চট্টগ্রামের সীতাকু- উপজেলায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। প্রতিদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভিড় করছে জ্বরে আক্রান্ত শত শত মানুষ। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, এক-একটি পরিবারে একাধিক সদস্য একসঙ্গে আক্রান্ত হচ্ছে জ্বর ও শরীর ব্যথায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ অসংখ্য রোগী জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে। বহির্বিভাগে দেখা গেছে লম্বা লাইন। রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত বলে সন্দেহ করছেন চিকিৎসকরা। জ্বরের প্রকোপ বাড়লেও সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
তাদের অভিযোগ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মশক নিধনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। মাঝেমধ্যে লোকদেখানো ফগিং করলেও তা খুবই সীমিত এবং এলাকা নির্দিষ্ট। বহু এলাকায় বছরের পর বছর কোনো ধরনের স্প্রে কার্যক্রম চালানো হয়নি।
এক বাসিন্দা বলেন, দিনের বেলাতেও মশার কামড়ে টেকা যায় না। রাতে তো ঘুমাতেই পারি না। বাচ্চাদের জন্য খুব চিন্তায় আছি। অথচ প্রশাসনের তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। ১২ বছর বয়সি নাদিয়া সুলতানার অভিভাবক জানান, টানা ৪-৫ দিন ১০৪-১০৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় জ্বরে ভুগেছে সে। অ্যান্টিবায়োটিকের পর জ্বর কিছুটা কমলেও শরীরের ব্যথা ও দুর্বলতা থেকে যায়। শুধু নাদিয়া নয়, এরকম অসুস্থ হয়ে পড়েছে বহু মানুষ।
এদিকে ফৌজদারহাট, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে দেখা যায়, বেডে অসংখ্য রোগী ভর্তি। সবাই তিন থেকে ৬ দিন পর্যন্ত জ্বরে আক্রান্ত। তারা ওষুধ কিনে খেলেও জ্বর ও শরীরের ব্যথা-বেদনা সহজে ছাড়ছে না। এর মধ্যে পরীক্ষায় কারো কারো ডেঙ্গু পজিটিভ হলেও বাকিরা লক্ষণ দেখে অনুমাননির্ভর ওষুধ খাচ্ছেন চিকনগুনিয়া কিংবা ভাইরাস জ্বর ভেবে। রোগীরা জানিয়েছেন জ্বর যখন আসে তখন তা ১০৬ ডিগ্রিতে গিয়ে পৌঁছায়। তার সঙ্গে শরীরে অবর্ণনীয় ব্যথা-বেদনা। অনেকে জানাচ্ছেন, ওষুধ সত্ত্বেও জ্বর ও ব্যথা সহজে ছাড়ছে না। ডেঙ্গু পরীক্ষায় নেগেটিভ এলেও তাদের উপসর্গ চিকুনগুনিয়ার মতো।
চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, কোভিড এবং নরমাল জ্বর। এবার এমন কিছু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে যাদের জ্বর আছে। পাশাপাশি বিভিন্ন জয়েন্টে মাত্রাতিরিক্ত ব্যথায় ফুলে গেছে। জ্বর কমলেও তাদের ফোলা এবং ব্যথা কমানো যাচ্ছে না। এ ধরনের রোগীকে তারা চিকুনগুনিয়া হিসেবে ধরে চিকিৎসা দিচ্ছেন। ডেঙ্গু নেগেটিভ হলেও চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ থাকা রোগীদের সাসপেক্টেড চিকুনগুনিয়া রোগী হিসেবে ধরে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সীতাকু- উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলতাফ হোসেন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে জানান, সারা দেশের মতো এ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে জ্বর আক্রান্ত হয়েছেন এমন কিছু রোগী তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। একই পরিবার এরা একাধিক সদস্য একযোগে জ্বরে ভুগছে। এর সম্ভাব্য কারণ ফ্লু, ইনফ্লুয়েঞ্জা কোভিড-১৯, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া ইত্যাদি। এর মধ্যে চিকুনগুনিয়া বেশি মনে হচ্ছে উপসর্গ অনুযায়ী। কিন্তু এটা পরীক্ষার ব্যবস্থা নাই। ভালো পরীক্ষা খরচ বেশি। আর ডেঙ্গু বিভিন্ন এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
উপজেলায় প্রতিদিন গড়ে এখন ৭-৮ জন করে ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে। আমরা হাসপাতালে আগত রোগীদের বিশ্রামের সময় দিনে-রাতে মশারি ব্যবহার করতে ও বসত ঘরের আশপাশ পরিষ্কার রাখা এবং কোথাও জমানো পানি যাতে না থাকে সেই বিষয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ ও লিফলেট বিলি করেছি হাসপাতালে। মশা নিধনের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় সরকার বিভাগ (পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ) পৌরসভা একবার মশক নিধনের স্প্রে করতে আসছে দেখেছি।
ধারণা করছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে মৌসুমি জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্তের সংখ্যা সীতাকু-ের ঘরে ঘরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন স্থানীয় পল্লি চিকিৎসকের পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিড় করছেন আক্রান্ত রোগীরা। তবে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর অধিকাংশই জ্বর, সর্দি, কাশি ও শরীর ব্যথায় আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া শহরের পাশাপাশি জ্বরের প্রকোপ গ্রামেও। অনেকের তীব্র জ্বর, শরীর ব্যথা, দুর্বলতা। এ পরিস্থিতিতে মশা নিধন ও চারপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :