রলারের মাঝি একলাস গাজী বলেন, ‘দীর্ঘ ৫৮ দিন অবরোধ শেষে বৈরী আবহাওয়ার কারণে বারবার ঘাটে ফিরে এসেছি। কয়েকটি ট্রলার কিছু মাছ পেয়েছে। বেশির ভাগ ট্রলার এখনো মাছের দেখা পায়নি। সবাই মাছ পেলে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা কেজি দরে। ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ হাজার টাকা। ৫০০-৭০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা এবং ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা। জাটকা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে।
আলীপুরের খুচরা মাছ বাজারে কথা হয় মহিপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মোস্তাফিজুর রহমান টুকুর সাথে। তিনি বলেন, আমরা ইলিশের এলাকায় বসবাস করেও কিনতে পারছি না। বর্তমানে যে দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে, সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নাই।
ওই বাজারের ক্রেতা মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘আপাতত ইলিশ কেনার সামার্থ্য নেই। দাম কমলে কিনব, এখন সামুদ্রিক অন্যান্য মাছ কিনছি। ’
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে কুয়াকাটা, মহিপুর ও আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে বিক্রি হয়েছে ১২২ মেট্রিক টন ইলিশ। তারপরও ইলিশের চড়া মূল্য থাকার কারণ হিসেবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম এবং ইলিশ শিকারে জেলেদের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির যুক্তি দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ট্রলার মালিকদের দাবি এখনো অধিকাংশ ট্রলার ইলিশের দেখা পায়নি। হাতে গোনা কয়েকটি ট্রলার কিছু ইলিশ পেয়েছে। সব জেলের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়লে দাম কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে আলীপুর ও মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম থাকায় চড়া মূল্যে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। আমার জানা মতে, এখনো সব মাছ পায়নি। মাছের সরবরাহ বাড়লে দাম কমতে পারে।
এ প্রসঙ্গে কলাপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে সমুদ্রের উষ্ণায়ন কমায় সব প্রজাতির মাছ তীরের দিকে চলে এসেছে। ফলে জেলেরা আশানুরূপ ইলিশ পাচ্ছে। ইলিশের সরবারহ আরও বাড়লে দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালে চলে আসবে।