মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শৃঙ্খলা ও মনিটরিং ঘাটতির চিত্র যেন দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতা ও ইচ্ছেমতো চলাফেরার কারণে শিক্ষার্থীরা বারবার বঞ্চিত হচ্ছে পাঠদান থেকে।
গত সোমবার বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটে উপজেলার টেংগারচর ইউনিয়নের মিরেরগাঁও ৪৭নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে এমনই চিত্র দেখা গেছে। উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের দেখেই শিক্ষকরা হুড়োহুড়ি করে শ্রেণিকক্ষে ঢুকতে শুরু করেন।
এ সময় বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে কয়েকজন শিক্ষককে বসে থাকতে দেখা গেলেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ডালিয়া আক্তার উপস্থিত ছিলেন না। শিক্ষার্থীরা জানান, তিনি ওয়াশরুমে গেছেন। তবে তার জন্য ২০ মিনিট অপেক্ষার পরও প্রধান শিক্ষককে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি বিশেষ কাজে উত্তরশাহাপুরে আছেন।
শ্রেণিকক্ষে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা বিনা তত্ত্বাবধানে বসে আছে, রোলকলও হয়নি। বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানায়, দুপুর ১টা বেজে গেলেও কোনো ক্লাস শুরু হয়নি। শিক্ষকরা বেলা ১টার পর শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেন। যেসব শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেন তারাও সেখান মোবাইল ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
বিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস টাইম দুপুর ১২টা ১০ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নির্ধারিত। কিন্তু অভিযোগ অনুযায়ী, টিফিনের আগে দুটি ক্লাস হওয়ার কথা থাকলেও কোনো ক্লাস হয়নি। এমন অভিযোগ আগে উঠলেও এবার তা সরজমিন প্রমাণ মিলেছে।
জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ডালিয়া আক্তার কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তবে তিনি দাবি করেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসের একজন কর্মকর্তা স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন, সে জন্য অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিলেন তারা। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই কর্মকর্তা বেলা ১২টার আগেই বিদ্যালয় ত্যাগ করেন।
প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে যেখানে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে, সেখানে মাঠপর্যায়ে এমন দায়িত্বহীনতা ও শৃঙ্খলার অভাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির ঘাটতির দিকেই ইঙ্গিত করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহানাজ পারভিন বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছি। আমি প্রাথমিক অবস্থায় ওই বিদ্যালয়কে কারন দর্শানোর জন্য (শোকজ) পত্র রেডি করেছি। কেন শিক্ষকরা ক্লাসটাইমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান না করে দাপ্তরিক কাজ করবে? প্রতি মাসে মিটিং তাদের এ বিষয়ে সচেতন করার পরও এমন কাজ করছে। এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :