ঢাকা বুধবার, ০৬ আগস্ট, ২০২৫

সুইসগেট নির্মাণে কচ্ছপগতি

মো. জসিম উদ্দিন, বেতাগী
প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২৫, ১০:৪৯ এএম
  • অনাবাদি ৩ গ্রামের ৪০০ একর জমি
  • ৩ কোটি টাকার ফসলহানির আশঙ্কা

বরগুনার বেতাগীতে একটি সুইসগেট নির্মাণে ধীরগতি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে তিনটি গ্রামের প্রায় ৪০০ একর জমি অনাবাদি পড়ে আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১১ কোটি টাকার প্রকল্পের এ অচলাবস্থায় গত আউশ মৌসুমে ধান লাগাতে পারেননি কৃষকরা। চলতি আমন মৌসুম নিয়েও তৈরি হয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তা। সময়মতো পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধ জমিতে শুধু হতাশার আগাছা বাড়ছে, আর কৃষকদের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। দুই মৌসুমে ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।


জানা যায়, পাউবোর প্রকল্পে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার কেওড়াবুনিয়া, বেতাগী ও গাবুয়া গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া তিনটি শাখা খালে সøুইসগেট ও আউটলেট নির্মাণের কাজ পায় চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স’। প্রায় ৯ মাস আগে গাবুয়া খালে বাঁধ দিয়ে কাজ শুরু হলেও আজও তার সিংহভাগই অসম্পূর্ণ। ফলে ওই এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে।
ভুক্তভোগী কৃষক মোশারেফ হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, ‘এ সময়ে মাঠজুড়ে ধানের সবুজ পাতা বাতাসে খেলা করার কথা ছিল। অথচ এখন সেখানে থই থই করছে পানি, জন্মেছে আগাছার জঙ্গল। আমাদের সব স্বপ্ন পানিতে ভেসে গেছে।’


আরেক কৃষক আবদুল কাদের মোল্লা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ঠিকাদারের গাফিলতির খেসারত দিচ্ছি আমরা সাধারণ কৃষক। দ্রুত সুইসগেট নির্মাণে দিনের পর দিন ঘুরেও কোনো লাভ হচ্ছে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল পাইনি।’


কৃষকেরা জানান, জলাবদ্ধতার কারণে শুধু ফসলই নষ্ট হচ্ছে না, এলাকায় মশাবাহিত রোগের প্রকোপও মারাত্মকভাবে বেড়েছে। এর পাশাপাশি গবাদিপশুর খাদ্য সংকট, যাতায়াতে ভোগান্তি এবং স্থানীয় ট্রাক্টরচালকদের বেকারত্ব তাদের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে।


স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও কৃষকদের তথ্য অনুযায়ী, শুধু আউশ মৌসুমেই প্রায় ৫০০ টন ধান উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন কৃষকরা, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। যদি দ্রুত সুইসগেট নির্মাণ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করা হয়, তবে চলতি আমন মৌসুমও হাতছাড়া হবে। সে ক্ষেত্রে দুই মৌসুমে মোট ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি টাকার বেশি হতে পারে, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে বড় ধরনের ধাক্কা দেবে।


এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমদ বলেন, ‘দ্রুত সুইসগেট নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ার ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা অবগত। বিষয়টি লিখিত ও মৌখিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত এর সমাধান হবে।’


ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল শিকদার বলেন, ‘কাজে গাফিলতির প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঠিকাদার আমাকে দ্রুত কাজ শেষ করার আশ্বাস দিয়েছেন।’
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি রাজু আহমেদ বিলম্বের জন্য ভিন্ন কারণ দেখান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে টেস্ট রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়া এবং বর্ষা মৌসুমের কারণে কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। আমরা দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।’